নেহরু-গান্ধী সম্পর্কিত বা তাঁদের লেখা কোনও বই বইমেলায় থাকা বা বিক্রির জন্য ‘উপযুক্ত নয়’! তা ছাড়া বইমেলায় থাকা অনেক বই ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত করতে পারে! এই যুক্তিতেই অনুমতি দেওয়ার পরেও আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির হুমকির মুখে উত্তরাখণ্ডের হেমবতী নন্দন বহুগুণা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বাতিল করেন। বারবার বৈঠকেও সমাধানসূত্রের বদলে আগুন লাগানোর হুমকির মুখে শেষ পর্যন্ত দু’দিনের বইমেলা বাতিল করতে বাধ্য হলেন আয়োজকেরা। বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে বইপ্রেমীদের মধ্যে।
১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের পৌড়ী গঢ়বাল জেলার হেমবতী নন্দন বহুগুণা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বইমেলা করার অনুমতি পেয়েছিল ‘ক্রিয়েটিভ উত্তরাখণ্ড’ নামে একটি সংগঠন। গত ১২ বছর ধরে ‘কিতাব কৌতিক’ নামে একটি বইমেলার আয়োজন করে সংগঠনটি। এ বছর জানুয়ারিতে পৌড়ীর শ্রীনগরে সরকারি মহিলা কলেজে এই বইমেলা হওয়ার কথা থাকলেও আরএসএস এবং তাদের ছাত্র সংগঠনের আপত্তিতে তা বাতিল হয়ে যায়। উদ্যোক্তাদের অন্যতম হেম পন্থ এ খবর জানিয়ে বলেন, ‘‘এর পরে আমরা হেমবতী নন্দন বহুগুণা গঢ়বাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের কাছ থেকে বইমেলার অনুমতি সংগ্রহ করি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু পরে আমাদের জানানো হয়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বইমেলা করতে পারব না। এর পরে আমরা রামলীলা কমিটির কাছে তাদের মাঠটি চেয়ে দরবার করি। কিন্তু লিখিত অনুমতি পাওয়ার পরেও সেখানে একই দিনে একই জায়গায় অনুষ্ঠান শুরু করে দেয় আরএসএস।’’
এর পরেই বইমেলা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তারা। পন্থ বলেন, ‘‘এবিভিপি নেতারা বলে, গান্ধী এবং নেহরুর উপরে কোনও বই বিক্রির উপযুক্ত নয়!’’ পাশাপাশি পন্থের দাবি, ‘‘ওরা বলে, আমরা বইমেলা করলে ওরা আগুন লাগিয়ে দেবে। ওদের অভিযোগ, ওগুলো নাকি সব কমিউনিস্টদের বই! ওখানে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রায় ৭০ হাজার বই থাকার কথা ছিল। বইমেলায় নরেন্দ্র সিংহ নেগি নামক এক লোকশিল্পীকেও আমরা আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আরএসএস নেগির উপরে অসন্তুষ্ট!’’ হিন্দুত্ববাদীদের ভয়েই শেষ পর্যন্ত বইমেলা বাতিল করে দেন উদ্যোক্তারা।
অনুমতি দিয়েও তা বাতিল করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়টির এক কর্তা জানান, সেখানকার এবিভিপি নেতৃত্বের আপত্তির জেরেই অনুমতি দিয়েও তা বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘ওরা (এবিভিপি) বইমেলা এবং আলোচনাচক্র নিয়ে আপত্তি জানায়। ওদের বক্তব্য ছিল, ওই সব বই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে। এর পরে আমরা অনুমতি বাতিল করে দিই।’’
বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ডের এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে বহু মহলে। নাম না প্রকাশের শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই-এর এক নেতা বলেন, বইয়ের প্রতি হিন্দুত্ববাদীদের এই বিদ্বেষের সঙ্গে নাৎসি সমর্থকদের মিল রয়েছে। একই মন্তব্য করেছেন বাম ছাত্রনেতারাও। তবে গান্ধী-নেহরুর বই নিয়ে আপত্তিতে বিস্মিত বইপ্রেমীরা। তাঁদের বক্তব্য, এঁদের সম্পর্কিত বই কী করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে? বিতর্কের মুখে সঙ্ঘের রাজ্য নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, পরীক্ষা চলছে বলেই বইমেলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন এবিভিপি নেতারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)