গর্জনের মতো শব্দ। তার পরই যেন মনে হল দুলে উঠল গোটা পৃথিবী। চারপাশ শুধু সাদা বরফ। আর দূরের পাহাড় থেকে যেন লাভার থেকে নেমে আসছে বরফের স্রোত। মুহূর্তে সব অন্ধকার! শুক্রবার সকালের অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে বার বার গলা কেঁপে উঠছিল বিপিন কুমারের।
উত্তরাখণ্ডের বদরীনাথের অদূরে চামোলী জেলার মানা গ্রামের এক অস্থায়ী ক্যাম্পে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ছিলেন বিপিন। প্রবল ঠান্ডার কারণে ধাতব আস্তানার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। তার আগের দিন টানা অনেক ক্ষণ কাজ করেছিলেন। ফলে গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আচমকাই বজ্রপাতের মতো শব্দ পেলাম। সেই আওয়াজেই ঘুম ভেঙে গেল। প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি। টলতে টলতে ক্যাম্পের বাইরে এলাম। কিন্তু আমি যে কিছু করব, তার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেল!’’
তুষারধসে আটকে পড়েছিলেন বিপিন। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও সেই বিভীষিকা কাটাতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় মনে হয়েছিল সব শেষ। ক্যাম্পের বাইরে এসে সব দেখে আমি নড়তে পারছিলাম না। চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেল।’’ বরফের মধ্যেই পড়ে যান। অন্তত ১৫ মিনিট বরফের মধ্যে ওই অবস্থাতেই পড়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার যেন দ্বিতীয় জন্ম হল।’’
বিপিনের মতো তুষারধসে আটকে পড়েছিলেন গোপাল জোশী নামে আরও এক শ্রমিকও। তাঁর অভিজ্ঞতাও বিপিনের মতোই। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। শুক্রবার সকালে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কন্টেনারের (শ্রমিকদের থাকার ক্যাম্প) থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখতে পেলাম উপর থেকে তুযারের স্রোত ধেয়ে আসছে আমার দিকেই। সঙ্গে সঙ্গে কন্টেনারের মধ্যে ঢুকে অন্যদের সতর্ক করলাম। তার পর বেরিয়ে দৌড় লাগালাম। কিন্তু পুরু বরফ জমে ছিল। ফলে সহজে দৌড়কে পারছিলাম না। প্রায় দুই ঘণ্টা ওই পরিস্থিতিতে কাটাই। বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।’’
আরও পড়ুন:
শনিবার গোপাল এবং তাঁর অন্য সঙ্গীদের হেলিকপ্টারে চাপিয়ে মানা থেকে সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গোপালের মাথায় সামান্য আঘাত লেগেছে, তবে বুকে ব্যথা রয়েছে। বিপিনের পিঠে গুরুতর আঘাত লেগেছে। যদিও শারীরিক অবস্থার থেকেও তুষারধসের ভয়াবহতার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছেন না গোপাল, বিপিনেরা।
শুক্রবার উত্তরাখণ্ডে তুষারধস নামে। মানা বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন বা বিআরও-র অন্তত ৫৫ জন শ্রমিক আটকে পড়েন। তাঁদেরই এক ক্যাম্পের কাছে তুষারধসের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়। যদিও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার বার বার বাধা পায় উদ্ধারকাজে। এলাকায় ছয় থেকে সাত ফুট পুরু চাদরে ঢেকে যায়। শনিবার সকাল থেকেই জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। এখনও পর্যন্ত ৪৬ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পাঁচ জন এখনও আটকে তুষারধসে। রবিবার সকাল থেকেই তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে উদ্ধারকারী দল।