মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার (এ বার ভোটে লড়ছেন না), কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, তিপ্রা প্রধান প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।
রাত পোহালেই ত্রিপুরার বিধানসভা ভোট। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় সব রকমের পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোট, তৃণমূল এমনকি জনজাতি দল তিপ্রা মথাও শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে সন্ত্রাসের পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ত্রিপুরার ৬০টি আসনের সব ক’টিতেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে। গণনা আগামী ২ মার্চ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য দুই রাজ্য মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের সঙ্গে।নজরকাড়া প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা (বিজেপি), সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
গত বছরের জুন মাসে রাজ্যের চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিরোধীরা জোট বাঁধলে সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি। এর পর আংশিক বিরোধী ঐক্য হয়েছে। একদা প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ১৩টি এবং নির্দল প্রার্থীকে ১টি আসন ছেড়ে ৪৬টিতে লড়ছে বামেরা। কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত বাঙালি প্রভাবিত ৪০টি আসনে বিজেপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বাম-কংগ্রেস জোটের। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা বুধবার বলেন, ‘‘এ বার আমরা বিরোধীশূন্য বিধানসভার অপেক্ষায় রয়েছি।’’
ত্রিপুরার ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে স্বশাসিত জনজাতি পরিষদের (এডিসি) এলাকায়। সেখানে বিজেপি এবং তার সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিপুরার রাজ পরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের দল তিপ্রা মথা। ভোট প্রচারের সময় প্রদ্যোত দাবি করেছেন, কোনও শিবিরই গরিষ্ঠতা পারে না। সে ক্ষেত্রে তিপ্রাই ‘কিং মেকার’ হতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ।
যদিও বাঙালি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ। মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ত্রিপুরায় লড়তে নেমেছে তৃণমূল। প্রচারে গিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। ২০২১ সালের নভেম্বরের পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু গত জুনে চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে দলে ভোট অনেকটাই কমে যায়।
২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা দল গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ। দলের জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা, এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।
২০১৮-র বিধানসভা ভোটে ৩৬টি আসনে জিতে একাই গরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি। সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটি জিতেছিল ৮টিতে । আড়াই দশক শাসন চালানোর পরে মাত্র ১৬টি বিধানসভা আসনে জয় পায় বামেরা। গত জুনের উপনির্বাচনে হাতছাড়া হয় আরও একটি আসন। অন্য দিকে, ওই উপনির্বাচনে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রটি বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন। এ বার আইপিএফটির জন্য মাত্র ৫টি আসন ছেড়েছে বিজেপি।
এর পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ত্রিপুরার দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ ভোট। ২৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দু’টি আসনেই দ্বিতীয় হয়েছিল কংগ্রেস। ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বামেরা। রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫১টিতে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। ৯টিতে কংগ্রেস। ২০১৮ পর্যন্ত ত্রিপুরায় ক্ষমতায় থাকা বামেরা ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের হিসাবে রাজ্যের একটি বিধানসভা আসনেও এগিয়ে নেই!
১৯৮৮-তে সিপিএম এ রাজ্যে হেরেছিল কংগ্রেস-টিইউজেএস জোটের কাছে। ১৯৯৩ সালে তারা আবার ক্ষমতায় ফেরে। তার পর থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর সিপিএমকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে বিজেপি ‘ঝড়ে’ পতন ঘটে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার ভোটে প্রার্থীই হননি মানিক। অন্য দিকে, রাজ্যের প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবও এ বার ভোটে লড়ছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy