সংসদ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
৭০ বছর আগে সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময়ে তাতে মৌলিক কর্তব্যের কথা ছিল না। জরুরি অবস্থার সময়ে সংবিধান সংশোধন করে তা অন্তর্ভুক্ত করিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। আজ সংবিধান গ্রহণের ৭০-তম বর্ষপূর্তিতে ইন্দিরার সেই মৌলিক কর্তব্যের উপরে গুরুত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সেন্ট্রাল হলে সংসদের যৌথ অধিবেশনে আজ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘নিজেদের দায়িত্ব পালন না করলে আমার অধিকার সুরক্ষিত করতে পারব না। সংবিধানে লিখিত মৌলিক কর্তব্য আমরা কী ভাবে পালন করতে পারি, তা নিয়ে ভাবতে হবে।’’
সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠান আজ কংগ্রেস-সহ বেশির ভাগ বিরোধী দলই বয়কট করেছে। সেই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের বদলে ইন্দিরা গাঁধীর চালু করা মৌলিক কর্তব্যের উপরে জোর দিয়েছেন, তাতে রাজনীতিকদের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ, ১৯৭৬-এ জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনীতে দশটি মৌলিক কর্তব্য যোগ করার পিছনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী এইচ আর গোখলে যুক্তি দিয়েছিলেন, জরুরি অবস্থা জারির বিরুদ্ধে বেআইনি বিক্ষোভ থেকে স্পষ্ট, মানুষ নিজের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেননি। এই অস্থির মানসিকতা ধামাচাপা দিয়ে সংযম আনতে এই সব মৌলিক কর্তব্য জরুরি। এখন ২০১৯-এ জরুরি অবস্থার সময়ে অন্তর্ভুক্ত মৌলিক কর্তব্যে গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মতো বিভিন্ন প্রকল্পে নাগরিকদের দায়িত্বের উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর সঙ্গে জরুরি অবস্থার সম্পর্ক নেই।
দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসার পরেও মোদী বলেছিলেন, মৌলিক অধিকারের বদলে মৌলিক কর্তব্যে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, মোদী সরকার কি সাংবিধানিক অধিকার থেকেই নজর সরাতে চাইছে? আজ মোদী যখন সেন্ট্রাল হলে সংবিধানকে ‘পবিত্র’ আখ্যা দিচ্ছেন, সে সময় ভীমরাও রামজি অম্বেডকরের মূর্তির সামনে ধর্নারত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কটাক্ষ করেন, ‘‘প্রুফ অব দ্য পুডিং ইজ ইন দ্য ইটিং।’’ অর্থাৎ, বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলেন পরিচয়তে। মনমোহন বলেন, ‘‘কেন্দ্র মহারাষ্ট্রে যে আচরণ করেছে, তাতে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে সংবিধানের আদর্শ বর্তমান সরকারের হাতে সুরক্ষিত রয়েছে।’’
জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানে ১০টি মৌলিক কর্তব্য যোগ করা হয়। সেগুলির মধ্যে সংবিধান মেনে চলা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর মতো কর্তব্য রয়েছে। কিন্তু কেউ তা পালন না করলে শাস্তির কথা বলা নেই। এ জন্য তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী স্বর্ণ সিংহের নেতৃত্বে কমিটিও গঠন করেছিলেন ইন্দিরা। ২০০২-এ অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় আরও একটি মৌলিক কর্তব্য যোগ করা হয়। তা হল, সন্তানকে পড়াশোনা শেখানোয় অভিভাবকদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, ‘‘বাবাসাহেব অম্বেডকর বেঁচে থাকলে আজ সব থেকে সুখী হতেন।’’ কিন্তু অম্বেডকরের নেতৃত্বে সংবিধান পরিষদের তৈরি সংবিধানে মূলত সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের উপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। আর ইন্দিরা গাঁধী সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে দশটি মৌলিক কর্তব্য যোগ করায় অভিযোগ ওঠে, সাংবিধানিক অধিকারকে লঘু করা হচ্ছে। বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, নাগরিক হিসেবে কর্তব্য পালন করলেই মৌলিক অধিকার মিলবে। আজ অবশ্য গাঁধীজিকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘গাঁধীজি বলেছিলেন, কর্তব্য ঠিকমতো পালন করলেই অধিকার আশা করা যায়। অর্থাৎ, জাতির জনকের মতে, অধিকার ও কর্তব্য সরাসরি যুক্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy