—ফাইল চিত্র।
সংক্রমণ ও মৃত্যু, দুইয়ের নিরিখেই দেশের মধ্যে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। একজোটে তা সামাল দেওয়ার বদলে, মন্দির খোলা নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার এবং রাজ্যপালের মধ্যে সঙ্ঘাত অব্যাহত। লকডাউন উঠে যাওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে একাধিক মন্দিরের দরজা বন্ধ, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপাল ভগত সিংহ কোশিয়ারি। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘হঠাৎ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গেলেন নাকি’? জবাবে উদ্ধব জানিয়েছেন, ‘আপনার কাছ থেকে হিন্দুত্বের সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজন নেই’।
মন্দির খুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে সোমবার উদ্ধবকে চিঠি লেখেন রাজ্যপাল কোশিয়ারি। তিনি লেখেন, ‘এত দিন হিন্দুত্বের প্রতি নিবেদিত ছিলেন আপনি। ভগবান রামের প্রতি গভীর অনুরক্তির কথা জানাতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে অযোধ্যাও গিয়েছিলেন। পান্ধারপুরে বিট্টল রুক্মিণীর মন্দিরে গিয়ে আষাঢ়ি একাদশীর পুজোও করেছিলেন। জানি না কোনও ঐশ্বরিক নির্দেশে মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত বার বার পিছিয়ে দিচ্ছেন কিনা। নাকি হঠাৎই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গিয়েছেন, যে শব্দটা চিরকাল ঘৃণা করে এসেছেন’?
অন্যান্য জায়গায় জুন মাসেই মন্দির খুলে দেওয়া হয় এবং তার জন্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কোনও ঘটনা এখনও পর্যন্ত সামনে আসেনি বলেও দাবি করেনি কোশিয়ারি। হোটেল, রেস্তরাঁ, পানশালা এবং সমুদ্র সৈকতে যেখানে অবাধ যাতায়াত মানুষের, সেখানে মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখা হচ্ছে কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
আরও পড়ুন: হাথরসের নির্যাতিতার মা-ভাইকে নিয়ে বাজরার ক্ষেতে সিবিআই, শুরু তদন্ত
জবাবে মঙ্গলবার রাজ্যপালকে পাল্টা চিঠি দেন উদ্ধব। তাতে লেখেন, ‘আপনার কাছ থেকে হিন্দুত্বের সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি কোনও ঐশ্বরিক নির্দেশ পান কিনা জানতে চান? আপনি হয়ত সে সব পান। আমি অত কেউকেটা নই’। কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়েও রাজ্যপালকে বেঁধেন উদ্ধব। তিনি লেখেন, ‘মুম্বইকে যাঁরা পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে তুলনা করেন, বাড়িতে ডেকে তাঁদের সঙ্গে গল্প করার লোক নই আমি। যাঁরা তা করেন, তাঁদের সঙ্গে আমার হিন্দুত্বের সংজ্ঞা মেলে না।’
মন্দির খোলার সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনও সম্পর্ক নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন উদ্ধব। তাঁর কথায়, ‘মন্দির খুলে দেওয়া বা তা বন্ধ রাখার সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনও যোগ নেই। আপনি যে সংবিধানে হাত রেখে শপথ নিয়েছেন, তাতেও ধর্মনিরপেক্ষ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। আপনি কি তা ভুলে গিয়েছেন? নাকি জেনে শুনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে খারিজ করছেন’? আচমকা লকডাউনের সিদ্ধান্ত যেমন ভুল ছিল, তেমনই সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে আচমকা সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়াও ভুল হবে বলেও মন্তব্য করেন উদ্ধব।
মন্দির খোলা নিয়ে রাজ্যপালের চিঠির সমালোচনা করেন শিবসেনা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও। একের পর এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘সংবিধানে হাত রেখে চেয়ারের মর্যাদা রক্ষার শপথ নেন রাজ্যপাল। কিন্তু এখন দেখছি সংবিধান মেনে চলতেই সমস্যা হচ্ছে রাজ্যপালের। উনি কি বিজেপি সদস্য হিসেবে চিঠিটি লিখেছেন? ওঁর ওই চিঠির বিষয়বস্তু কি রাষ্ট্রপতি সমর্থন করেন? রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছে অনুরোধ, রাজ্যপালকে বোঝান, সাংবিধানিক দায়িত্বপালনে বাধ্য উনি, বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কথা বলতে নয়’। মরাঠি ভাষায় লেখা উদ্ধবের চিঠিটি পোস্ট করে রাজ্যপালকে বিরোধী দলের মুখপাত্রের মতো আচরণ না করার পরামর্শও দেন তিনি।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ৩ দলিত মেয়ের উপর অ্যাসিড হামলা, প্রশ্নে যোগীর প্রশাসন
মহারাষ্ট্রে শিবসেনার শরিক কংগ্রেস। তাদের কর্নাটকের বিধায়ক দীনেশ গুন্ডু রাও টুইটারে লেখেন, ‘রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি আসলে বিজেপির হাতের পুতুল। সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষ অবস্থানের কথাই বলা হয়েছে। আপনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। সেই মতো আচরণ করুন। উদ্ধব ঠাকরেকে ওই চিঠি লেখা উচিত হয়নি আপনার।’
পশ্চিমবঙ্গের পর মহারাষ্ট্রই এমন একটি অবিজেপি শাসিত রাজ্য, যেখানে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল। ধর্মীয় স্থানগুলির উপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পক্ষে, এর আগে বিজেপি বিরোধী শিবিরের লোকজনকেও সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, প্রকাশ অম্বেডকর এবং রাজ ঠাকরে। কিন্তু সোমবার মহারাষ্ট্রে মন্দির খোলার দাবিতে বিজেপি নেতারা যখন আন্দোলনে শামিল, সেইসময় উদ্ধবকে লেখা ওই চিঠি কি বিজেপির প্রতি সমর্থনের পরিচায়ক নয়, মায়ানগরীর রাজনীতিতে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।
মন্দির খোলা নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি, তবে কী ভাবে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা বিবেচনা করে দেওয়ালির আগে শর্তসাপেক্ষে মন্দির খুলে দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy