জেল থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। —ফাইল চিত্র।
এখনও সঙ্কট মুক্ত নন উন্নাও গণধর্ষণ-কাণ্ডের নির্যাতিতার। ‘দুর্ঘটনা’র পর ৪০ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। লখনউয়ের কিং জর্জস্ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আপাতত ভর্তি তিনি। সেখানেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা না কাটলে কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ‘দুর্ঘটনা’য় মাথা এবং পায়েও চোট পান নির্যাতিতা। তবে গুরুতর চোট পান পাঁজরে। তাতে তাঁর ফুসফুসে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যে কারণে শ্বাস নিতে পারছিলেন না তিনি। ভেন্টিলেশনে রাখার পাশাপাশি তাঁর ফুসফুস সক্রিয় রাখতে শরীরে বেশ কিছু নল ঢোকানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি নির্যাতিতা ওই তরুণীর। রক্তচাপও ওঠানামা করছে।
রবিবার রায়বরেলীর জেলে কাকার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা মারে নির্যাতিতাদের গাড়িতে। নির্যাতিতা ছাড়াও গাড়িতে সেইসময় ছিলেন তাঁর দুই কাকিমা ও পারিবারিক আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই দুই মহিলার। নির্যাতিতার পাশাপাশি হাসপাতালে ভর্তি মহেন্দ্র সিংহ। তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক।
আরও পড়ুন: উন্নাও: বিজেপি বিধায়কের নামে খুনের মামলা দায়ের
যে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন, এই ঘটনায় তাঁর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ নির্যাতিতার পরিবারের। ইতিমধ্যেই কুলদীপ সেঙ্গার, তাঁর ভাই এবং বেশ কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে খুন এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছে নির্যাতিতার পরিবার। জেলের মধ্য থেকে তিনি লাগাতার হুমকি দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নির্যাতিতার মা ও কাকা।
নির্যাতিতার মায়ের কথায়, ‘‘কুলদীপ সেঙ্গার এবং তাঁর সহযোগীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। জেলের মধ্যেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন উনি। নিজে জেলে রয়েছেন বটে, কিন্তু ওঁর লোকজন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । সকলে মিলে লাগাতার হুমকি দিচ্ছিলেন আমাদের।’’‘দুর্ঘটনা’য় নিহত স্ত্রীর শেষকৃত্যের জন্য এক দিনের প্যারোলে রায়বরেলী জেল থেকে বেরিয়েছেন নির্যাতিতার কাকা মহেশ সিংহ। এফআইআর-এ তিনি জানান, ধর্ষণের অভিযোগ করতে গেলে শুরুতেই তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। প্রভাবশালী বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে তাদের চাকরি যেতে পারে। তাই নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেওয়া উচিত।
সমালোচনার মুখে পড়ে পরবর্তী কালে কুলদীপ সেঙ্গারকে গ্রেফতার করা হলেও, জেলের মধ্য থেকেই কুলদীপ সেঙ্গার ফোনে তাঁদের লাগাতার হুমকি দিতেন বলে দাবি মহেশ সিংহের। তাঁর কথায়, বিজেপি বিধায়ক ফোনে বলতেন, প্রাণ বাঁচতে চাইলে বয়ান পাল্টে ফেলতে হবে গোটা পরিবারকে। এ ব্যাপারে সরকার তাদের পাশে রয়েছে, তাই কিচ্ছুটি করতে পারবেন না নির্যাতিতা, এমন হুমকি দিত কুলদীপ সেঙ্গারের শাগরেদরাও।
নির্যাতিতার এক বোন জানান, ‘‘লাগাতার হুমকি পেয়ে চলেছি আমরা। বাইরে বেরোলে আমার পিছু নেওয়া হয়। কুলদীপ সিংহ সেঙ্গারের এক শাগরেদ নবীন সম্প্রতি কাকিমাকে হুমকি দেয় যে, আমাদের ভয়ঙ্কর ফল ভুগতে হবে। পুলিশও মিটমাট করে নিতে বলত সারা ক্ষণ।’’
আরও পড়ুন: উন্নাও নিয়ে সরব রাহুল-প্রিয়ঙ্কারা
নির্যাতিতার পরিবার জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয় ইলাহাবাদ আদালত। তার পর থেকে হুমকি আরও বেড়ে গিয়েছিল। যা নিয়ে গত ১২ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে চিঠি লিখেছিলেন নির্যাতিতা স্বয়ং। হুমকির একটি ভিডিয়ো রেকর্ডিংও রয়েছে বলে জানিয়ে তাতে তিনি লেখেন, ‘‘বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। মামলা না তুলে নিলে ভুয়ো মামলায় পরিবারের সকলকে জেলে পোরার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ চিঠিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানান তিনি। এর পর ১৩ জুলাই উন্নাও পুলিশকে চিঠি লেখেন নির্যাতিতার মা-ও। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় সপরিবারের উন্নাও থেকে দিল্লি চলে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল পরিবারে। তার মধ্যেই এই ঘটনা।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। এ দিন লোকসভায় তা নিয়ে হই হট্টগোলও হয়। সেখানে শাসকদলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস, তৃণমূল, বিএসপি এবং ডিএমকে। লোকসভার মধ্যেই ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দেয় তারা। পরে ওয়াকআউটও করে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃত ভাবে কুলদীপ সেঙ্গারকে আড়াল করছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘জেলে কুলদীপ সেঙ্গারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন বিজেপির সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। এতেই দলের অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যায়। অভিযুক্তকে শুরু থেকে আড়াল করে আসছে তারা। সুপ্রিম কোর্টের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।’
অন্য দিকে, নির্যাতিতা, তাঁর পরিবার, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি, তদন্তকারী আধিকারিক এবং এসএসপির সঙ্গে কথা বলতে ইতিমধ্যেই লখনউ পৌঁছেছে জাতীয় মহিলা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে কথা হলেও, চিকিৎসকদের আপত্তিতে এখনও পর্যন্ত নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা হয়নি তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy