দেশের রাষ্ট্রপতিকে কখনওই নির্দেশ দিতে পারে না আদালত। বিচারব্যবস্থার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে এমনটাই মন্তব্য করলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। সম্প্রতি একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যে কোনও বিল নিয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। কোনও বিল এই সময়সীমার পরেও ফেলে রাখতে হলে তার কারণ জানাতে হবে। রাষ্ট্রপতিকে এই ধরনের সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ধনখড়।
বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়ে ধনখড় রাষ্ট্রপতি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি জানান, ভারতীয় সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ দেশের শীর্ষ আদালতকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে। সাত দিন ২৪ ঘণ্টা এই ক্ষমতা রয়েছে বিচারব্যবস্থার কাছে। কিন্তু সেই ক্ষমতাকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধনখড় বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক একটি রায়ে দেশের রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কোন দিকে এগোচ্ছি? এই দেশে কী চলছে? আমাদের অত্যন্ত সংবেদনশীল হতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য আমরা তো কখনও দর কষাকষি করিনি। রাষ্ট্রপতিকে বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে! আর তা যদি না-হয়, তবে বিল আইনে পরিণত হয়ে যাবে!’’
বিচারব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে ধনখড় বলেন, ‘‘এখন থেকে তা হলে বিচারপতিরাই আইন প্রণয়ন করবেন, সংসদীয় কাজকর্ম করবেন। তাঁদের কোনও জবাবদিহি করতে হবে না। কারণ তাঁদের উপর আইন প্রযোজ্য হবে না।’’
আরও পড়ুন:
-
পর্ষদের আর্জিতে সাড়া সুপ্রিম কোর্টের, যাঁরা দাগি নন, তাঁরা যেতে পারবেন স্কুলে, পরীক্ষা নিয়ে নতুন নিয়োগ বর্ষশেষে
-
‘পার্ট টাইম’ নয়, ৬০ বছর বয়স পর্যন্তই চাকরি করতে চাই! শীর্ষ আদালতে সাময়িক স্বস্তির পরেও বলছেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা
-
ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পেয়েছি, এ বছরের মধ্যেই সমাধান: সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের পর মমতা, কী বার্তা শিক্ষাকর্মীদের জন্য?
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ উদ্ধারের কথাও উল্লেখ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘‘১৪-১৫ মার্চ রাতে নয়াদিল্লিতে এক বিচারপতির বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে। সাত দিন পর্যন্ত কেউ সেই ঘটনার কথা জানতেও পারেননি। আমাদের নিজেদের কাছেই প্রশ্ন করা উচিত। কেন এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে দেরি হল? এর কি কোনও ব্যাখ্যা আছে? এই ঘটনা কি মৌলিক কতগুলি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে না? যে কোনও সাধারণ ঘটনায় কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম হত। ২১ মার্চের আগে খবরটা কেউ জানতেই পারেননি।’’
ধনখড় আরও বলেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত পরে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য আমরা পেয়েছি। সেই তথ্য থেকে দোষের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। বোঝা গিয়েছে, তদন্তের প্রয়োজন। এখন গোটা দেশ অপেক্ষা করে আছে। দেশ অস্থির। কারণ যে প্রতিষ্ঠানকে সকলে শ্রদ্ধা করেন, যার উপর ভরসা রাখেন, তাকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।’’ নগদ উদ্ধার-কাণ্ডে কেন এখনও এফআইআর দায়ের করা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ধনখড়। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের সংবিধান কেবল দেশের রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের আইনি প্রক্রিয়া থেকে রক্ষাকবচ দিয়েছে। তা হলে আইন-বহির্ভূত ভাবে তিনি (বিচারপতি বর্মা) কী ভাবে রক্ষাকবচ পাচ্ছেন? এর কুপ্রভাব সকলে অনুভব করছেন। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, ভারতের সকল নাগরিক উদ্বিগ্ন।’’ উল্লেখ্য, বিচারপতি বর্মার বাংলো থেকে কত নগদ উদ্ধার হয়েছে, সেই পরিমাণ এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। দোলের রাতে তাঁর বাংলোতে আগুন লেগে গিয়েছিল। সেই আগুন নেভাতে গিয়ে দমকলবাহিনী নগদ টাকা উদ্ধার করে। মূল ঘটনার অনেক পরে বিষয়টি প্রকাশ্যে হয়। সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির নির্দেশ দিয়েছে। তবে তার সঙ্গে নগদ-কাণ্ডের সম্পর্ক নেই বলেও জানানো হয়েছে। নগদ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি তামিলনাড়ু সরকারের একটি মামলায় রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। সাধারণত, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে এই ধরনের বিল এলে রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা ফেলে রাখতে পারবেন না। ভারতীয় সংবিধানে বিল নিয়ে মতামত জানানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে কোনও সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিল হাতে পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। যদি বেশি সময় লাগে, সে ক্ষেত্রে তার কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। শীর্ষ আদালতের এই মন্তব্যের পরেই ধনখড় বিচারপতি বর্মার নগদ-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তোপ দেগেছেন।