গাড়ি দুর্ঘটনায় উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। ছবি: টুইটার
হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন রবিবার গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম উন্নাওয়ের সেই ধর্ষিতা। লখনউয়ের একটি হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি। আর ‘রহস্যময়’ সেই দুর্ঘটনা নিয়েই দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারণ, রায়বরেলীতে এই দুর্ঘটনার জেরে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গণধর্ষণ কাণ্ডের এক সাক্ষীও। নির্যাতিতাকে খুন করতেই দুর্ঘটনার ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মা। এই ঘটনার তদন্তভারও তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ইতিমধ্যে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
রবিবার, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন ওই নির্যাতিতা। বেশ কিছুক্ষণ কাটলেও, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। লখনউয়ের কিংস জর্জ’স মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ফুসফুসে আঘাত লেগেছে। তাঁর দেহের ডান দিকে সবচেয়ে বেশি চোট লেগেছে। কলার বোন, হাত ও উরুর হাড় ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতালের ভর্তি তাঁর আইনজীবীও।
রবিবারের দুর্ঘটনা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। ওই নির্যাতিতার জন্য যে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল তিনি সে সময় ছিলেন না। যে ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে তার নম্বর প্লেটের উপর কালো রঙ লাগানো ছিল। এ সব নিয়েই সরাসরি অভিযোগ করেছেন নিগৃহীতার মা। তিনি বলেন, ‘‘এটা সাধারণ একটা দুর্ঘটনা নয়, আমাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিরাট ষড়যন্ত্র। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত শাহি সিংহ ও আরেক যুবক আমাদের হুমকি দিয়ে চলেছে। তারা আমাদের দেখে নেবে বলেছে। জেলে থাকলেও সব কলকাঠি নাড়ছেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার।’’ তাঁর এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে সিবিআই।
আরও পড়ুন: ফের উত্তরপ্রদেশ, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলাতেই কিশোরের গায়ে আগুন!
সোমবার, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিবিআইয়ের একটি দল। আরেকটি দল হাসপাতালেও যায়। অন্যদিকে, সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক ট্রাকের চালক ধরা পড়েছে। পুলিশের দাবি, চালক জানিয়েছে, ট্রাক কেনার জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে না পারাতেই তার নম্বর প্লেটে কালো রঙ লাগানো হয়েছিল। যাতে সেটা ধরা না পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার জন্য একজন বন্দুকধারী–সহ ৯ রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছিল। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই নিগৃহীতার বন্দুকধারী রক্ষী সুরেশ বলেন, ‘‘গাড়িতে জায়গা ছিল না। তাই আমাকে বলা হয়, গাড়িতে ৫ জন রয়েছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
এই ঘটনা নিয়ে ঝড় ওঠে সংসদেও। নির্যাতিতাকে খুনের ‘চক্রান্ত’ করা হয়েছিল বলে রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে অভিযোগ তোলেন সপা সাংসদ রামগোপাল যাদব। সপা-র পাশে দাঁড়ায় বিএসপি, কংগ্রেস ও আপ-ও। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। এরপর অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। এ নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে দেখাও করবে মহিলা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল।
আরও পড়ুন: নেশা থামাতে ছেলেকে চেন দিয়ে বেঁধে রাখল বাবা-মা!
এমন কাণ্ডকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারকে আক্রমণ করেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘এক জন মহিলাকে ধর্ষণ করল এক বিজেপি বিধায়ক। পুলিশ হেফাজতে তার বাবাকেই পিটিয়ে খুন করা হল। গত বছর ঘটনার এক প্রধান সাক্ষীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার সাক্ষী নির্যাতিতার কাকিমাও মারা গেলেন এ বার। তাঁর আইনজীবীও গুরুতর জখম হয়েছেন। এরপরেও বিজেপি সরকার ফিয়ার ফ্রি ইউপি-র প্রচার চালানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যাবে।’
২০১৮ সালে প্রকাশ্যে আসে উন্নাও গণধর্ষণ কাণ্ড। জানা যায়, ২০১৭ সালের জুন মাসে চাকরি দেওয়ার নাম করে ১৬ বছরের ওই কিশোরীকে নিজের বাড়িতে ধর্ষণ করেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ জানালেও লাভ হয়নি। উল্টে মেয়েটির বাবাকেই থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষমেশ যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে যান নির্যাতিতা ও তাঁর মা। তার ঠিক পরেই থানার মধ্যে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবার। অভিযোগ, বিধায়কের ভাই অতুল সিংহ থানার মধ্যে তাঁকে পিটিয়ে খুন করেন।
বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে নিন্দা শুরু হলে কুলদীপ সেঙ্গার, তাঁর ভাই অতুল এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করে সিবিআই। শুরু হয় মামলাও। কিন্তু গত এক বছরে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিয়েছে। বরং বয়স সংক্রান্ত ভুয়ো নথিপত্র জমা দেওয়ার অভিযোগে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
আরও পড়ুন: কর্নাটকে বিজেপির ‘ওয়াপসি’, আস্থাভোটে জয়ী ইয়েদুরাপ্পা, ইস্তফা স্পিকারের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy