Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Controversy on Lok Sabha Speaker Election

স্পিকার নির্বাচনে বিজেপি ভোটাভুটি করল না সংখ্যা নেই বলে? অভিষেক-প্রশ্ন, ভিন্ন মত জানাল কংগ্রেস

অভিষেকের প্রশ্ন, হেরে যাওয়ার ভয়েই কি স্পিকার নির্বাচনে ভোটাভুটি এড়িয়ে গেল বিজেপি? তবে কি বুঝতে হবে, এনডিএ-র কাছে নিজেদের সমর্থিত স্পিকারকে নির্বাচিত করার মতো সংখ্যা নেই?

(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ওম বিড়লা এবং জয়রাম রমেশ।

(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ওম বিড়লা এবং জয়রাম রমেশ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ১৫:২১
Share: Save:

বিরোধীদের সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে ‘একতরফা’ ভাবে লোকসভার স্পিকার হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে ওম বিড়লাকে। এমনই অভিযোগ করল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক তৃণমূল। বুধবার লোকসভার স্পিকার নির্বাচন প্রক্রিয়া মেটার অনতিবিলম্বেই সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়েই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাখঢাক না রেখেই অভিষেক বলেন, ‘‘যা হয়েছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ। বিরোধী শিবিরের বহু সাংসদই চেয়েছিলেন, ভোটাভুটির মাধ্যমে স্পিকার নির্বাচন হোক। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার সেই আবেদন গ্রাহ্য করেননি।’’ অভিষেকের যুক্তি, ‘‘সংসদের নিয়ম হল, ৫০০ জনের মধ্যে এক জন সাংসদও ভোটাভুটি চাইলে সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে হবে। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার তা করেননি। বিজেপি একাই দুরমুশ করেছে এই নির্বাচন।’’

এই একই যুক্তিতে তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, হেরে যাওয়ার ‘ভয়ে’ই কি স্পিকার নির্বাচনে ভোটাভুটি প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেল বিজেপি? তবে কি বুঝতে হবে এনডিএ-র কাছে নিজেদের সমর্থিত স্পিকারকে নির্বাচিত করার মতো সংখ্যা নেই?

বুধবার লোকসভায় ধ্বনিভোটে নির্বাচিত হন স্পিকার ওম বিড়লা। এনডিএ-র প্রার্থী ওমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল কেরলের সাংসদ কে সুরেশকে। সকাল ১১টা নাগাদ নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। একে একে এনডিএ-র শরিক দলগুলির প্রধানেরা রাজস্থানের সাংসদ ওমের নাম প্রস্তাব করেন স্পিকার হিসাবে। পাল্টা কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা প্রস্তাব করেন সুরেশের নাম। এর পরেই ধ্বনিভোটের প্রস্তাব দেন লোকসভার প্রোটেম স্পিকার বিজেপির ওড়িশার সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাব। সেই সময়কালের ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ধ্বনিভোটে প্রায় সমান সমান আওয়াজ ওঠে শাসক এবং বিরোধী শিবির থেকে। কিন্তু প্রোটেম স্পিকার বিরোধীদের স্বর গ্রাহ্য না করে জানিয়ে দেন, বিড়লার পক্ষে মতামত বেশি। ওই ঘোষণার পর বিরোধী শিবির আপত্তি তোলে। কিন্তু সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করেন মহতাব।

সংসদের নিয়ম হল, ধ্বনিভোটে দুই শিবিরের ধ্বনি সমান জোরালো হলে ‘ডিভিশন’ বা ভোটাভুটির পথে যাওয়া যেতে পারে। অভিষেক জানিয়েছেন, সংসদের নিয়ম এ-ও বলছে যে, যদি প্রোটেম স্পিকারের কাছে সাংসদেরা ভোটাভুটি চান, তবে তাঁদের সেই ভোটাভুটির সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দু’টির কোনওটিই হয়নি। কংগ্রেস ছাড়াও বহু রাজনৈতিক দল ভোটাভুটি চেয়েছিল। কিন্তু লোকসভার ভিডিয়ো ফুটেজে স্পষ্ট, যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা ভোটাভুটি ছাড়াই একতরফা ভাবে হয়েছে। অভিষেকের কথায়, ‘‘যা প্রমাণ করে বিজেপির হাতে এখন আর সংখ্যাধিক্যের আত্মবিশ্বাস নেই। অন্যায় ভাবে, অনৈতিক ভাবে, অসাংবিধানিক ভাবে তারা এই সরকার চালাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, নইলে এই ‘চ্যালেঞ্জ’ তারা এড়িয়ে যেত না।

তবে অভিষেক এ কথা বললেও কংগ্রেস তা অস্বীকার করেছে। অভিষেক বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস-সহ বহু রাজনৈতিক দল ডিভিশনের প্রস্তাব দিয়েছিল। যা ভিডিয়ো ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।’’ কিন্তু কংগ্রেসের বক্তব্য, সংসদে স্পিকার নির্বাচন নিয়ে তারা কোনও ভোটাভুটির প্রস্তাব দেয়নি। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক জয়রাম রমেশ স্পিকার নির্বাচনের ঘণ্টাখানেক পরে তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে লোকসভা স্পিকার হিসাব কেরলের সাংসদ সুরেশকে সমর্থনের প্রস্তাব এনেছিল। ধ্বনিভোট গৃহীত হয়। তার পরে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভোটাভুটির প্রস্তাব দিতেই পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’ চেয়েছিল লোকসভায় ঐকমত্য এবং সহযোগিতার পরিবেশ বজায় থাক। প্রধানমন্ত্রী এবং এনডিএ-র কাজে যে ঐকমত্য এবং সহযোগিতার অভাব অত্যন্ত স্পষ্ট।’’

প্রসঙ্গত, ধ্বনিভোটে ওম বিড়লা স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁকে স্পিকারের আসনে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিরোধী দলনেতা কংগ্রসের রাহুল গান্ধী। স্পিকারের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ভঙ্গিতে হাতও মেলান তাঁরা।

ঘটনাচক্রে জয়রামের বক্তব্যের কিছু আগেই ভোটাভুটি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন অভিষেক। তার পরেই কংগ্রেসের এই মন্তব্যে শুরু হয়েছে জল্পনা। কারণ, মঙ্গলবার স্পিকার নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে প্রকাশ্যেই ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। অভিষেকই জানিয়েছিলেন, সুরেশকে স্পিকার পদপ্রার্থী ঘোষণার আগে ‘ইন্ডিয়া’য় কোনও আলোচনা করেনি কংগ্রেস। সিদ্ধান্তটি ‘একতরফা’ ভাবে নেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য রাহুল লোকসভার ভিতরে কথা বলেন অভিষেকের সঙ্গে। ফোনে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। সেই আলোচনায় বিষয়টি তখনকার মতো মিটে যায়। স্পিকার নির্বাচনের সময় তৃণমূল সুরেশকে সমর্থনও করে। কিন্তু তার পরেই আবার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে কংগ্রেস-তৃণমূলের মতানৈক্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Session 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy