Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

রামের নামে ভিডিয়ো হুমকি-গানের, ধৃত চার

ভিডিয়োর ফুটেজে কখনও গেরুয়া ফেট্টিধারী রামভক্তদের দল। কখনও বা সমাধি-ফলক খচিত কবরখানার ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

ছবির প্রেক্ষাপটে তির-ধনুকধারী ভগবান রামচন্দ্র। সামনে গাইছেন গেরুয়াধারী রুদ্রাক্ষমণ্ডিত শিল্পী।

ভিডিয়োর ফুটেজে কখনও গেরুয়া ফেট্টিধারী রামভক্তদের দল। কখনও বা সমাধি-ফলক খচিত কবরখানার ছবি। ভোজপুরী লব্জে শিল্পী গাইছেন, ‘জয় শ্রীরাম’ যিনি বলবেন না, তাঁকে কবরস্তানে পাঠিয়ে দাও! গোটা ‘হিন্দুস্তানে’ রামরাজ্য ফিরিয়ে আনতে সব রাম-বিরোধীকে কবর দেওয়ার ‘মহান’ বার্তাটিও ছড়াচ্ছেন।

‘জয় শ্রীরাম’-ধ্বনিতে ‘উস্কানিমূলক রণহুঙ্কারে’র বিপদ নিয়ে সরব বিশিষ্ট নাগরিকদের চিঠিটি তখনও পাঠানো হয়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। এর কিছু ক্ষণ আগেই ইউ টিউব ও টুইটারে আত্মপ্রকাশ করেছিল এমনই গানের ভিডিয়ো। যার ছত্রে ছত্রে রামের নামে কালি ছিটানো নিয়ে বিশিষ্টজনের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। লখনউ পুলিশ অবশ্য শুক্রবার গানটির শিল্পী, গীতিকার, চ্যানেলের প্রযোজককে গ্রেফতার করেছে। তবে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে তত ক্ষণে ভাইরাল সেই ভিডিয়ো।

শিল্পী বরুণ উপাধ্যায় ওরফে বরুণ বাহার এমনিতে গুণের আধার। তাঁর কণ্ঠে আর একটি গানে চটুল ভঙ্গিতে অন্য মেজাজ! বলা হচ্ছে, দেশের সব অবিবাহিত যুবক পাকিস্তানে গিয়ে সে-দেশের মেয়েদের ‘পটিয়ে’ নিয়ে আসবেন। নানা অপশব্দে ভরপুর লিরিকে, এই ‘নারী-হরণ’ কাশ্মীর কিস্‌সায় পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার কসরত বলেও বুক বাজানো হচ্ছে। ইউ টিউবের যে চ্যানেলে এই গানটি ছড়ানো হয়েছে, তার প্রযোজক গোড়ায় এমন গান প্রচার নিয়ে ভুল মানতেও চাননি। কার্যত রামের নাম না-নিলে প্রাণে মারার হুমকি-বিশিষ্ট গানটি দেশপ্রেমিকদের সৃষ্টি বলে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দু’দিন
বাদে চ্যানেলের তরফে টুইট করে তাঁরা ক্ষমা চান।

সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হিংসা বা ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে গানটির জন্য নির্দিষ্ট ধারায় পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়াটাই সঙ্গত।’’ দোষীদের গ্রেফতার না-করা হলে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে তারা ধর্নায় বসবেন বলে টুইট করেন দিল্লির উকিল তেহসিন পুনাওয়ালাও। কয়েকটি অভিযোগও দায়ের হয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। লখনউ পুলিশের মুখপাত্র আশিস দ্বিবেদী এ দিন বিকেলে ফোনে জানান, এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লখনউয়ে চ্যানেল প্রযোজক রাজেশ বর্মাকে ধরার পরে মনকাপুর গ্রাম থেকে শিল্পী বরুণ, গীতিকার সন্তোষ যাদব, মুকেশ পান্ডেকেও গ্রেফতার করা হয়। লখনউ পুলিশ টুইটারে গানটিকে ‘হেট সং’-বলে উল্লেখ করেছে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৫৩এ এবং ২৯৮ ধারায় মামলা করা হয়েছে। যার ফলে, লিখে বা বলে, দৃশ্যগ্রাহ্য মাধ্যমে ধর্ম বা জাতের নাম করে শত্রুতা তৈরি করার কারণে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হতে পারে।

রামের নামে হিংসা ছড়ানো নিয়ে বিশিষ্টদের চিঠিটি একপেশে বলে এখন তাঁদের অপদস্থ করার চেষ্টা চলছে নানা মহলে। আর এক দল গুণিজন এ বিষয়ে পাল্টা চিঠিও দিয়েছেন। আগের চিঠির স্বাক্ষরকারী ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার-তনিকা সরকারেরা এ দিন রামের নামে হুমকি গান প্রসঙ্গে ইমেল বার্তায় বলেন, ‘‘আগের চিঠির কথাগুলোই ফের বলতে হচ্ছে। রাম এখন হিন্দু চরমপন্থীদের কাছে ঘৃণা চরিতার্থ করে খুন করার অস্ত্র।’’

রাম নাম ব্যবহার করে মানুষে মানুষে ফাটল ধরানোর অজস্র নমুনা এখন দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Jai Shree Ram Intolerance BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy