Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
U.S Presidential Election 2020

বিরাট বদল হবে না দু’দেশের সম্পর্কে

একটা সময় তো প্রত্যেক দিনই কথা হত। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, উনি কোনও ক্ষেত্রেই সংঘাত বা সংঘর্ষ তৈরিতে বিশ্বাস করেন না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

রণেন সেন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫০
Share: Save:

নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্বগ্রহণ করার পরে ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্কে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে যাবে, ব্যাপারটা আদৌ সে রকম কিছু নয়। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি যে কৌশলগত কক্ষপথে এগোচ্ছে, তা হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা বদলে রাতারাতি প্রভাবিত হওয়ার নয়। বরং আমি তো বলব, এই সম্পর্কের এমন একটি সম্ভাবনাময় মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, যেখানে অতীতের অভিজ্ঞতার সাহায্য নিয়ে বর্তমানের ওঠাপড়াকে এখন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনকি ভবিষ্যতের আঁচ পাওয়াও সম্ভব।

ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে কাজ করার সময় জো বাইডেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল আমার। একটা সময় তো প্রত্যেক দিনই কথা হত। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, উনি কোনও ক্ষেত্রেই সংঘাত বা সংঘর্ষ তৈরিতে বিশ্বাস করেন না। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কেতাবি ভিত্তিতে চলতে পছন্দ করেন। বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলার পক্ষপাতী। আমার ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় অভিবাসন নীতিতে যে ভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে, তার থেকে সামান্য হলেও কিছুটা পরিবর্তন আসবে।

ভিসা দেওয়ার প্রশ্নে আগের জমানার তুলনায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকেন, বাইডেন আসার পরে বহু প্রতীক্ষিত ‘টোটালাইজেশন এগ্রিমেন্ট’ সই হবে, সেটা ঠিক নয়। সেটা হবে না। ও দেশে ভিসা নিয়ে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয়দের টাকা কাটা হয় সেখানকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ কম থাকার জন্য ওই প্রকল্পের সুবিধা ভারতীয়রা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পান না (অন্তত ৮ থেকে ১০ বছর টানা না থাকলে তা পাওয়া যায় না)। ভারত চাইছে এই নীতির পরিবর্তন করতে এবং আমেরিকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মধ্যেই এটি অন্তর্ভুক্ত করতে।

আরও পডুন: কুপোকাত হল বিভাজনের রাজনীতি, স্বস্তি​

বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা মতো শর্তে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগ আগে অপেক্ষাকৃত অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসেছিল। কিন্তু পৃথিবী এখন অনেক বদলে গিয়েছে। দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি আমেরিকান কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত হতে হলে এখন তাকে আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্যচুক্তির শর্তগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এইচওয়ান-বি ভিসা হোক বা মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি — প্রয়াস অনুযায়ী যদি বাস্তবে ফলাফল না দেখা যায়, তা হলে তার পিছনে কতটা রাজনৈতিক শক্তি ব্যয় করা হবে, সেটাও বিচার্য বইকি। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে শ্রমিক আইন, তার পরিবেশনীতি, সরকারি বরাতের ক্ষেত্রে বিদেশি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য কতটা দরজা খোলা — এই বিষয়গুলি এ বার খতিয়ে দেখা হবে।

আরও পডুন: কমলার জয়ে উৎসব তামিলনাড়ুর গ্রামে​

আফগানিস্তান অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও বাইডেন জমানা ভারতকে একই রকম গুরুত্ব দেবে বলে আমার বিশ্বাস। সে কারণে ট্রাম্পের সময় চাবাহার বন্দরে ভারতের বিনিয়োগ এবং পরিচালনা নিয়ে যে ভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছিল, বাইডেনের ক্ষেত্রে তার অন্যথা হবে না। আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে যে ভারতের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে, সে কথা স্বীকার করে আমেরিকা।

আমেরিকা এবং অন্য কৌশলগত মিত্র রাষ্ট্রগুলির নেতা যিনিই থাকুন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত নিজেদের ক্ষমতার জায়গাগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করা। যাতে সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তা কাজে লাগানো যায়। আমাদের স্বার্থের পাশাপাশি ওই দেশটির স্বার্থকেও জড়িয়ে নেওয়া যায়।

(আমেরিকায় ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy