বিয়ে না করেও সাহস দেখিয়ে নির্লজ্জ ভাবে একসঙ্গে রয়েছেন। এখানে গোপনীয়তার কী রয়েছে! উত্তরাখণ্ডে একত্রবাসের নয়া বিধিতে আপত্তি জানানোয় ২৩ বছর বয়সি এক তরুণকে এ কথা বলল আদালত। উত্তরাখণ্ড সরকারের অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে একত্রবাস সংক্রান্ত বেশ কিছু নিয়মের উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল, একত্রবাসে থাকা যুগলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই নিয়মের বিরুদ্ধে উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মামলাকারী। মামলাকারীর বক্তব্য, এই নিয়ম তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার পরিপন্থী।
উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের বিচারপতি জি নরেন্দ্র এবং বিচারপতি অলোক মেহরার বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। আদালত মামলাকারীকে প্রশ্ন করে, যখন সম্পর্কটাই গোপনীয় নেই, সে ক্ষেত্রে রাজ্য কী ভাবে তাঁদের গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করবে! তাতে মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য, এই নিয়ম অনুসারে প্রশাসনের আধিকারিকেরা অনুসন্ধানে আসবেন। তা নিয়ে আশপাশের চত্বরে বিভিন্ন গল্পগুজব শুরু হতে পারে। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুসারে, দুই বিচারপতির বেঞ্চের মৌখিক পর্যবেক্ষণ, “এখানে লুকানোর কী আছে? আপনারা দু’জনেই একসঙ্গে থাকছেন। সে কথা আপনার প্রতিবেশীরা জানেন, সমাজ জানে, গোটা দুনিয়া জানে। তা হলে কোন গোপনীয়তার কথা বলছেন? কিসের গল্পগুজব?”
আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, “আপনারা কি কোনও নির্জন গুহায় গিয়ে গোপনে বাস করছেন? আপনারা তো একটি সভ্য সমাজে বাস করছেন। সাহস করে আপনারা নির্লজ্জ ভাবে বিয়ে ছাড়াই একসঙ্গে থাকছেন। তার পরে গোপনীয়তা কিসের? আপনাদের কোন গোপনীয়তা ভঙ্গ হচ্ছে?”
আরও পড়ুন:
মামলাকারী আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের বয়স মাত্র ২৩ বছর। এই অবস্থায় ওই তরুণ একত্রবাসকে একটি ঘোষিত সম্পর্ক হিসাবে দেখাতে চান না। এটি তাঁর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের পরিপন্থী বলে আদালতে সওয়াল করেন তরুণের আইনজীবী। তাতে দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, রাজ্য সরকার তো একত্রবাস নিষিদ্ধ করে দিচ্ছে না। কেবল মাত্র যুগলের রেজিস্ট্রেশন করার মানে এমন নয় যে এই সম্পর্কটি একটি ঘোষিত সম্পর্ক হয়ে যাবে।
আদালত জানিয়েছে, তরুণের কী ভাবে গোপনীয়তা ভঙ্গ হচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হবে। দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “আপনার এবং আপনার গোপনীয়তার মাঝে কী আসছে? আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনি গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ তুলছেন। আপনার নাম কি কোথাও ফাঁস হচ্ছে? যদি তেমন কিছু ঘটে, তবে সেটি জানান। যদি কোনও অভিযোগ জানানোর থাকে, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানান। এ ভাবে নয়।” উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টে আগেও একই ধরনের আরও একটি মামলা জমা পড়েছে। ওই মামলাটির সঙ্গে তরুণের মামলাকে যুক্ত করে দেয় হাই কোর্ট। আগামী ১ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।