মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা এলাকায় রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে বলে আজ সংসদে সরব হলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। যে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, ‘ণত্ব ষত্ব’ জ্ঞান হারিয়েছেন রেলমন্ত্রী। যে জোকা-বিবাদী বাগ রেল প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কথা বলছেন, সেই প্রকল্প আদৌ মমতার কেন্দ্র
দিয়ে যায়নি।
আজ সকাল থেকেই সংসদের উভয় কক্ষে মূলত আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল রেল। রাজ্যসভার আলোচনায় ছিল রেলের কর্মপদ্ধতি, লোকসভায় রেলের ব্যয়বরাদ্দ। আলোচনা চলে অনেক রাত পর্যন্ত। রাজ্যসভায় রেলের কর্মপদ্ধতি নিয়ে কথা হলেও রেলমন্ত্রী নিজের জবাবে বারংবার তা গুলিয়ে ফেলে ‘রেল বাজেট’ বলে মন্তব্য করেন বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। এ নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আপত্তি (পয়েন্ট অব অর্ডার) জানান তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন। কিন্তু চেয়ারম্যান তাতে কর্ণপাত না করায় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন তৃণমূলের সাংসদেরা। পরে ডেরেক জানান, বিতর্কের শেষে তিনি ফের বিষয়গুলি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছেন। সাংসদের আপত্তি তোলার অধিকার যে রয়েছে, তা মেনে নেয় সরকার। পাশাপাশি, রেলমন্ত্রী যে সব স্থানে ‘রেলের বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছেন তা সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বাংলার রেল প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রিতার পিছনে জমি অধিগ্রহণে তৃণমূল সরকারের অনিচ্ছাকে দায়ী করে আসছেন। আজও তিনি বলেন, ‘‘মমতার কেন্দ্রে জোকা-বিবাদী বাগ রেল প্রকল্পের কাজ খিদিরপুরের কাছে জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যায় আটকে গিয়েছে।’’ পরে সংসদের বাইরে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘জমির সমস্যা রয়েছে মোমিনপুরে। খিদিরপুরে নয়। ওই এলাকা কোনও ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর এলাকায় পড়ে না। আসলে বাংলাকে বঞ্চনা
করতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন রেলমন্ত্রী।’’
অন্য দিকে লোকসভায় অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত বিতর্কে রেলের বেহাল পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তিনি বলেন, দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পরেও বিন্দুমাত্র পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। বড়লোকদের জন্য বন্দে ভারত ট্রেন থাকলেও আমজনতাকে জেনারেল কামরাতে ভিড়ে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি টিকিট বাতিল হলে কেন যাত্রীদের ভাড়ার একটি অংশ কেটে নেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘তথ্যের অধিকার আইনে জানা গিয়েছে ২০১৯-২৩ সময়কালে বাতিল টিকিট থেকে রেলের আয় হয়েছে ৬১১৩.৮ কোটি টাকা। তেমনই অপেক্ষারত (ওয়েট লিস্ট) টিকিট বাতিল থেকে আয় হয়েছে ১২২৯.৮৫ কোটি টাকা।’’
তৃণমূলের আর এক সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতার আমলের তুলনায় এখন চার হাজার ট্রেন কম চলছে। যাত্রী পরিবহণে বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। পণ্য পরিবহণেও আশার আলো নেই। যাত্রী সুরক্ষায় মমতার সময়ে ১২ কোম্পানি মহিলা রেল পুলিশ থাকলেও, এখন তা কমে হয়েছে ৭ কোম্পানি। রেলে চালকের পদ খালি রয়েছে কুড়ি হাজার, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সার্বিক ভাবে নিয়োগ কমে গিয়েছে রেলে।’’ সব মিলিয়ে রেলে ২.৭ লক্ষ পদ খালি (জুন,২০২৩ পর্যন্ত) রয়েছে বলে দাবি করেন কল্যাণ। ওই বিতর্কে বাংলার প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ জুন মাল্যও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)