হিংসার আঁচে ভস্মীভূত। ছবি: পিটিআই।
‘‘আমাদের কিচ্ছু চাই না! আমরা বাড়ি যেতে চাই।’’
ক্রিম রঙের মলিন সালোয়ার, গোলাপি ওড়না। করজোড়ে কাতর আর্জি জানাচ্ছেন মহিলা। কাঁদছেন। তার মধ্যেই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হিন্দিতে টানা বলে চলেছেন, ‘‘আমরা এখানে থাকব না। থাকব না এখানে। যত জলদি সম্ভব আমাদের গাড়ি জোগাড় করে দিন। আমাদের দিল্লি পর্যন্ত ছেড়ে দিন। আমরা গ্রামে চলে যাব।’’
মহিলার পাশে দাঁড়ানো যুবকেরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি। তাঁদের বলছেন, ‘‘আমরা হিন্দু-মুসলিম মিলে একসঙ্গে থাকি।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘আমরা মুসলিম বলে কি মানুষ নই? আমাদের ঘরে কি মা-বোন নেই?’’ ৩৬ সেকেন্ডের এমনই এক ভিডিয়োকে (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) ঘিরে বৃহস্পতিবার হইচই পড়েছে সমাজমাধ্যমে। নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছে, ভিডিয়োটি গুরুগ্রামে তোলা হয়েছে এবং ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। একটি সূত্রের দাবি, তাঁদের বাড়ি মালদহে। তাঁরা গুরুগ্রামে কাজের জন্য গিয়েছেন। তবে রাত পর্যন্ত ভিডিয়োয় দেখা মেলা মহিলা ও যুবকদের পরিচয় সম্পর্কে মুখ খোলেনি মালদহ জেলা পুলিশ-প্রশাসন। সূত্রের দাবি, প্রশাসনের কাছে এখনও এই সংক্রান্ত কোনও নির্দিষ্ট খবর নেই।
যদিও তৃণমূলের সদ্য সাংসদ সামিরুল ইসলাম টুইট করে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ উদ্বিগ্ন। হরিয়ানা বা অন্যত্র কোনও পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যায় পড়লে এই পর্ষদে জানাতে বলেছেন সামিরুল। সঙ্গে ফোন নম্বরও দিয়েছেন।
সূত্রের দাবি, হরিয়ানার নুহ-এ যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, তার আঁচ এসে লেগেছে দিল্লির নিকটবর্তী গুরুগ্রামেও। এই অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। সংবাদ সংস্থার খবর, এলাকায় অটোরিকশা চালান রহমত আলি। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। থাকেন ৭০এ-র একটি বস্তিতে। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে মোটরবাইকে করে কয়েক জন এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে, যদি দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে না যান রহমতেরা, তা হলে ওই ঝুপড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে। একই ভাবে, পশ্চিমবঙ্গের আর এক বাসিন্দা বামিশা খাতুনও জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা নিজেদের রাজ্যে ফেরারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সমাজমাধ্যমে যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানেও দেখা যাচ্ছে, কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিক হাত জোড় করে জানাচ্ছেন, তাঁরা দিল্লি হয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে চান। সেখানে ওই শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, বজরং দলের কয়েক জন এসে তাঁদের হুমকি দিয়ে গিয়েছে। যদিও এই দাবির সত্যতা যাচাই করা এখনও
সম্ভব হয়নি।
কিন্তু রাজ্য কি এই পরিযায়ীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল? সম্প্রতি এই নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিযায়ী সম্পর্কে তথ্য জোগাড়ের পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। ভিডিয়োর শ্রমিকেরা মালদহের কি না, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন ওঠার পরেও জেলা প্রশাসন আদৌ বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তাদের একটি অংশের দাবি,
ভিডিয়োয় কারও মুখে ‘মালদহ’ শব্দটি শোনা যায়নি। মালদহ জেলা প্রশাসনের কোনও কর্তা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তবে মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “ভিডিয়োটি খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।”
ধর্মীয় শোভাযাত্রায় পাথর ছোড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ বাধে হরিয়ানার নুহ (মেওয়াত) জেলায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ব্রিজ মণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা’ চলাকালীন খেডলা মোড় এলাকায় পুণ্যার্থীদের মিছিলে ইট-পাথর ছোড়া হলে, অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহার করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে ছ’জনের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ঘটনার জেরে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকান, যানবাহনে আগুনও লাগানো হয়। সংবাদ সংস্থার দাবি, ঘটনার পরে, বহু পরিযায়ী শ্রমিক নিজেদের রাজ্যে ফিরতে চাইছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy