তুষারধসের জেরে তীব্র জলোচ্ছ্বাস চামোলিতে।
দেবভূমিতে রবিবার তুষারধসে যে শ্রমিকদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, তাঁদের সকলেই মারা গিয়েছেন বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। সেক্ষেত্রে জোশীমঠে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা কম করে ১০০-১৫০ জন হতে পারে বলে মনে করছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব ওম প্রকাশ। ইতিমধ্যেই ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিকটবর্তী টানেলে আটকে পড়েছিলেন বহু শ্রমিক। এ ছাড়া ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও পুরোপুরি ভেসে গিয়েছে বলে রবিবার জানিয়েছে চামোলির ডিজিপি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খোঁজ মিলছে না আরও অনেকেরই। ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটির পাশাপাশি তপোবন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টানেলেও আটকে থাকতে পারে বহু শ্রমিক। প্রশ্ন উঠছে, প্রকৃতি ধ্বংস করে একের পর পাহাড় কেটে টানেল এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্যই কি এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি?
সরকারের তরফে অবশ্য এ নিয়ে কোনও বিবৃতি মেলেনি। আপাতত কারণ ব্যখ্যায় না গিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকেই মন দিয়েছে তারা। তবে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়ত জানিয়েছেন, কেন এমন ঘটনা ঘটল বিশেষজ্ঞরা তা খতিয়ে দেখবেন। তবে আগে মানুষের জীবন বাঁচানোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সরকারি সূত্রে খবর, হিন্দন থেকে অতিরিক্ত তিন কোম্পানি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। রবিবার রাতের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছবে দলটি। এ ছাড়া ২০০ আইটিবিপি জওয়ান এবং সেনা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। নিয়ে আসা হয়েছে নৌবাহিনীর ডুবুরিদের। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার এবং বিমানকে।
উদ্ধার কাজে নেমেছে বায়ুসেনা। রবিবার দুপুরে বায়ুসেনার দু’টি বিমান সি ১৩০ এবং এএন ৩২-এ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি দলকে দেরাদুনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর থেকে উড়িয়ে আনা হয় উত্তরাখণ্ডের ওই এলাকায়। এছাড়া ভারতীয় সেনা বাহিনীর প্রায় ৬০০ জনের বাহিনীও রওনা হয়েছে জোশীমঠের উদ্দেশে। উদ্ধার কাজের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সেনা বাহিনীর কপ্টার। এ ছাড়া ভারতীয় বায়ু সেনাবাহিনীর কপ্টারও রয়েছে এলাকায়। সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওমপ্রকাশ জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে ভারত-তিব্বত সীমান্তরক্ষী বাহিনী (আইটিবিপি) এবং কেন্দ্র-রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
Deeply shocked and very saddened at the loss of lives in the disaster that took place in Uttarakhand. My deepest condolences to the families of the deceased. Wishing a speedy and full recovery for those injured in the calamity.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) February 7, 2021
Casualties are feared to be between 100 to 150. Teams of ITBP, SDRF and NDRF have already reached the spot. Red alert has been issued: Uttarakhand Chief Secretary Om Prakash on #Chamoli incident pic.twitter.com/lLrp88p69b
— ANI (@ANI) February 7, 2021
এছাড়া চামোলির রেনি গ্রামে চিকিৎসক দল পাঠানো হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য জোশী মঠে তৈরি করা হয়েছে ৩০ শয্যার একটি হাসপাতালও। শ্রীনগর, ঋষিকেশ, জলিগ্রান্ট এবং দেরাদুনেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতাল। ২০১৩ সালের মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হরপা বাণের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। এছাড়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে মন্ত্রিসভার সচিব রাজীব গৌবার নেতৃত্বে বৈঠকে বসে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কমিটি (এনসিএমসি)। উদ্ধার কাজ কোন পথে, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বৈঠকে আলোচনা করা হবে পুনর্বাসনের বিষয়েও।
রবিবারের ঘটনায় টুইট করে উদ্বেগ জানান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি লেখেন, ‘উদ্বিগ্ন বোধ করছি। জোশীমঠের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য প্রার্থনা করছি’। প্রধানমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখছেন। উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর থেকে প্রতিমুহূর্তের খবর নিচ্ছেন। মোদী টুইটারে লেখেন, ‘গোটা দেশ উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে। উত্তরাখণ্ডের জন্য প্রার্থনা করছে’। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহও লেখেন, দেবভূমিকে এই সঙ্কটকালে সবরকম সাহায্য করবে কেন্দ্র। উদ্ধারকাজের জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও বায়ুসেনা পাঠানোর ঘোষণাও করেন টুইটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
इस कठिन समय में मोदी सरकार उत्तराखंड की जनता के साथ कंधे से कंधा मिलाकर खड़ी है।
— Amit Shah (@AmitShah) February 7, 2021
NDRF, ITBP और SDRF की टीमें वहां पहुंच गई हैं, वायुसेना को भी अलर्ट पर रखा गया है।
देवभूमि में जानमाल का नुकसान कम से कम हो और वहाँ की स्थिति यथाशीघ्र सामान्य हो यह हमारी प्राथमिकता है। pic.twitter.com/U74OHzHSWL
জানা গিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিমবাহে ফাটল ধরার পর যে তুষারধস নামে, তার জেরেই ধউলিগঙ্গার জলস্তর বেড়ে যায়। প্রবল জলচ্ছ্বাসে ঋষিগঙ্গা বাঁধ ভেঙে যাওয়াতেই বাড়ে বিপত্তি। বন্যার জল বেড়ে ধৌলিগঙ্গার দুই তীরের বেশ কয়েকটি গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি সেতু ভেঙে যায়। ভেসে যায় ধউলিগঙ্গার দুই তীরের দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ঋষিগঙ্গা ও তপোবন বিষ্ণুপুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। জল গিয়ে অলকানন্দা নদীতে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছে আইটিবিপি।
রবিবার দুপুর দু’টো নাগাদ ভাগিরথী নদীর উপর তেহরি বাঁধটিকে অবশ্য ঠিক করা গিয়েছে। আইটিবিপি জানিয়েছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। আইটিবিপি-র ২৫০ জনের একটি বাহিনী কাজ করছে ধউলিগঙ্গার তীরে জলচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত গ্রামগুলিতে।
তবে সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। বাড়তে পারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও।
Deeply worried about the glacier burst near Joshimath, Uttarakhand, that caused destruction in the region. Praying for well being and safety of people. Am confident that rescue and relief operations on ground are progressing well.
— President of India (@rashtrapatibhvn) February 7, 2021
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy