প্রতীকী চিত্র।
প্রথম বার দিল্লির মসনদ দখলের লক্ষ্যে বছরে দু’কোটি কাজের সুযোগ তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউপিএ সরকারের প্রায় শেষ বেলা (২০১১-১২) থেকে তাঁর প্রথম দফার শেষ দিকের (২০১৮-১৯) মধ্যেই শহরে অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে বেকারত্বের হার। গ্রামে প্রায় তিন গুণ। করোনা আর লকডাউনে বহু কর্মী কাজ খোয়ানোর পরে এই ফারাক এখন আরও চওড়া হওয়ার আশঙ্কা সাম্প্রতিক বেসরকারি পরিসংখ্যানে।
দেশের সার্বিক ছবির তুলনায় সামান্য ভাল হলেও, রাজনৈতিক পালাবদলের পরে কর্মহীনের সংখ্যা বেড়েছে বঙ্গেও। আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯-১০ সালে বঙ্গের গ্রাম-শহরে যেখানে প্রতি হাজার জনে যথাক্রমে ১৯ ও ৪০ জন কর্মহীন ছিলেন, সেখানে এখন ওই সংখ্যা ৩৫ ও ৪৯।
২০১৪ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে ভোট-প্রচারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কার্যত তুলোধোনা করতেন নরেন্দ্র মোদী। নিয়ম করে প্রায় প্রতি জনসভায় দাবি করতেন, ইউপিএ সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব এবং দুর্নীতির কারণেই ৮ শতাংশ ছুঁতে পারছে না বৃদ্ধির হার। ইঙ্গিত দিতেন, তিনি হাল ধরলে, মুখ তুলবে অর্থনীতি। সেই সঙ্গে, স্বপ্ন দেখাতেন ফি বছর দু’কোটি নতুন চাকরিরও। কিন্তু শীর্ষ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১১-১২ সালে গ্রামে প্রতি হাজার জনে কর্মহীন ছিলেন ১৭ জন। শহরে ৩৪। সেখানে ২০১৮-১৯ সালে তা হয়েছে যথাক্রমে ৫০ এবং ৭৭ জন! গ্রাম-শহর অথবা পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে লাফিয়ে বেড়েছে বেকারত্ব। বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী যে তাঁর জমানায় তা হলে এত দেশি-বিদেশি লগ্নি আসার কথা বলেন, দাবি করেন অর্থনীতির প্রগতির, কাজের বাজারে তার প্রতিফলন কোথায়? জাতীয় নমুনা সমীক্ষার (এনএসএসও) তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ কিংবা ২০১৮-১৯ সালে বেকারত্বের চড়া হারের খবর নতুন নয়। গত প্রায় সাড়ে চার দশকে প্রথমটি সর্বোচ্চ হওয়ায়, তা নিয়ে আগেও বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। কিন্তু সেই তথ্যের ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সঙ্কলিত পরিসংখ্যান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, বৃদ্ধির হারের মতো কাজের সুযোগ তৈরিতেও মনমোহন জমানার থেকে বহু যোজন পিছিয়ে মোদী সরকার।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মোদী জমানায় কাজের বাজারের এমন করুণ ছবির অন্যতম কারণ নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর দীর্ঘ মেয়াদি ধাক্কা। তাঁদের ধারণা, ওই ছবিকে আরও বিবর্ণ দেখাত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ধরা হলে। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা ও লকডাউনের ‘সাঁড়াশি চাপে’ এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে দেশে বাঁধা বেতনের চাকরি গিয়েছে ২.১ কোটি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের অবস্থা তথৈবচ। কাজ খুইয়েছেন অগুনতি কর্মী। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখেছে সারা দুনিয়া।
এই বিপুল সংখ্যক কাজ যাওয়ার ঘটনা পরে সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে এলে, তখন কি কাজের সুযোগ তৈরিতেও ‘মুখর’ মোদীর তুলনায় আরও চকচকে দেখাবে ‘মৌন’ মনমোহনের ট্র্যাক রেকর্ডই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy