মণিপুরে সিআরপিএফের নজরদারি। ছবি: পিটিআই।
ভোটপর্ব মিটতেই আবার অশান্ত হয়ে উঠল মণিপুর। শুক্রবার গভীর রাতে বিষ্ণুপুর জেলার নারানসেনায় জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফের দুই জওয়ান। গুলি এবং গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর জখম চার জন। নতুন করে অশান্তি শুরু হতেই মণিপুর জুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিষ্ণুপুরে নতুন করে শুরু হয়েছে তল্লাশি অভিযান।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত সওয়া ২টো নাগাদ কুকি জঙ্গিদের একটি দল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গ্রেনেড নিয়ে নারানসেনা ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তাদের নিশানায় ছিল ফাঁড়ি লাগোয়া ব্যারাকটিও। সেখানে ছিলেন সিআরপিএফের ১২৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানেরা। গভীর রাতের অতর্কিত জঙ্গি হানায় তাঁরা আহত হন। এর আগে গত ডিসেম্বরে মোরেকে ফাঁড়িতে একই কায়দায় ভোররাতে হামলা চালিয়েছিল কুকি জঙ্গিরা। প্রসঙ্গত, শুক্রবার হিংসাদীর্ণ আউটার মণিপুর লোকসভা কেন্দ্রের একাংশে ভোট ছিল।
চলতি মাসের গোড়া থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কয়েক জন জঙ্গি নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সহায়তায় কেএনএফ জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত প্রায় দুশো জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
পরবর্তী সময়ে ইম্ফল হাই কোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শান্তি ফেরেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। কারণ মেইতেইদের মনে তৈরি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। তাদের অভিযোগ, জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে মেইতেইরা। এখন জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় তারা ওই জমি কিনতে পারে না।
অন্য দিকে, মেইতেইদের দাবি, ১৯৪৯ সালে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মণিপুর সংযুক্ত হওয়ার আগে তাঁরা জনজাতি হিসাবে গণ্য হতেন। কিন্তু সংযুক্তিকরণের পর সেই পরিচয় হারান তাঁরা। ফলে জনজাতি জমির অধিকার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচও হারিয়েছেন। যে কারণে আজ নিজভূমেই কোণঠাসা তাঁরা। ১৯৫২ সালে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ যেখানে মেইতেই ছিল, ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তা ৪৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy