আমেরিকার প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় এসে বৈঠক করলেন তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি-সহ সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় এসে আজ বৈঠক করলেন তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার সঙ্গে। তার পরই প্রত্যাশিত ভাবে বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। তিব্বত নিয়ে স্পর্শকাতর চিন হুমকির স্বরে বলেছে, তিব্বতকে চিনের অংশ হিসেবে আমেরিকা যদি বিবেচনা না করে, তারা ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেবে।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিং জিয়াংয়ের কথায়, ‘‘চতুর্দশ দলাই লামা পুরোপুরি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন, বরং ধর্মের নামে চিন-বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত এক জন নির্বাসিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’’ চিন-তিব্বত বিরোধ সমাধানের সপক্ষে আমেরিকার কংগ্রেসে পাশ হওয়া আইনকে যাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমর্থন না করেন, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ভারতকেও কিছুটা বার্তা দিয়ে নয়াদিল্লিতে চিনা দূতাবাসও মুখর। দীর্ঘ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আমেরিকাকে বলতে চাই, দলাই লামা গোষ্ঠীর চীন-বিরোধিতা এবং তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানকে তারা বুঝুক। বিশ্বকে ভুল সংকেত পাঠানো বন্ধ করুক’।
অন্য দিকে, ভারতেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে বেজিংকে নিশানা করে পেলোসির বক্তব্য, ‘‘ধর্মগুরু দলাই লামা দীর্ঘজীবী হবেন এবং তাঁর পরম্পরা চলতেই থাকবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট (চিনের), আপনি যখন যাবেন, কেউ আপনাকে কোনও কাজের জন্যই কৃতিত্ব দেবে না। দলাই লামা হয়তো চাইবেন না আমি এ ভাবে চিনা সরকারের সমালোচনা করি। তিনি হয়তো বলবেন, আমরা প্রার্থনা করি যাতে ন্যান্সি এই নেতিবাচক আচরণ থেকে মুক্তি পান! তবে আশা করব, তিনি আজ আমাকে এটা বলতে দেবেন যে বদল আসছে। তিব্বতের মানুষের আশাভরসা যাবতীয় তফাৎ গড়ে দেবে।’’
কূটনৈতিক শিবিরে চর্চা, নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক পক্ষকালের মধ্যেই চিন বিরোধিতার এই মহামঞ্চ গড়লেন কেন? বিশেষত তাঁর ভিত এ বারে দুর্বল। তা হলে কি আমেরিকার প্রতি নির্ভরতা কিছুটা বাড়াতে চেয়ে এই পদক্ষেপ? না কি গোটা অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রথমেই সরাসরি লড়াইয়ের বার্তা না দিয়ে, পরোক্ষ কৌশল নিলেন মোদী? কারণ, মমল্লপুরম অথবা উহানের ঘরোয়া সংলাপে বেজিং-প্রীতির বলয় তৈরি করতে গিয়ে ঘা খাওয়া নরেন্দ্র মোদী জানেন যে চিনের সঙ্গে রোমান্টিকতার জায়গা নেই। যা করতে হবে, তা নিজের শক্তি বাড়িয়ে সমমনস্ক দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে।
পূর্ব লাদাখে ভারতের জমি দখল করে বসে আছে বেজিংয়ের লাল ফৌজ। নরেন্দ্র মোদী সরকার তার প্রায় গোটা দ্বিতীয় পর্ব জুড়ে নানা ভাবে চেষ্টা করেও সামগ্রিক ভাবে চিনা সেনাকে পশ্চাদপসরণ করাতে পারেনি। ফলে তিব্বতের তাস যদি আমেরিকা খেলে, তা ভারতের জন্য সুবিধাজনক।
আমেরিকার হাউজ় অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস সম্প্রতি ‘তিব্বত-চিন বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহ প্রদান’ আইন ৩৯১-২৬ ভোটে পাশ করেছে। সেনেটেও তা পাশ হয়ে গিয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী, তিব্বতের ইতিহাস, মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্পর্কে চিনের ‘মিথ্যা তথ্য’-এর মোকাবিলা করতে অর্থ সহায়তা করবে আমেরিকা। তিব্বত তাদের অংশ বলে চিন যে দাবি করে, সেই ভাষ্যের পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই আইনে। তিব্বতের নেতাদের সঙ্গে চিনের যে আলোচনা ২০১০ সাল থেকে বন্ধ হয়ে আছে, তা চালু করার জন্য বেজিংয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করার কথাও বলা হয়েছে, যাতে তিব্বত নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছনো যায়। এই আইনকে ভারত পরোক্ষ ভাবে কী করে কাজে লাগায়, তার ‘ট্রেলার' এনডিএ সরকার গড়ার পক্ষকালের মধ্যেই দেখা গেল বলে অনেকেই মনে করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy