বিকাশ দুবের মৃত্যুর পরে কানপুরের বিকরু গ্রামে তদন্তে পুলিশ। এই বিকরুতেই ছিল বিকাশের বাড়ি। ছবি: পিটিআই
শুক্রবার বেশি রাতে কানপুরের ভৈরোঁঘাটে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের শেষকৃত্যের পরে শনিবারই লখনউয়ের বাড়িতে ফিরেছেন তার স্ত্রী রিচা, পুত্র এবং বাড়ির কাজের মহিলাটি। গত তিন দিন কানপুরের মহিলা থানায় রিচা এবং গৃহ-সহায়িকাকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁদের আপাতত বেশ কিছু দিন কড়া নজরদারিতে রাখা হবে। সেই সঙ্গে চলবে মামলা। বিকাশের একাধিক অনৈতিক কাজের সঙ্গে স্ত্রী রিচার ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল বলেই প্রাথমিক ভাবে জেনেছে পুলিশ। পাশাপাশি বিকাশের নানা অপরাধের বিবরণও জেরায় জানার চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু এত দীর্ঘ জেরায় লাভ হয়েছে কি? আপাতত মুখে কুলুপ প্রশাসনের। বরং বিকাশের উত্থানের পর্বটি খতিয়ে দেখতে শনিবার স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের একাধিক কর্তা। তাঁদের বক্তব্য, মৃত্যুর পরে তদন্তে লাভ কী! বরং বেঁচে থাকতেই সতর্ক হলে বিকাশ দুবেকে অনেক আগে ঠান্ডা করা যেত। একাধিক অফিসারের আশঙ্কা, বিকাশের সঙ্গে যোগ ছিল বা বিকাশের উত্থানে সাহায্য করেছিলেন— এই অভিযোগ এনে এ বার একাধিক বিরোধী নেতাকে বেকায়দায় ফেলতে সক্রিয় হবে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। ২০২২ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এই সিট গঠন তারই অঙ্গ। যদিও সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বিকাশের পুলিশি-যোগ খতিয়ে দেখবে সিট।
তার মধ্যেই চলছে বিকাশের পুরনো অপরাধের তত্ত্বতালাশ। বিকাশের পুরনো অপরাধের ফাইল থেকে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার বিকরু গ্রামে ৮ পুলিশকে খুন করার আগে অবধি তার নামে ৭ জনকে খুনের অভিযোগ ছিল। ১৯৯২ থেকে ২০১৭— এই দীর্ঘ সময়ে ৭ জনকে খুনের পাশাপাশি ৬০টি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। নিজের রাজনৈতিক দাপটকে কাজে লাগিয়ে বরাবরই শাস্তি এড়িয়েছে সে। কিন্তু এ বার ৮ পুলিশকে খুন করেই বিপদে পড়ল কানপুরের গ্যাংস্টার। মারাও পড়ল পুলিশের গুলিতে।
আরও পড়ুন: ঠাণে থেকে গ্রেফতার বিকাশ দুবের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী
আর এই মৃত্যু নিয়ে চাপান-উতোর অব্যাহত। বিকাশের দেহের ময়না-তদন্তে দেখা গিয়েছে, মোট চারটি গুলি লেগেছিল তার। তিনটি উর্ধ্বাঙ্গে (তার মধ্যে একটি গুলি বুকে লেগেছে), বাকি একটি হাতে। একাধিক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ-কর্তার পাশাপাশি বিরোধীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, পলাতক অপরাধীকে ধরতে তার পায়ে বা কোমরের নীচের অংশে গুলি করার নিয়ম। দেহের উপরিভাগে গুলি করা হল কেন? তার বুকে গুলি লাগল কী ভাবে? পুলিশ অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু নাছোড় বিরোধীদের অভিযোগ, যোগী জমানায় অপরাধীদের না-ধরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এনকাউন্টারের নাম করে খুন করেছে। এটা বিচারব্যবস্থার প্রহসন ছাড়া কিছু না।
বিরোধীরা যতই হইচই করুক না কেন, ২০১৭-র মার্চে যোগী আদিত্যনাথ গদিতে বসার পর থেকে বিকাশ দুবে-সহ এ পর্যন্ত ১১৯ জন অপরাধী এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শেষ হয়েছে এবং সব ক’টিতেই পুলিশ ‘ক্লিন চিট’ পেয়েছে। বিকাশের মামলায় কী হবে? এক পুলিশ-কর্তার সহাস্য মন্তব্য, ‘‘আগেরগুলোর যা হয়েছে, তা-ই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy