জম্মু-কাশ্মীরের নবনির্বাচিত বিধায়ক কাইজ়ার জামশেদ লোন। ছবি: সংগৃহীত।
তিনি জঙ্গি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ধারণা বদলে দিয়েছিল একটি ঘটনাই। জঙ্গি হতে চাওয়া সেই কিশোরের জীবনের মোড় কী ভাবে ঘুরে গেল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই কাহিনিই শোনালেন নবনির্বাচিত বিধায়ক কাইজ়ার জামশেদ লোন। তিনি এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর প্রার্থী হয়েছিলেন। লোলাব থেকে ভোটেও জিতেছেন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সেই কিশোরের কাহিনিই শোনালেন লোন।
সেই কিশোর আর কেউ নন, বিধায়ক নিজেই। লেফ্টেন্যান্ট গভর্নরকে ধন্যবাদজ্ঞাপন সম্ভাষণ চলছিল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায়। সেই সময়েই বিধায়ক লোন বিধানসভায় তুলে ধরেন নিজের জীবনের কাহিনি। তিনি তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। এক দিন তাঁদের এলাকায় আচমকাই সেনা অভিযান শুরু হয়। গোপন সূত্রে সেনা খবর পেয়েছিল যে, লোলাব এলাকা থেকে বেশ কয়েক জন যুবক জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন। তাঁদেরই খোঁজে চিরুনিতল্লাশি শুরু করে সেনা।
বিধায়ক লোন জানান, সেই তল্লাশি অভিযানের সময় তাঁদের এলাকা থেকে সন্দেহের বশে ৩২ জনকে তুলে নিয়ে আসে সেনা। তাঁদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। তাঁদের একের পর এক জেরা চলতে থাকে। ওই যুবকরা পরস্পরকে চেনেন কি না, তাঁরা জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন কি না ইত্যাদি প্রশ্ন চলতে থাকে। সেই জেরা পর্বের সময় এক সেনা আধিকারিক লোনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে যুবক জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছেন, তাঁকে তিনি চেনেন কি না। ওই যুবক তাঁর পরিচিত, উত্তরে এ কথা জানাতেই শুরু হয় মার। লোনের কথায়, ‘‘আমাকে বেধড়ক মারা হয়। তার পর জিজ্ঞাসা করা তল্লাশি অভিযানের সময় ওই যুবক জঙ্গি এলাকায় ছিল কি না। কিন্তু আমি যখন বললাম জানি না, তখন আবার মারা শুরু হল।’’
এই ঘটনা যখন চলছিল, সেই সময় সেখানে হাজির হন সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক। লোন বলেন, ‘‘ওই সেনা আধিকারিক আমার কাছে আসেন। জিজ্ঞাসা করেন, বড় হয়ে কী হতে চাই। তখন তাঁকে সটান বলেছিলাম, জঙ্গি হতে চাই।’’ তিনি জানান, একটি ছোট ছেলের মুখে এ কথা শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলেন ওই সেনা আধিকারিক। কেন তিনি জঙ্গি হতে চান, এর কারণও জিজ্ঞাসা করেন ওই আধিকারিক। লোনের কথায়, ‘‘তখন তাঁকে আমি বলেছিলাম, সেনা খুব অত্যাচার করে। আমার উপরেও অত্যাচার হয়েছে। সেই অত্যাচার দেখেই জঙ্গি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
জঙ্গি হতে চাওয়ার ব্যাখ্যা শুনে ওই সেনা আধিকারিক তখন তাঁর সামনেই তাঁর অধস্তন কর্মীকে ধমক দেন। ঘটনাচক্রে, সেই অধস্তন কর্মীই মারধর করেছিলেন বলে দাবি লোনের। এক কিশোরকে সমর্থন করে, তার পাশে দাঁড়িয়ে অধস্তন কর্মীকে ধমক দেওয়ার বিষয়টি বেশ ভাল লেগেছিল তাঁর, এমনই জানিয়েছেন লোন। আর সেই একটি ঘটনাই তাঁর জঙ্গি হওয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে দিয়েছিল। আর সেখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
বিধায়ক লোন আরও জানান, যে ৩২ জনকে সেনা সে দিন তুলে নিয়ে গিয়েছিল, ঘটনাচক্রে সেই ৩২ জনের মধ্যে ২৭ জনই পরে জঙ্গিদলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy