শরদ অরবিন্দ বোবডে, বৃন্দা কারাট। —ফাইল চিত্র
মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবেন? গতকাল ধর্ষণের একটি মামলায় জামিনের আবেদনের শুনানির সময়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডের এই মন্তব্য ফিরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে আজ তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট।
মহারাষ্ট্র রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার মোহিত সুভাষ চহ্বাণের বিরুদ্ধে পকসো আইনে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন এক তরুণী। তখন তিনি নাবালিকা ছিলেন। মোহিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে মেয়েটির হাত-পা বেঁধে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। শুধু তা-ই নয়, মুখ খুললে তার চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া, পুড়িয়ে মারা, বাবা ও ভাইকে খুন করা, এমন বেশ কিছু হুমকিও দিয়েছিল সে। দায়রা আদালত চহ্বাণকে জামিন দিলেও অভিযোগকারিণীর আপিলের পরে বম্বে হাইকোর্ট অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। তখন সেই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যান অভিযুক্তের আইনজীবী। আপিলে তিনি জানান, তাঁর মক্কেল এক জন সরকারি কর্মী। জেলে গেলেই তাঁকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হবে। তাই তাঁকে জামিন দেওযা হোক। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই কাল প্রধান বিচারপতি অভিযুক্তকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবেন?’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘আদালত আপনাকে জোর করে বিয়ে করায় বাধ্য করছেন, পরে আবার এ রকম বলবেন না যেন!’’ অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল বিবাহিত। ফলে ফের বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। পুরো কথোপকথনে মেয়েটি কী চান, তা এক বারও জিজ্ঞাসা করেননি প্রধান বিচারপতি। অভিযুক্তকে চার সপ্তাহের জন্য রেহাই দিয়েছেন বিচারপতি বোবডে। যার পরে আবার তার জামিনের শুনানি হবে।
আজ বৃন্দা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘এক জন বিচারপতি, বিশেষ করে দেশের প্রধান বিচারপতি, কী মন্তব্য করছেন, তা ভবিষ্যতে কোনও নাবালিকাকে ধর্ষণ মামলার রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তাই আপনার এই সব মন্তব্য আর প্রশ্ন ফিরিয়ে নিন। বম্বে হাইকোর্ট জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার সময়ে স্পষ্ট বলেছিল, নিম্ন আদালতের রায় ‘অত্যন্ত আপত্তিজনক’। আপনি বম্বে হাইকোর্টের রায় পুনর্বহাল করুন।’’
বৃন্দা আরও লিখেছেন, ‘‘মেয়েটির মুখে কাপড় গুঁজে, হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করত ওই অপরাধী। এক বার নয়, ১০-১২ বার। মেয়েটির তখন মাত্র ১৬ বছর বয়স। এর পরে মেয়েটি আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিল। আপনার (বিচারপতি বোবডের) কী মনে হয়, মেয়েটির পুরো ঘটনায় সায় ছিল?’’ এই ধরনের মন্তব্যে এক নিগৃহীতার মনের কী অবস্থা হতে পারে, তাও প্রধান বিচারপতিকে ভেবে দেখতে বলেন বৃন্দা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি তা হলে এই বার্তা দিচ্ছেন যে, এক জন ধর্ষক নিগৃহীতাকে বিয়ে করে নিলেই তাকে আর জেলে যেতে হবে না? মেয়েটি কী চায়, না-চায়, তা আপনার কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়?’’
কাল শীর্ষ আদালতে আর একটি ধর্ষণের মামলার শুনানিতেও প্রধান বিচারপতি একই ধরনের মন্তব্য করেন। বিনয়প্রতাপ সিংহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা। মহিলার দাবি, যৌন সম্পর্কের সময়ে অত্যন্ত হিংস্র আচরণ করত বিনয়প্রতাপ। গোপনাঙ্গে ক্ষত নিয়ে তাঁকে এক বার হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয়েছিল। আদালতে মহিলার আইনজীবী জানান, অভিযোগকারিণী ও বিনয় মানালির হিড়িম্বা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রীর মতোই বসবাস করত। তাদের সম্পর্ক ভেঙে গেলে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন মহিলা। গৌতম বুদ্ধ থানায় দায়ের হওয়া সেই এফআইআর বহাল রাখে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। যা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান বিনয়ের আইনজীবী। কাল সেই মামলার শুনানির সময়ে বোবডের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অভিযোগকারিণীর আইনজীবীকে প্রশ্ন করে, ‘‘এক জন পুরুষ ও এক মহিলা যখন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করছেন তখন পুরুষটি যতই হিংস্র আচরণ করুন না কেন, তাই বলে কি তাঁর সঙ্গে মহিলার শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা যাবে?’’ এই অভিযুক্তকেও আট সপ্তাহের জন্য রেহাই দেন বোবডে।
দু’টি পৃথক মামলায় প্রধান বিচারপতির করা এই মন্তব্য নিয়ে আজ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় নিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন যে মানবাধিকার, শিশু ও নারী অধিকার কর্মীরা, বোবডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy