Advertisement
E-Paper

‘ওকে মেরে বেশ করেছে’, ফুঁসছেন বাবা

ছেলের মৃত্যুর খবর জেনে সে রকম ভাবান্তর দেখা যায়নি বাবার।

বিকাশ দুবে

বিকাশ দুবে

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:০৩
Share
Save

ছেলেকে ‘এনকাউন্টারে’ খতম করে পুলিশ ঠিক কাজই করেছে!

একটা সাদামাটা ঘরে তোষকের উপরে শুয়ে থাকা বৃদ্ধের গলা থেকে বেরিয়ে আসা শব্দগুলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে দিয়েছিল সেখানে উপস্থিত লোকেদের। কয়েক ঘণ্টা আগেই রাজ্য কাঁপানো ছেলের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’। সেই ‘এনকাউন্টার’-এর সত্যতা নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনার মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বৃদ্ধ, অশক্ত রামকুমার।

এ দিন ছেলের মৃত্যুর খবর জেনে সে রকম ভাবান্তর দেখা যায়নি বাবার। রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে বিছানায় শুয়ে শুয়েই তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কানপুরে ৮ পুলিশকে মেরে ছেলে অত্যন্ত অন্যায় করেছিল। সেই অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। তার পরেই গ্যাংস্টার ছেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে রামকুমার বলেন, ‘‘ও যদি আমাদের কথা শুনত, তা হলে ওর জীবনটা এ ভাবে শেষ হত না। বিকাশ কোনও দিন, কোনও ভাবে আমাদের সাহায্য করেনি। বরং ওর জন্য আমাদের পৈত্রিক বাড়িটাও মাটিতে মিশে গিয়েছে। প্রশাসন ঠিক করেছে। তারা এটা না করলে আগামী দিনে আবার কেউ বিকাশের মতোই হয়ে উঠত।’’

আরও পড়ুন: বিকাশের মৃত্যুর পরে তার উত্থানের তদন্ত!

প্রশাসনের কাছে একটাই আর্জি আছে রামকুমারের। বিকরু গ্রামে, যেখানে বিকাশের সাতমহলা প্রাসাদ কয়েক দিন আগেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ, সেই পৈতৃক ভিটেয় ফিরতে চান তিনি। এ নিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব হল প্রত্যেকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। পুলিশ সেটাই করে থাকে। বিকাশ পুলিশের উপরে হামলা করেছে। এটাকে ক্ষমা করা যায় না। আমি ওর শেষকৃত্যেও যাব না। আমার একটাই আবেদন, পৈতৃক ভিটেয় ফেরার অনুমতি দেওয়া হোক আমাকে।”

বৃদ্ধ রামকুমার না-গেলেও পুলিশের কড়া নজরদারিতে শুক্রবার রাতেই কানপুরের ভৈরোঁঘাটে বিকাশের শেষকৃত্য হয়। এবং সেখানে বৃদ্ধ রামকুমারের গলার সুরই যেন শোনা গেল বিকাশের স্ত্রী রিচার গলায়। এ দিন শ্মশানে কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে আনা হয়েছিল রিচা এবং বিকাশের ছোট ছেলেকে। বিকাশের একাধিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’দিন আগেই রিচাকে হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। সঙ্গে ছোট ছেলেকেও। শুক্রবার রাতে শেষকৃত্যে দাঁড়িয়ে সব ক্ষোভ যেন একসঙ্গে উগরে দিলেন রিচা। স্বামীর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। বিকাশ অন্যায় করেছিল, ওর এটাই হওয়ার ছিল।’’ বৈদ্যুতিক চুল্লির পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেই উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের দিকে রীতিমতো তেড়ে যান তিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিস্তর কটূ কথা বলার পাশাপাশি তাঁদের ওখান থেকে সরে যেতেও বলেন নিহত গ্যাংস্টারের স্ত্রী। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকাশের মুখাগ্নি করেন তাঁর শ্যালক দিনেশ তিওয়ারি।

পুলিশ-প্রশাসন এখন ব্যস্ত বিকাশের সঙ্গীদের ধরতে। পাশাপাশি, তাকে বিভিন্ন সময়ে যারা সাহায্য করেছিল, তাদেরও আটক করছে পুলিশ। শনিবারই মহারাষ্ট্রের ঠাণে থেকে মুম্বই এটিএসের হাতে ধরা পড়েছে বিকাশের সঙ্গী অরবিন্দ ওরফে গুড্ডন ত্রিবেদী এবং তার গাড়ির চালক সোনু তিওয়ারি। ৮ পুলিশ খুনে অভিযুক্তদের তালিকায় গুড্ডনের নাম রয়েছে। ২০০১ সালে বিজেপি নেতা সন্তোষ শুক্ল খুনে বিকাশের সঙ্গী হিসেবেও তার নাম রয়েছে। এর আগে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে ধরা হয়েছে ওমপ্রকাশ পাণ্ডে এবং অনিল পাণ্ডে নামে দুজনকে। এঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিকাশ-সঙ্গীদের আশ্রয় দেওয়ার। বিকাশের বিপুল সম্পত্তির হদিশ পেতে সক্রিয় হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বিকাশের পরিবারের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা সরানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। ইডি-র অভিযোগ, বিকাশের নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। বহু সম্পত্তি আত্মীয়দের নামেও রাখা ছিল। এখন সে সবই খতিয়ে দেখা হবে।

বিকাশের অপরাধ-অর্থ নিয়ে তদন্তের মধ্যেই জানা গিয়েছে তার ধরা দেওয়ার আগের কয়েক ঘণ্টার বিবরণ। একটি সূত্রের দাবি, সে দিন উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে পুজো দেওয়ার আগে শিপ্রা নদীতে স্নান করেছিল কানপুরের গ্যাংস্টার। তার পর ভিআইপি পাস কিনে মন্দিরে আরতি দেখতে যায় সে। সেখানে পিছনের দরজা দিয়ে মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করলেও নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। তখন অন্য দর্শনার্থীদের সঙ্গেই লাইনে দাঁড়িয়ে মন্দিরে ঢোকে বিকাশ। মন্দিরে ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা মানা হলেও প্রভাতী আরতির সময়ে তার দুই সঙ্গীকে আরতির ছবি তুলতে দেখা যায। উপস্থিত একাধিক দর্শনার্থীর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, আরতির পরে বাইরে এসে মোবাইল ক্যামেরায় নিজস্বীও তোলে বিকাশ। তার পরে উপস্থিত রক্ষীদের কাছে বলে ‘‘ম্যায় হুঁ বিকাশ, কানপুরওয়ালা।’’ এমনকি তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক জনকে নিজের ফোন নম্বরও দিয়েছিল গ্যাংস্টার। এ ক্ষেত্রে অবশ্য মন্দির চত্বরের ফুলওয়ালা বিকাশকে চিনে ফেলে রক্ষীদের সতর্ক করেছিলেন— এই পুরনো বয়ান মিলছে না।

তবে ঘটনাপ্রবাহ দেখে ধরে নেওয়া যায়, বিকাশের আশা ছিল, এ বারেও সে বেঁচে যাবে। অন্যান্য বারের মতোই। বিকাশের মৃত্যুর পরে এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ-কর্তার মন্তব্য, ‘এনকাউন্টার’ এড়াতেই ‘সারেন্ডার’ করেছিল বিকাশ। কিন্তু শেষরক্ষা আর পেল না!

Crime Crime Cases Vikas Dubey Police Encounter Kanpur Uttar Pradesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।