কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গান্ধীকে ভয় পেয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল বিজেপি। সোমবার সেই ষড়যন্ত্রই ফাঁস হয়ে গেল রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পর। এমনটাই দাবি করছে কংগ্রেস। রাহুলের পদ ফেরানোর সিদ্ধান্তের পর হাত শিবিরের একাধিক শীর্ষ নেতা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে এনেছেন।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌত রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘গোটা দেশের কাছে আজ একটা বার্তা গেল। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ দেখে বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বিজেপি নেতারাই ভয় পেয়ে এই ষড়যন্ত্র করেছিলেন। সেটা এখন ফাঁস হয়ে গিয়েছে।’’ এখানেই শেষ নয়। গহলৌতের দাবি, এই মুহূর্তে মোদীকে প্রতিযোগিতার মুখে ফেলার জন্য একমাত্র রাহুলই যোগ্য। তিনিই মোদীর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী।
রাহুল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিজেপির ষড়যন্ত্রের কথা টেনে এনেছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলও। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘‘এটি ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার জয়, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের জয়, অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের জয়, স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জয় এবং সর্বোপরি, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র জয়। রাহুলজির মাধ্যমে ভারতের কণ্ঠস্বর আবার সংসদে ধ্বনিত হবে।’’
সাংবাদিকদের সামনে বঘেল বলেন, ‘‘রাহুলকে আটকানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের স্থগিতাদেশের পর সোমবার স্পিকার ওঁর পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন। সত্যের জয় হয়েছে। লোকসভায় সারা দেশ ওঁর কথা শুনতে চেয়েছিল। এটা আমাদের বড় সাফল্য।’’ রাহুল এত দিন ধরে যা প্রশ্ন তুলেছেন, বিজেপিকে এ বার তার জবাব দিতে হবে বলেও জানান বঘেল।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত। এই সিদ্ধান্ত দেশের মানুষকে, বিশেষত ওয়েনাড়ের মানুষকে স্বস্তি দেবে।’’
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু বলেছেন, ‘‘এটি মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের জয়। শেষমেশ সত্যই জেতে। রাহুলের সাংসদ পদ ফেরানো তারই প্রমাণ।’’
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম জানিয়েছেন, স্পিকারের সিদ্ধান্তে তিনি খুশি। সোমবার তো বটেই, রাহুল যে সারা সপ্তাহ জুড়েই লোকসভার অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন, এটা ভেবে তাঁর ভাল লাগছে। কে সি বেণুগোপালের কথায়, ‘‘শীর্ষ আদালত আগেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম, আজ স্পিকার সেই আনুষ্ঠানিকতাই পূরণ করলেন।’’
প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় লোকসভার সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল। মোদী পদবি অবমাননা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি তাঁর শাস্তি স্থগিত করেছিল। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাহুলকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। সোমবার সকালে এই ঘোষণার পর কংগ্রেস শিবিরে খুশির জোয়ার। সারা দেশেই তাদের উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ ভেঙেছে। কোথাও ঢাক-ঢোল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। কোথাও আবার হাসিমুখে চলছে একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ানোর পালা। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারাও রাহুলকে সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরের পুত্র আদিত্য ঠাকরে টুইটে লেখেন, ‘‘রাহুলকে লোকসভায় ফেরানো হয়েছে। যাঁরা আমাদের দেশের জন্য, সত্যের জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের চুপ করিয়ে দিতে কী কী করা হচ্ছে, গোটা বিশ্ব তা দেখছে। এ ভাবে আসলে দেশকেই অপমান করা হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’’
সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব রাহুলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও বেড়ে গেল।’’ ওই দলের আর এক নেত্রী ডিম্পল যাদব বলেছেন, ‘‘রাহুলজিকে অভিনন্দন। স্পিকারকেও ধন্যবাদ, কারণ উনি এই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি।’’
শরদ পওয়ারের কন্যা তথা এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলেও টুইটে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘সত্যমেব জয়তে। রাহুলজিকে সংসদে স্বাগত জানাচ্ছি।’’
লোকসভার আর এক সদস্য তথা জম্মু ও কাশ্মীরের বর্ষীয়ান নেতা ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘‘রাহুল আবার লোকসভায় ফিরলেন, এটা খুব ভাল হল। আমার বিশ্বাস, তিনি দেশকে আরও মজবুত করার চেষ্টা করবেন। দেশের সমস্যাগুলি দূর করার চেষ্টা করবেন।’’
বিজেপি অবশ্য রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়াকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। বিজেপি নেতা সুশীল মোদী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিন্তু এখনও আছে। শাস্তি স্থগিত হয়েছে মাত্র। আদালতে এখন ওঁর আবেদনের শুনানি বাকি। সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ায় কিছু যায় আসে না।’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র বলেন, ‘‘স্পিকার নিয়ম অনুযায়ী, রাহুলের সদস্যপদ খারিজ করেছিলেন। এখনও উনি শাস্তিমুক্ত নন। ওঁর শাস্তিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। স্পিকার উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে ওঁকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারও শাস্তি কিছু দিনের জন্য স্থগিত হওয়া মানে তিনি নির্দোষ নন।’’
বাংলার বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘রাহুলের শাস্তিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এত আনন্দ করার কিছু নেই।’’ সেই সঙ্গে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া জোটকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে সবাই সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন, আমি অপেক্ষায় আছি, কখন নবান্নে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী অধীরের মুখে ফিশ ফ্রাই তুলে দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy