ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: পিটিআই।
বছরের শেষ দিন মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানালেন রাজ্যসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের দুই শীর্ষ নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং সুখেন্দুশেখর রায়। নব্বই বছর আগে নাৎসি জার্মানিতে সংসদকে অকেজো করে বিল পাশ করানোর প্রসঙ্গ তুলে তার সঙ্গে সদ্য ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কার করে দণ্ডসংহিতা বিল পাশ করানোর তুলনা টানলেন সুখেন্দুশেখর। অন্য দিকে ইংরেজি বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণ তুলে বছরের সালতামামি করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর সরকারকে বিঁধলেন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ ডেরেক।
প্রসঙ্গত, দেড় বছর আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অ্যাডল্ফ হিটলারের তুলনা করে ঘোর বিতর্ক তৈরি করেছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুবোধকান্ত সহায়। বলেছিলেন, ‘‘মোদীর পরিণতি হবে হিটলারের মতো।’’ সুখেন্দুশেখরবাবু অবশ্য সরাসরি এই দুই নেতার মধ্যে তুলনা টানেননি। বরং রাজনৈতিক ইতিহাসের দু’টি ঘটনা পাশাপাশি রেখে বলছেন, ‘‘যখনই আমাদের দেশে কোনও বড় ঘটনায় জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, তখন অনেকে বলে তুঘলকি শাসন বা হিটলারি রাজত্ব চলছে। কেন এমন বলা হয়, সেটা খুঁজতে গিয়েই এই তথ্য পেলাম।’’
সুখেন্দুর তথ্য বলছে, ১৯৩৩ সালে হিটলার তাঁর একাধিপত্য কায়েম করতে সংসদে নতুন আইন মঞ্জুরির জন্য পেশ করেন। আইনটির মূল লক্ষ্য ছিল এটা নিশ্চিত করা যাতে তার পর থেকে যে কোনও বিল আর সংসদে পাশ করানোর দরকার না পড়ে। মন্ত্রিসভাই যেন সরাসরি আইন তৈরি করতে পারে। আইনি পরিভাষায় এটি ‘মানুষের দুর্দশা ও সংসদের বাধা দূরীকরণ আইন’ বলা হলেও সাধারণ ভাবে তা ‘ক্ষমতায়নের আইন’ হিসেবে গণ্য হয়। সেই আইন সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাধিক্যে পাশ করাতে হিটলার কমিউনিস্ট দলের মোট ৮১ জন সাংসদের সবাইকে এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের ১২০ জন সাংসদের মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেফতার করে নির্বাসন শিবিরে পাঠান। কারণ হিটলারের পক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা ছিল না। এর পরেও নিশ্চিন্ত থাকতে না পেরে হিটলার অন্যান্য বিরোধী দলের সাহায্য নেন এবং কোনও ঝুঁকি না নিয়ে মিলিশিয়া-ও (আধা-সামরিক বাহিনী) সংসদ কক্ষের
আনাচে-কানাচে সাংসদদের শাসানি দিতে শুরু করে। নির্বিঘ্নে আইন পাশ করান হিটলার।
সুখেন্দুশেখরের কথায়, ‘‘মোদী সরকারেরও আসল উদ্দেশ্য ছিল, বন্ধু-বিরোধীরা ছাড়া বাকি বিরোধীদের সাসপেন্ড করে তিন-তিনটি সংশোধিত কালা কানুন পাশ করানো। ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের সংশোধিত চেহারা হল ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। অনেকে বিদ্রুপ করে বলছেন ‘অ-ন্যায় সংহিতা’। আইনটি আনা হল অন্যায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই আইন কার্যকর হলে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। হয়তো মনুসংহিতাও ফিরে আসবে নতুন কলেবরে।’’
ডেরেক আবার বর্ণ ব্যবহার করে বিপর্যয় দেখিয়েছেন মোদী সরকারের! ছাব্বিশটি ইংরেজি বর্ণমালার মধ্যে তিনি জোর দিয়েছেন ‘এফ’ (ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ), ‘আই’ (মুদ্রাস্ফীতি), ‘জে’ (জুমলা), ‘এম’ (মণিপুর) ও ‘ভি’ (ভ্যাকেন্সি বা শূন্যপদ)-এর উপর। ডেরেকের কথায়, ‘‘২০২৩ সালের ‘এ’ থেকে ‘জ়েড’ পর্যন্ত একটি তালিকা তৈরি করলে এটা দাঁড়াচ্ছে। আপনারাও আপনাদের হিসাবে তালিকা তৈরি করুন, যদি কিছু বাদ গিয়ে থাকে এই তালিকায়!’’ বছরের শেষে মূল্যবদ্ধি নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘২০১৪-র তুলনায় চালের দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। দুধ ৬১ শতাংশ, গম ৫৯ শতাংশ, টোম্যাটো ১১৫ শতাংশ এবং ডাল ১২০ শতাংশ।’’
ই-বর্ণমালায় তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা মনে করিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইনটিকেও। লোকসভা নির্বাচনের আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের পদ্ধতি এবং কর্তব্যের শর্তাবলি বদলে ফেলতে মোদী সরকার
সংসদে পাশ করিয়েছে বিতর্কিত বিল। বিরোধী সাংসদদের তুমুল প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে কেন্দ্র। ডেরেকের বক্তব্য, ‘‘এই বছরের শীতকালীন অধিবেশনে পাশ হওয়া বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার একতরফা ভাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে পারবে। এটাকে কি নিরপেক্ষ বলা যায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy