কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
প্রায়শই উপত্যকায় জঙ্গি হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় পণ্ডিত বা শিখ সমাজের সদস্যেরা। তা সত্ত্বেও কাশ্মীর-সহ দেশে সন্ত্রাসের যে সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রগুলি (হটস্পট) সক্রিয় ছিল সেগুলি গত আট বছরে সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ দিল্লিতে জাতীয় পুলিশ স্মৃতি দিবস অনুষ্ঠানে কাশ্মীর প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, উপত্যকায় যে যুবকেরা আগে সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তেন, তাঁরা এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সরপঞ্চ বা পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে এলাকার উন্নতিতে কাজ করছেন। পরে দিল্লিতেই হওয়া ইন্টারপোল সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে ‘ভাল সন্ত্রাসবাদী’ আর ‘খারাপ সন্ত্রাসবাদী’ বলে কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাস দমনের আগে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীর সংজ্ঞা কী হওয়া উচিত সে প্রশ্নে সব দেশের একমত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’’
আজ সকালে দিল্লির চাণক্যপুরী এলাকায় পুলিশের অনুষ্ঠানে শাহ দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদী সরকারের গত আট বছরের শাসনকালে কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব ও মাওবাদী সন্ত্রাস অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আট বছর আগে যে এলাকাগুলিকে সন্ত্রাসের গড় হিসেবে ধরা হত, সরকারের নীতির কারণে আজ সেই এলাকাগুলি সন্ত্রাসমুক্ত হতে সক্ষম হয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে মানুষের জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে।’’
শাহের মতে, আট বছর আগে তাঁদের সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের প্রশ্নে তিনটি বড় সমস্যা ছিল। প্রথমত, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদ। সেই প্রসঙ্গে শাহ বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে থাকা বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে সেই এলাকার যুবকদের ক্ষমতায়নের পথে সরকার হাঁটায় বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে।’’ যদিও সরকারের একটি অংশের মতে, নাগা চুক্তি না হওয়া, সীমানা নিয়ে রাজ্যেগুলির মতপার্থক্য ছাড়াও ওই এলাকায় এখনও একাধিক জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। শাহ উত্তর-পূর্ব ভারত শান্ত বলে দাবি করলেও, প্রকৃত শান্তি ফেরাতে এখনও অনেকটা পথ হাঁটার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
আজ নিজের বক্তব্যে দ্বিতীয় সাফল্য হিসেবে মাওবাদী দমনের বিষয়টি তুলে ধরেন শাহ। সরকারের দাবি, গত আট বছরে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীদের উৎখাত করা সম্ভব হয়েছে। ওড়িশা ও মহারাষ্ট্রে মাওবাদীদের সক্রিয়তা কমে এসেছে। একমাত্র ছত্তীসগঢ়ের কিছু অংশে মাওবাদীদের উপস্থিতি রয়ে গিয়েছে। শাহের বক্তব্য, ‘‘এক সময়ে যে এলাকাগুলিতে মাওবাদীদের প্রাধান্য ছিল আজ সেখানকার স্কুলে ভারতের পতাকা তোলা সম্ভব হয়েছে।’’
আর জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বলতে গিয়ে শাহ দাবি করেন, ‘‘যে যুবকেরা এক সময়ে প্রশাসন ও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাথর তুলে নিয়েছিলেন তাঁরাই এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে কেউ সরপঞ্চ, কেউ বা পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে স্থানীয় এলাকার উন্নয়নে শামিল হয়েছেন।’’
জম্মু-কাশ্মীরে বড় মাপের জঙ্গি হামলা আগের চেয়ে কমলেও কিছু দিন অন্তরই উপত্যকায় বেছে বেছে স্থানীয় পণ্ডিত ও শিখ সমাজের ব্যক্তিদের উপরে হামলা চালিয়ে অস্থিরতা তৈরি করে রেখেছে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা। জঙ্গিদের নিশানার শিকার হয়েছেন ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরাও। ফলে অমিত শাহ উপত্যকায় শান্তি ফেরার দাবি করলেও, বস্তুত কী ভাবে ওই ‘ব্যক্তিহত্যা’ বন্ধ করা সম্ভব সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন যে কার্যত দিশাহীন তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারাও। তা ছাড়া কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সময় থেকেই উপত্যকাকে নিরাপত্তাবাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সেই বাহিনী প্রত্যাহার করে নিলে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তা নিয়েও সরকারের অন্দরমহলেই প্রশ্ন রয়েছে।
দিল্লিতে হওয়া ইন্টারপোলের ৯০তম অধিবেশনের আজ ছিল শেষ দিন। অধিবেশনের শেষে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরব হন অমিত শাহ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাস রোখার প্রশ্নে একটি আন্তর্জাতিক রণকৌশল তৈরির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আজ সেই সূত্র ধরেই শাহ বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। যা কোনও দেশের সীমান্তের গন্ডিতে আটকে নেই। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস রোখার প্রশ্নে তাই প্রয়োজন আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা।’’ বিভিন্ন দেশের মধ্যে সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রশ্নে ইন্টারপোলের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু শাহের মতে, ওই সহযোগিতা গড়ে তোলার আগে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা কী, সেই প্রশ্নে সকলের আগে একমত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
শাহের কথায়, ‘‘অনেকে ভাল সন্ত্রাসবাদী আর খারাপ সন্ত্রাসবাদীর তত্ত্ব দিয়ে থাকেন। অনেকে বড় সন্ত্রাস ও ছোট সন্ত্রাসের পার্থক্য করে থাকেন। ওই পার্থক্য করার অর্থই সন্ত্রাসবাদ দমনে আপস করা।’’ স্বরাষ্ট্র কর্তাদের বক্তব্য, ভারতে সন্ত্রাসের কাজে লিপ্ত থাকা পাক মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের দমনে ইসলামাবাদের গা-ছাড়া মনোভাব, রাষ্ট্রপুঞ্জে পাক জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণার প্রশ্নে চিনের বাগড়া দেওয়ার বিষয়টি যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদ দমনের পরিপন্থী তা ইন্টারপোলের মঞ্চ থেকে নিজের বক্তব্যে বোঝাতে চেয়েছেন শাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy