মিলিন্দ দেওরা (বাঁ দিকে) এবং রাহুল গান্ধী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দশ বছর আগে দেশের ক্ষমতা হারিয়েছিল কংগ্রেস। তার পর সাংগঠনিক দুর্বলতা ছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে ক্রমশ শক্তি কমেছে কংগ্রেসের। দলের দুর্দিনে কংগ্রেসের হাত ছেড়ে গিয়েছেন অনেক প্রবীণ এবং নবীন নেতা। রবিবারই যেমন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা, অধুনা প্রয়াত মুরলী দেওরার পুত্র মিলিন্দ কংগ্রেসের সঙ্গে প্রায় পাঁচ দশকের পারিবারিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক চুকিয়ে শিবসেনায় যোগ দিলেন।
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে কপিল সিব্বল ২০২২ সালের ১৬ মে দল ছাড়েন। কংগ্রেসে থাকার সময় কপিল দলের অন্দরে গান্ধী পরিবার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে দল ছেড়ে ছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে দল ছেড়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে রাজ্যসভার নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। অখিলেশ সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) কপিলকে সমর্থন করে। সংসদের উচ্চকক্ষে নির্বাচিত হওয়ার পর বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক জানান, তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেস ছাড়েননি তিনি। ভবিষ্যতে কোনও দলে যোগ দেওয়ার জল্পনাও খারিজ করে দেন তিনি।
২০২২ সালে কংগ্রেস ছাড়েন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজ়াদ। কংগ্রেসে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রবীণ নেতাদের সেই সময় ‘জি-২৩ গোষ্ঠী’ বলা হত। এই গোষ্ঠীরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আজ়াদ। দল পরিচালনা নিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা ইস্তফাপত্রে উগরে দেন তিনি। তৈরি করেন নিজের দল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আজ়াদ পার্টি।
ওই একই বছরের মে মাসে পাটিদার আন্দোলনের হাত ধরে জাতীয় রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন হার্দিক পটেল। ইস্তফাপত্রে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এবং গুজরাত প্রদেশ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। ২০২২ সালেরই ফেব্রুয়ারি মাসে পঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে দল ছাড়েন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার।
২০২২ সালে পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সুনীল জাখর দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চন্নীর সমালোচনা করার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর কৈফিয়ত তলব করে। তার পরই দল ছাড়েন বলরাম জাখরের পুত্র সুনীল। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরপিএন সিংহ বিজেপিতে যোগ দেন। শোনা গিয়েছিল, প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রচার কৌশল নিয়ে মতান্তরের জেরেই কংগ্রেসের হাত ছাড়েন অনগ্রসর শ্রেণির এই নেতা।
২০২০ সালে কংগ্রেস ছাড়েন গোয়ালিয়র রাজপরিবারের ‘মহারাজা’ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। রাহুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেস ছাড়েন অমরিন্দর সিংহ। দল ছাড়ার নেপথ্য কারণ হিসাবে বোঝাপড়ার অভাবকে দায়ী করেন পঞ্জাব রাজনীতির ‘ক্যাপ্টেন’। পঞ্জাবের দীর্ঘ দিনের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস ছেড়ে তৈরি করেন নিজের দল পঞ্জাব লোক কংগ্রেস। পরে অবশ্য তাঁর দলকে বিজেপির সঙ্গে মিশিয়ে দেন অমরিন্দর। ২০২১ সালে দল ছা়ড়েন একদা রাহুল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতিন প্রসাদ। উত্তরপ্রদেশে জিতিনকে দলের ব্রাহ্মণ মুখ হিসাবে তুলে ধরে উচ্চবর্ণর ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনার একটি পরিকল্পনা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু বিজেপিকে দেশের এক মাত্র ‘আসল’ দল বলে অভিহিত করে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন জিতিন।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে লোকসভা ভোটের পরেই কংগ্রেস ছাড়েন কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক অল্পেশ ঠাকোর। রাজ্যসভা ভোটে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কিছু দিন দলহীন অবস্থায় থেকে পরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। দলছুটদের তালিকায় রয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা ইউপিএ আমলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনির পুত্র অনিল অ্যান্টনিও। ২০১৯ সালে দল ছাড়েন তিনি। ছেলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যেই নিজের বিরক্তির কথা জানান প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
মিলিন্দের দল ছাড়ার কারণ হিসাবে একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে মুম্বইয়ের রাজনৈতিক মহলে। প্রয়াত পিতার যে দক্ষিণ মুম্বই লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি লড়েন, সেখানে গত দুই লোকসভা ভোটেই দেওরা ধরাশায়ী হয়েছেন শিবসেনা (ইউবিটি) প্রার্থী অরবিন্দ সাওয়ান্তের কাছে। অরবিন্দ শিবসেনার উদ্ধব শিবিরের নেতা। ফলে জোট সমীকরণ মেনেই আসন্ন লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে দেওরার ছেলের টিকিট পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই না কি একনাথ শিন্ডের শিবসেনায় যোগ দিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy