মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতারের পর বিকাশ দুবেকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। টুইটারের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি
দু’জন পুলিশকর্মী ধরে আছেন দুই হাত। ১০-১২ জন পুলিশকর্মী-অফিসারের একটি দল নিয়ে যাচ্ছেন মহাকাল মন্দির চত্বর থেকে। একটি পুলিশ ভ্যানের সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছেন তিন পুলিশ কর্মী-অফিসার। কিন্তু সেই কি বিকাশ দুবে? সেই কি কানপুরের সেই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। জনতার মধ্যে থেকে এমন প্রশ্ন উঠতেই বলিউডের ‘খলনায়ক’-এর স্টাইলে বলে উঠলেন, ‘‘হাঁ হাঁ ম্যায় হুঁ বিকাশ দুবে। কানপুরওয়ালা।’’ তখনও তার গলায় হুমকির সুর। বৃহস্পতিবার সকালে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে এমনই টানটান নাটকের মধ্যে দিয়ে গ্রেফতার হয়েছে কানপুরের ‘ডন’ বিকাশ। যদিও এই গ্রেফতারি নিয়েও প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের দাবি, পুরোটাই সাজানো নাটক। তাঁদের আরও বক্তব্য, গ্রেফতার নয়, ‘আত্মসমর্পণ’ করেছে বিকাশ।
অন্য দিকে পুলিশের এত নজরদারির মধ্যেও উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল কী ভাবে, কোথায় কোথায় গা ঢাকা দিয়েছিল, কোন সূত্রে পুলিশ জালে ফেলল বিকাশকে— এ সব নিয়ে ঘুরছে নানা জল্পনা, নানা গুঞ্জন। উঠছে অনেক প্রশ্নও। জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বিকাশ প্রায় দু’ঘণ্টা মন্দির চত্বর এবং মন্দিরের ভিতরে ঘুরেছে। যদিও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সকালের মহাকাল মন্দিরের ঘটনার বিষয়েই আসা যাক। বিকাশের গ্রেফতারিতে প্রথম যিনি সাহায্য করেছিলেন তিনি ওই মন্দির চত্বরের এক ফুল বিক্রেতা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দোকানে ফুল কেনার সময় মাস্ক খুলেছিল বিকাশ। তখনই তিনি চিনতে পারেন তাকে। বিকাশ দোকান থেকে চলে যাওয়ার পর খবর দেন নিরাপত্তারক্ষীদের। এর পরেই সতর্ক হয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক কর্মী ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন ওই চত্বরেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রসাদ বিতরণের শুরু করতে যাচ্ছিলাম। সেই সময় এক ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞেস করল, ব্যাগ আর জুতো কোথায় রাখব। আমি দেখিয়ে দেওয়ার পর সেখানে সঙ্গের জিনিসপত্র রেখে ভিতরে ঢুকল ওই ব্যক্তি। তার পরেই দেখলাম নিরাপত্তারক্ষীরা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওই ব্যক্তির উপর কড়া নজর রাখছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। আর মন্দির থেকে বার হতেই তাঁকে ধরে ফেলেন।’’
ধরে ফেলার আগে শেষ মুহূর্তেও অবশ্য অনেক চাল খাটিয়েছেন বিকাশ। মহাকাল মন্দিরের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হোমগার্ডরা জানিয়েছেন, পরিচয় জানতে চাইলে বিকাশ প্রথমে ভুয়ো একটি নাম বলে। গ্বালিয়র থেকে পুজো দিতে এসেছে বলে জানায়। নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কাধাক্কি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেও দাবি ওই হোমগার্ডদের। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। নিরাপত্তারক্ষীরা বিকাশকে ধরে সেখানেই বসিয়ে রেখে স্থানীয় থানায় খবর পাঠান। পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায় তাকে। আর সেই থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ই বলিউড স্টাইলে নিজের পরিচয় দেয় বিকাশ। নিশ্চিত হয় পুলিশও।
VIDEO: After being arrested, Vikas Dubey shouts "Main Vikas Dubey hoon, Kanpur wala", only to get a tight slap from MP cop#VikasDubey #VikasDubeyArrested #KanpurEncounter #विकास_दुबे #ujjain pic.twitter.com/YLSJY7Nmht
— Shahkar Nizami 🇮🇳 (@ShahkarNizami) July 9, 2020
আরও পড়ুন: অবশেষে পুলিশের জালে বিকাশ দুবে, উজ্জয়িনীর মন্দির থেকে গ্রেফতার গ্যাংস্টার
কিন্তু এই গোটা পর্বে প্রশ্ন উঠেছে অনেক কিছু নিয়েই। এই রকম এক জন মোস্ট ওয়ান্টেড গ্যাংস্টার মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দীর্ঘক্ষণ থাকল, দর্শন করল, পুজো দিল— আর গোটা পর্বে শুধু তার উপর নজর রাখল নিরাপত্তারক্ষীরা। আগেই কেন পুলিশকে খবর দেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যদিও নিরাপত্তারক্ষীদের যুক্তি, তাঁরা সিসিটিভিতে ওই ব্যক্তির গতিবিধির উপর কড়া নজর রেখেছিলেন। তা ছাড়া মাস্ক পরা থাকায় ঠিকমতো চিনতেও পারেননি।
প্রশ্ন এবং অসঙ্গতি রয়েছে আরও। কানপুর থেকে উজ্জয়িনী পর্যন্ত পৌঁছতে পাড়ি দিতে হয় তিনটি রাজ্য, সাতটি জেলা। করোনা ভাইরাসের জন্য আগে থেকেই রাজ্যের সীমানাগুলিতে পুলিশ প্রহরা রয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যের অভ্যন্তরেও রাস্তায় চলছে টহলদারি। তার মধ্যেও কী ভাবে উজ্জয়িনীতে পৌঁছল বিকাশ, সেটা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে, তেমনই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদেরও। তবে কি উত্তরপ্রদেশের বাইরে সংলগ্ন রাজ্যগুলিতেও নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল বিকাশ? তারাই বিভিন্ন রাজ্যে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করেছে তাকে? আবার উত্তরপ্রদেশ পুলিশের মধ্যেও যে বিকাশকে অনেকে সাহায্য করেছেন, তাও প্রায় প্রমাণিত। অভিযানের দিনেও পুলিশের মধ্যে থেকে কেউ তাকে খবর দিয়ে দিয়েছিল আগেই। আবার উজ্জয়িনীর জেলাশাসক আশিস সিংহ আবার ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেছেন, মন্দিরে দর্শনের আগেই বিকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফলে দু’রকম বয়ানেও অসঙ্গতি বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ঝুলছে ৬০ মামলা, কানপুরে পুলিশহত্যার নায়ক বিকাশ হার মানাবে বলিউডের স্ক্রিপ্টকেও
এই সব অস্বাভাবিকতা, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের মুখে কুলুপের জেরেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গ্রেফতারির বিস্তারিত তথ্য জানানোর দাবি জানানো হয়েছে। দলের নেতাদের অভিযোগ, পুরোটাই ‘সাজানো নাটক’। সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব আবার সরাসরিই দাবি করেছেন, সরকার স্পষ্ট করে বলুক, এটা আত্মসমর্পণ নাকি গ্রেফতার। পুলিশ এবং বিকাশের কল ডিটেলস প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়ে অখিলেশ বলেছেন, ‘‘কারা কারা বিকাশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন কল ডিটেলস ঘাঁটলেই সেটা স্পষ্ট হবে।’’
Surprise arrest of a "dreaded gangster" already a CCTV ready...#VikashDubey #KanpurEncounter pic.twitter.com/rJ7dS5oJYT
— Aakansha Tandon (@TandonAakansha) July 9, 2020
কিন্তু এই সাত দিনে কেন বিকাশকে ধরতে পারল না পুলিশ? হরিয়ানার ফরিদাবাদের হোটেলে হানা দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই কী ভাবে পালিয়ে গেল সে? বিকাশ যে উজ্জয়িনীতে আছে, সেটা কি পুলিশ আগে থেকে বুঝতে পেরেছিল? এমন একাধিক প্রশ্নও উঠছে নানা মহল থেকে। শেষ প্রশ্নের উত্তরে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবারও বিকাশ উজ্জয়িনীতে ছিল, এমনটা নিশ্চিত না হলেও খুন, সে যে উজ্জয়িনীতে এসেছিল, এমন প্রমাণ পেয়েছিল পুলিশ। বিকাশকে ধরতে গঠিত উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা কয়েক দিন আগেই উজ্জয়িনী থেকে সুরেশ এবং বিট্টু নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। মনোজ দুবের নামে রেজিস্ট্রেশন করা লখনউয়ের নম্বর প্লেট লাগানো একটি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করা হয়। উজ্জয়িনীর দিবস গেট এলাকা থেকে ওই গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এর পর থেকেই উজ্জয়িনীতে ঢোকা বেরনোর পথ কার্যত সিল করে দেয় পুলিশ। অন্য দিকে বিকাশের কাছেও সেই খবর পৌঁছে যায়। ফলে উজ্জয়িনী থেকে পালানো যে তার পক্ষে কার্যত অসম্ভব, সেটা কার্যত বুঝে গিয়েছিল সে-ও। মহাকাল মন্দিরের প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি সূত্রে আবার জানা গিয়েছে যে, বিকাশকে নিরাপত্তারক্ষীরা আটকানোর পর সে-ই পুলিশকে খবর দিতে বলে এবং তাকে গ্রেফতার করতে বলে। ফলে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উজ্জয়িনীর ওই দুই যুবক এবং বিকাশের সেখানে থাকার সূত্র পুলিশ পেয়েছিল উজ্জয়িনীর নাগঝিরি এলাকার এক মদ ব্যবসায়ীর কাছে। ওই ব্যবসায়ীর আদি বাড়ি উত্তরপ্রদেশের চিত্রকুটে। ওই ব্যবসায়ীই তাকে উজ্জয়িনীতে গা ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল বলে পুলিশের একটি সূত্রে খবর। ওই ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই সুরেশ এবং বিট্টুকে গ্রেফতার করেছিল এবং গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন এসটিএফ-এর তদন্তকারীরা।
আবার বিহারের শাহ্দল থেকে বিকাশের শ্যালক রাজু নিগমকে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এসটিএফ। সেও বিকাশকে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ। ফলে বিহার হয়ে উজ্জয়িনী পৌঁছনোর সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy