গত কয়েক মাস তৃণমূল এবং বেশ কিছু বিরোধী আঞ্চলিক দল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সামনে নিয়ে এসেছেন। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যে কংগ্রেসকে গুরুত্বহীন হিসাবে দেখানোর প্রয়াস জোর পেয়েছে হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে তাদের ফল খারাপ হওয়ার পরে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের দুই শক্ত ঘাঁটি কেরল এবং গোয়ায় আলাদা করে লড়াইয়ের পরিকল্পনা করছে তৃণমূল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, আপাতত গোয়ায় জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া হবে। ২০২৭-এ গোয়ার বিধানসভা ভোটেও বিজেপি, কংগ্রেস এবং আপের বিরুদ্ধে তৃণমূল লড়াই করার পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি ২২ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি কেরলের কোঝিকোড়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে একটি সমাবেশ করবেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিলাম্বুরের নির্দল বিধায়ক পিভি আনবর। ২৩ তারিখ কেরলের মানজেরিতে ‘লিডারশিপ কনক্লেভের’ আয়োজন করেছে তৃণমূলের কেরল শাখা। সেখানে আনবরের সঙ্গে হাজির থাকবেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। দল সূত্রে খবর, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য দু’দিনের দলীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া। এক সময় কেরলের জোট-সরকারের অংশ আনবরের সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে সম্পর্ক ছিন্ন করে এলডিএফ। তিনি তৃণমূল যোগ দেওয়ায় তাঁর সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকরাও তৃণমূলে এসেছেন। ফলে কেরল নির্বাচনে নিজের কেন্দ্রে বামেদের যথেষ্ট ভোট কাটবেন তিনি।
সব মিলিয়ে প্রমাদ গুনছে কংগ্রেস ও বাম। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই তৃণমূলের এই পদক্ষেপ। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “তৃণমূল গোয়ায় গিয়ে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট কেটেছে। কংগ্রেস এবং বিজেপির হারের ফারাক যতটা, ঠিক সেই ভোটই পেয়েছে তৃণমূল এবং আপ। অথচ আমরা ধরে নিয়েছিলাম, তৃণমূল নিজেদের সম্প্রসারণ করতে গিয়েছে।”
তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, দিল্লিতে আপের নাক কেটে বিরোধীদের যাত্রাভঙ্গ করছে কংগ্রেস। তাদের পাওয়া ৬ শতাংশ ভোটের কারণেই বিজেপি বিভিন্ন আসনে সুবিধা পেয়েছে। ফলে তারা অন্য দলকে ‘ভোট কাটুয়া’ হিসাবে অভিযোগ করে কী করে? তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আগের বার গোয়ায় লড়তে গিয়ে যে বিপর্যয় হয়েছে, তার থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই তৈরি হচ্ছে দল। এক শীর্ষ নেতার কথায়, আগের বারের মতো ভোটের আগে শীর্ষ নেতানেত্রীদের বড় পোস্টার দিয়ে প্রচার শুরু করা হবে না। অনেক আগে থেকেই তৃণমূল স্তরে কাজ শুরু হবে। তাই সে রাজ্যে জেলা পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।”
সংসদের বাজেট অধিবেশনে গোয়ার মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসেরও সমালোচনা করতে শোনা যায় তাঁকে। কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী তখন সভায় উপস্থিত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)