গোরক্ষপুরের একটি হাসপাতালে যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: পিটিআই।
ঠিক যেন স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার আগে দশ নম্বরের ‘ক্লাস টেস্ট’!
দশে দশ পাওয়ার আশা খুব কম। অন্তত দশে পাঁচ পেলেই আপাতত গদি টিকে যাবে। তার কম হলেই সিংহাসন নড়ে উঠতে পারে।
লোকসভা ভোটে বিজেপি ধাক্কা খাওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী পদে যোগী আদিত্যনাথের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন লখনউয়ের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, উত্তরপ্রদেশের দশটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের উপরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ভাগ্য নির্ধারণ করছে। লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন সংখ্যা এক ধাক্কায় ৬২ থেকে ৩৩-এ নেমে এসেছে। সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের ১০টি বিধানসভায় উপনির্বাচনে ফের বিজেপি ধাক্কা খাবে। তা হলেই যোগীর মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু বিজেপি শিবিরের প্রশ্ন হল, তার পরেও কি যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর গদি থেকে সরানো যাবে? কারণ বছরের শেষে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন। তিন রাজ্যের ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে যোগী আদিত্যনাথকে সরানো হলে বিজেপির মধ্যে তা নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার প্রভাব গোটা দলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিজেপির এক প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “বুলডোজ়ার বাবা এখন এতটাই জনপ্রিয় এবং ক্ষমতাশালী যে, তাঁকে সরানো হলে তিনি কার খুঁটি উপড়ে ফেলবেন, কে জানে!”
উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বিজেপি ও তার শরিক দল মিলিয়ে রাজ্যের মোট ন’জন বিধায়ক এ বার সাংসদ হয়েছেন। তার সঙ্গে এক জন বিধায়কের জেল হওয়ায় তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে ১০টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন। এখনও উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি। কিন্তু সব শিবিরই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে যোগী আদিত্যনাথ। কারণ তিনিও টের পাচ্ছেন, এই দশ কেন্দ্রের ফলের উপরে তাঁর ভাগ্য ঝুলে রয়েছে। লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন কমার দায় নরেন্দ্র মোদী তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরে কিছুটা হলেও চাপানো সম্ভব। কিন্তু বিধানসভা উপনির্বাচনে খারাপ ফল হলে তার দায় পুরোপুরি তাঁর উপরেই এসে পড়বে।
উল্টো দিকে, অখিলেশ যাদবও প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই দশটির মধ্যে পাঁচটি আসন আগেই তাঁদের দখলে ছিল। এ বার উপনির্বাচনে আরও দু’টি আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
কী ভাবে?
সমাজবাদী পার্টি সূত্রের ব্যাখ্যা, যে দশটি আসনে উপনির্বাচন হবে, তার মধ্যে করহল, মিল্কীপুর, সীসামউ, কুনর্কী, কটহরী এমনিতেই এসপি-র দখলে ছিল। এর মধ্যে করহলে অখিলেশ যাদব নিজে বিধায়ক ছিলেন। তিনি কন্নৌজ থেকে সাংসদ হয়েছেন। সেখানে অখিলেশের ভাইপো তেজপ্রতাপকে প্রার্থী করা হবে। অযোধ্যার মিল্কীপুরে গত ন’দফায় বিধায়ক ছিলেন অবধেশ প্রসাদ। এই এসপি নেতা রামমন্দির যে লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়, সেই ফৈজ়াবাদে বিজেপিকে হারিয়েছেন। মিল্কীপুরে অবধেশের ছেলে অজিত প্রসাদকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। মুরাদাবাদের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কুনর্কী কেন্দ্র এসপি-র শক্ত ঘাঁটি। সীসামউতে এসপি নেতা ইরফান সোলাঙ্কির একটি মামলায় জেল হয়েছে। কিন্তু সেখানে মানুষের সহানুভূতি তাঁর সঙ্গে রয়েছে। অম্বেডকর নগরের কটহরীতে এসপি-র প্রবীণ নেতা লালজি বর্মা বিধায়ক ছিলেন। তিনি সাংসদ হওয়ায় তাঁর মেয়ে ছায়া বর্মাকে প্রার্থী করা হবে। ফলে এই পাঁচ আসনে অখিলেশের দলের জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন এসপি নেতারা।
বাকি পাঁচটি আসনের মধ্যে মুজফ্ফরনগরের মীরাপুর এত দিন আরএলডি-র দখলে ছিল। কিন্তু আরএলডি এখন বিজেপির সঙ্গে জোট করায় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনেও জয়ের আশা দেখছে এসপি। ফুলপুরের বিজেপি বিধায়ক এ বার লোকসভায় গিয়েছেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে ফুলপুর বিধানসভা এলাকাতেই বিজেপি পিছিয়ে ছিল। এর বাইরে গাজ়িয়াবাদ, খৈর ও মঝবাতে বিজেপি ও তার শরিক দল নিষাদ পার্টির জয় সহজ বলে এসপি নেতারা মনে করছেন। যার অর্থ, উপনির্বাচনে দশটি আসনের মধ্যে সাতটি আসনে যোগী আদিত্যনাথকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে।
লোকসভা ভোটের পরে যোগী শিবির থেকে অভিযোগ উঠেছিল, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো প্রার্থী বাছাই করেনি। সূত্রের খবর, এ বার যোগী নিজেই উপনির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতে চাইছেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য আপত্তি তুলতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর পদে যোগীর উত্থানের আগে পর্যন্ত ওবিসি নেতা মৌর্যই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার ছিলেন। এ বার লোকসভা ভোটে খারাপ ফলের পরে তিনি ‘বিদ্রোহ’ শুরু করেছেন। ‘সরকারের থেকে সংগঠন বড়, সংগঠনের থেকে কেউ বড় নয়’ বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও ঠাকুর নেতা যোগীর সঙ্গে ওবিসি নেতা মৌর্যের সংঘাত ধামাচাপা দিতে পারেননি।
উত্তরপ্রদেশের এক প্রবীণ বিজেপি সাংসদের মতে, “দশটি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে খারাপ ফল হলে যোগী বাবার আসন যে নড়ে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে রদবদল করা যাবে কি না, সেটা কঠিন প্রশ্ন। কারণ এটা শুধু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের লড়াই নয়। নরেন্দ্র মোদীর উত্তরসূরির লড়াইও এর মধ্যে নিহিত রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy