ফাইল চিত্র।
করোনার প্রতিষেধক নেওয়ার পরে ইতিমধ্যেই দেশে মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে গত সপ্তাহে বৈঠক বসেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এইএফআই (অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজ়েশন) কমিটি। সেই কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়ে দিল, এঁদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রতিষেধক দায়ী নয়। অন্য অসুস্থতার কারণেই তাঁদের মৃত্যু ঘটেছিল।
গত পঁচিশ দিন ধরে দেশে গণ-টিকাকরণ অভিযান চালু রয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রতিষেধক পেয়েছেন প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনের মৃত্যু ছাড়াও অনেকের অসুস্থ হওয়ার তথ্য জমা পড়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে। তা খতিয়ে দেখতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসেছিল এইএফআই কমিটি।
আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ জানান, ওই কমিটি গত সপ্তাহে পাঁচটি ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। তার মধ্যে দু’টি মৃত্যু ও তিন জনের প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনা রয়েছে। যদিও অসুস্থ ওই তিন জন প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তিন জনের মধ্যে দু’জনের অ্যালার্জি দেখা দিয়েছিল, প্রতিষেধক নেওয়ার পরে যা অনেক সময়েই হয়ে থাকে। তৃতীয় জন প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। উত্তেজনা, স্নায়ুর চাপের কারণেও এ ধরনের ঘটনা অনেক সময়ে হয়ে থাকে বলে আজ দাবি করেছেন স্বাস্থ্যসচিব।
দু’জনের মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছে, এক জন মারা গিয়েছেন হৃদ্যন্ত্রজনিত সমস্যায়। আর দ্বিতীয় জন দীর্ঘ সময় ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। তা থেকেই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। স্বাস্থ্যসচিবের দাবি, দু’টি মৃত্যুর সঙ্গেই প্রতিষেধক নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই বলে বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন। বাকি যে তিন জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের হিস্টোপ্যাথোলজি ও কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ওই কমিটি। তা বিশ্লেষণ করে ওঁদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা সম্ভব হবে।
গত ১৬ জানুয়ারি যাঁরা প্রথম টিকা নিয়েছিলেন, হিসেবমাফিক আঠাশ দিন পরে, অর্থাৎ আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় নিতে চলেছেন। কিন্তু প্রথম ধাপে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও বেশ অনেকটাই দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ প্রতিষেধক প্রত্যাখ্যানের রাস্তায় হাঁটায় ক্ষুব্ধ নরেন্দ্র মোদী সরকার।
বিষয়টি নিয়ে কার্যত অসন্তোয প্রকাশ করে আজ রাজেশ ভূষণ জানান, বারবার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য টিকাকরণের দিন বদলানো সম্ভব নয়। সব রাজ্যকে তাই আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার কাজ সেরে ফেলতে বলা হয়েছে। রাজ্যগুলির মধ্যে টিকাকরণের পরিসংখ্যানে এগিয়ে রয়েছে বিহার ও ত্রিপুরা। দু’রাজ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে টিকাকরণের হার যথাক্রমে ৭৮.১ শতাংশ ও ৭৭.১ শতাংশ। অন্য দিকে টিকাকরণ সবচেয়ে কম হয়েছে পুদুচেরিতে। সেখানে গত পঁচিশ দিনে মাত্র ১৫.৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিষেধকের আওতায় এসেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, দ্রুত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ সেরে ফেলার পক্ষপাতী সরকার। কারণ, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের টিকাকরণ হয়ে গেলেই মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বয়স্কদের টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করতে চায় সরকার। তাই হাতে রয়েছে মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময়। তার মধ্যে এক কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও দু’কোটি ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারকে প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শেষ সেরে ফেলতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
আজ নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পল বলেন, ‘‘২৭ কোটি প্রবীণ মানুষের টিকাকরণের পরেই প্রতিষেধক বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হবে সংস্থাগুলিকে।’’ বর্তমানে দু’টি প্রতিষেধক ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি-ও চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়ে যাবে বলেই মত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy