তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে থাকেন, প্রত্যেক রাজ্যের আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। কেউ আমিষ খান, কেউ নিরামিষাশী। এটাই ভারত। তবে তাঁর দলের সাংসদ ঠিক উল্টো ভাবেন। আসানসোলের তারকা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা চান, সারা দেশেই নিষিদ্ধ হোক আমিষ খাবার। মঙ্গলবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা ইউসিসি)-র ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শত্রুঘ্ন। বাধা এবং বিতর্ক সত্ত্বেও উত্তরাখণ্ড সরকার যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করেছে, সে জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘শুধু গোমাংসই নয়, দেশে সমস্ত আমিষ পদ নিষিদ্ধ করা উচিত। সরকার বিভিন্ন জায়গায় গোমাংস বিক্রি বন্ধ করেছে। তবে এখনও অনেক জায়গায় গোমাংস বিক্রি বা খাওয়ায় কোনও আইনি বাধা নেই। উত্তর-পূর্বের মানুষ প্রকাশ্যে এগুলো খেতে পারেন। কিন্তু উত্তর ভারত পারে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘উত্তর-পূর্বে গোমাংস খেলে ইয়াম্মি, আর উত্তর ভারতে খেলে মাম্মি! এ তো হতে পারে না।’’ তৃণমূল সাংসদ সওয়াল করেন, যে আইন উত্তর ভারতের জন্য রয়েছে, একই আইন চালু হওয়া উচিত উত্তর-পূর্বে। দেশ একটাই। তাই নিয়মও এক হওয়া উচিত। তবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মনে করেন শত্রুঘ্ন। তিনি বলেন, ‘‘ইউসিসি কার্যকর করার আগে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা উচিত।’’
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে উত্তরাখণ্ডে চালু হয়ে গিয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। তার আগে ইউসিসি কার্যকর করার আইনি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়েছিল সে রাজ্যের সরকার। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল বিলের খসড়া। একই পথে হাঁটতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতও। নতুন বিধি অনুসারে একত্রবাসের জন্য কোনও যুগলকে বিয়ের মতো প্রায় একই ধাঁচের ‘রেজিস্ট্রেশন’ করাতে হবে। নিয়ম না মানলে কিংবা রেজিস্ট্রেশনের সময় কোনও ভুল তথ্য দিলে হতে পারে জেলও। তিন মাসের কারাবাস কিংবা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে যুগলের। এ নিয়ে বিতর্কের মাঝে শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি তো চালু হওয়া উচিত। পুরো দেশ সেটা মানবে। তবে আইনে অনেক বিষয় থাকে। অনেক বিষয়ে নজর দিতে হয়। এক দিন মনে হল, আর ভোটকে পাখির চোখ করে বলে দিলেন, চলুন, আজ থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হল, এমনটা হতে পারে না।’’
আরও পড়ুন:
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা দলের অবস্থান অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্ন। মাস কয়েক আগে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আমিষ-নিরামিষ বিতর্ক নিয়ে বলেছিলেন, “আপনি কোন জাতের, কোন রাজ্য থেকে এসেছেন, আপনি নিরামিষাশী না আমিষ খান, এটা কেউ জিজ্ঞাসা করে না বাংলায়। এটাই বাংলার গর্ব।’’ আবার গত লোকসভা ভোটের সময়ে একটি জনসভায় মমতা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি মাছ রান্না করে খাওয়াতে চান। মাছ, মাংস ও মোগলকে এক পঙ্ক্তিতে এনে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘মাছ খেলে দেশবিরোধী?’’ এখন দলীয় সাংসদের আমিষ-বিরোধিতা নিয়ে তৃণমূল কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাই দেখার।