Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কারাট-ইয়েচুরির সাঁড়াশি তোপে চাপে বিজয়ন

কেরল পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘থান্ডারবোল্ট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষে চার মাওবাদীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিতর্কের সূত্রপাত।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

দলের মধ্যে বিতর্ক এবং সমালোচনা ছিলই। এ বার পলিটব্যুরোয় বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন তুললেন কেরলে বাম সরকারের বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগ নিয়ে। এবং সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই প্রথম বার সিপিএমের পলিটব্যুরোয় তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাউকে পেলেন না কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন!

কেরল পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘থান্ডারবোল্ট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষে চার মাওবাদীর মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই দক্ষিণী ওই রাজ্যে বিতর্কের সূত্রপাত। এর পরে কোঝিকোড়ে সিপিএমেরই সমর্থক দুই ছাত্রকে মাওবাদীদের পক্ষে প্রচার করার অভিযোগে গ্রেফতার করে ইউএপিএ ধারা দেয় পুলিশ। অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদে সংশোধনী এনে ওই আইনকে এখন যে চেহারা দিয়েছে, তাকে আগেই ‘কালা কানুন’ আখ্যা দিয়েছিল সিপিএম। তার পরেও বাম শাসিত একটা রাজ্য সরকার কেন সামান্য অভিযোগে ইউএপিএ কাজে লাগাচ্ছে, সেই প্রশ্নে ঝড় উঠেছে রাজ্য বিধানসভায় ও শাসক শিবিরের অন্দরে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বিবৃতি দিয়ে রাজ্য সরকারকে সতর্ক হতে বলেছিল। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ইউএপিএ-প্রশ্নে দলের অবস্থান মেনে নিলেও কার্যক্ষেত্রে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। যার জেরে এ বার পলিটব্যুরোয় গিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়েছেন বিজয়ন।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও তাঁর পূর্বসূরিকে দলের শীর্ষ মহলের অন্দরে এক সুরে সওয়াল করতে বড় একটা শোনেন না দলীয় নেতারা! কিন্তু এ বার দিল্লিতে বিজয়নের অভিজ্ঞতা হয়েছে ব্যতিক্রমী। ইয়েচুরি ও কারাট, দু’জনেই ইতিমধ্যে ইউএপিএ নিয়ে ভেবেচিন্তে পা ফেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রীকে। তার পরেও কেন দুই ছাত্রের উপর থেকে ওই ‘কালা কানুন’ প্রত্যাহার করা হয়নি, পলিটব্যুরোর বৈঠকে সেই প্রশ্ন তোলেন কারাট। দলীয় সূত্রের খবর, একই সুরে সরব হন কেরলের আর এক নেতা এম এ বেবি। সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি তাঁদের সমর্থন করেই বলেন, কেরলের ইউএপিএ-কাণ্ডের জেরে বাম সরকার এবং সিপিএম দল সম্পর্কেই ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন চিকিৎসার জন্য বাইরে থাকায় পলিটব্যুরো বৈঠকে ছিলেন না। এমতাবস্থায় বিজয়নের পক্ষ সমর্থনে এগিয়ে আসেননি কেউই।

তোপের মুখে পড়ে বিজয়ন ব্যাখ্যা দেন, ধৃত দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে যথেষ্ট গুরুতর অভিযোগই আছে। তাঁরা আপাতত জেল হাজতে। তবে ইউএপিএ ধারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্তরে হয়নি। পুলিশ ওই পদক্ষেপ করেছে। ইউএপিএ সংক্রান্ত কমিটির কাছে বিষয়টি এলে সরকার নিশ্চয়ই তা দেখবে। কিন্তু তাতেও পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, এমন একটি আইনের ক্ষেত্রে পুলিশকে এতটা ছাড় কেন দিয়ে রাখবে বাম ও গণতান্ত্রিক সরকার? দলীয় সূত্রের বক্তব্য, বিজয়নের ব্যাখ্যায় পলিটব্যুরো আদৌ সন্তুষ্ট হয়নি।

পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘বিতর্ক যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে আগামী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও তার আঁচ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল!’’ ঘটনাচক্রে, কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠক আগামী ১৭-১৯ জানুয়ারি হওয়ার কথা বিজয়নেরই রাজ্যের তিরুঅনন্তপুরমে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy