(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী এবং নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
জোট তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই জোটে কেউই ঠিক মতো কাজ করছে না। তাই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গ তিনি ছেড়ে দিলেন। কারণ, তাঁর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে খোঁচা দিতেও ছাড়লেন না জনতা দলের (ইউনাইটেড) প্রধান নীতীশ কুমার।
লোকসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এমনিতে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের একটা টানাপড়েন চলছে। তার মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের আগে নীতীশের এই ইস্তফায় ‘ইন্ডিয়া’ বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জোট ছেড়ে নীতীশের বেরিয়ে যাওয়ায় ‘ইন্ডিয়া’র ক্ষতি তো হবেই না, বরং লাভ হবে। তাঁর এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াতে বিহারে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট ভাল ফলই করবে।
নীতীশ যে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন, তা আগেই আভাস পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর ‘মানভঞ্জনের’ শেষ চেষ্টাও করা হয়েছিল কংগ্রেসের তরফে। সূত্রের খবর, নীতীশকে বেশ কয়েক বার ফোনও করেন খড়্গে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। রবিবার নীতীশ ইস্তফা দিতেই খড়্গে বলেন, “বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এবং লালু প্রসাদ যাদব আমাকে আগেই এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। আজ তা সত্যি হল। তবে দেশে এমন অনেক লোক আছেন যাঁরা আয়া রাম, গয়া রাম গোত্রের মধ্যে পড়েন।”
হাবেভাবে তিনি বুঝিয়েও দিতে চেয়েছেন যে, নীতীশের জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়াটা খুব একটা চাপ হবে না ‘ইন্ডিয়া’র। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, কংগ্রেস যতই স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করছে, নীতীশ কিন্তু একটা ‘অস্বস্তির’ কাঁটা রেখেই গেলেন। ঘটনাচক্রে, নীতীশ এনডিএতে ‘কামব্যাক’ করায়, কংগ্রেসের হাতছাড়া হল আরও একটি রাজ্য।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, “নীতীশ কুমার যে ভাবে দলবদলের খেলা শুরু করেছেন, যে ভাবে রং বদলাচ্ছেন, তাতে গিরগিটিকেও কড়া টক্করের মধ্যে পড়তে হবে। এই বিশ্বাসঘাতককে বিহারের জনতা মাফ করবে না। এই ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, কংগ্রেসের ‘ন্যায় যাত্রা’য় ভয় পেয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
নীতীশ কুমারকে গিরগিটি রত্ন দেওয়ার দাবি লালুপ্রসাদ যাদবের জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপের। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, “যে গতিতে রং বদলাচ্ছেন নীতীশ কুমার, ওঁকে ‘গিরগিটি রত্ন’ দেওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের এক বছর আগে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতাসীন আঞ্চলিক দলগুলিকে জোটবদ্ধ করার উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিলেন নীতীশই। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাতেও এসে তিনি দেখা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে। বস্তুত তাঁর চেষ্টাতেই গত বছর জুন মাসে বিহারের পটনায় প্রথম বৈঠক হয় বিরোধী জোটের। সেই বৈঠকের আহ্বায়ক ছিলেন নীতীশই। তখনও বিরোধী জোটের নামকরণ হয়নি ‘ইন্ডিয়া’।
তৃণমূল-সহ ১৬টি বিরোধী দল সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। পরে জোটের শরিক দলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে পৌঁছয় ২৮-এ।
কংগ্রেসের তরফে নীতীশকে জোটের আহ্বায়ক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন জেডি (ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি নীতীশ। পাল্টা প্রস্তাবে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেসের কারও এই পদ নেওয়া উচিত। কংগ্রেসের কোনও নেতাকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হোক।’’ এর পরেই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে জোটের চেয়ারপার্সন হিসাবে মনোনীত করা হয়। তবে আহ্বায়ক পদ প্রত্যাখ্যান করার ঘটনায় জাতীয় রাজনীতির কারবারিরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে নীতীশের বেরিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। অবশেষে সেটিই প্রমাণিত হল। রাজনীতির ময়দানে যে স্থায়ী বলে কিছু হয় না, সেটা আবার প্রমাণ করে দিলেন বিহারের ‘সুশাসন বাবু’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy