Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

কংগ্রেসকে আসন ছাড়ার কৌশল ভাবছে তৃণমূল

তৃণমূলের তরফে এ ধরনের ভাবনাচিন্তা ৪২টির মধ্যে ৪২টি আসনেই একা লড়ার মনোভাব থেকে সরে এসে আলোচনা এবং দর কষাকষিতে আগ্রহের আপাতইঙ্গিত বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।

Sonia Gandhi and Mamata Banerjee

সনিয়া গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৬
Share: Save:

কংগ্রেস যদি মেঘালয়ে তাদের চাহিদামাফিক আসন ছেড়ে দেয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গে ‘দু’টি আসন’ কংগ্রেসকে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও এখনও আসন সমঝোতা নিয়ে বিরোধীদের কোনও কথাই শুরু হয়নি এবং আসন্ন বেঙ্গালুরু বৈঠকে সামগ্রিক ভাবে তা শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক ভাবে এমন মেঘালয়-বঙ্গ দরাদরির ভাবনাচিন্তা তৃণমূলের অন্দরমহলে শুরু হয়েছে বলেই রাজনৈতিক সূত্রে খবর।

রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা হলে বিস্তর দর কষাকষির পরেই তা হতে পারে। আর পশ্চিমবঙ্গে মাত্র দু’টি আসনে লড়া এবং মেঘালয়ে লোকসভার দু’টি আসনই ছেড়ে দেওয়ার সূত্র কংগ্রেস মেনে নেবে, এমন ভেবে নেওয়ারও কোনও কারণই নেই। তৃণমূলও তা জানে। তাই তৃণমূলের তরফে এ ধরনের ভাবনাচিন্তা ৪২টির মধ্যে ৪২টি আসনেই একা লড়ার মনোভাব থেকে সরে এসে আলোচনা এবং দর কষাকষিতে আগ্রহের আপাতইঙ্গিত বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।

বুধবারই সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় স্তরে জোট প্রসঙ্গে বলেছেন, “আপনারা (কংগ্রেস) এখানে আমাকে গালাগালি দেবেন, আমি দিল্লিতে পুজোর নৈবেদ্য সাজিয়ে দেব, এটা ভাবা উচিত নয়। আমাকেও আপনাদের দুব্বো দিতে হবে।” রাজনৈতিক সূত্রের খবর প্রতীকী অর্থে ‘দুব্বো’ বলতে আসনই বুঝিয়েছেন তিনি। আবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আপনি আমাদের লোককে খুন করবেন, আপনাকে গলায় ফুলের মালা দেব, তা-ও তো হয় না দিদি। আপনি বেঙ্গালুরু যান আর পটনায় যান, এই বাংলায় সন্ত্রাসের নায়িকা হচ্ছেন আপনি। আপনি আমাদের এখানে খুন করবেন, আর আপনার হয়ে ঢোল বাজাব— এ দুঃস্বপ্ন যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না দেখেন।’’ এই আবহেও তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে বাংলায় ৪২-এর মধ্যে ৪২টি আসনেই তৃণমূল লড়বে, এমন না-ও হতে পারে। তবে কোনও রফায় আসার আগে এখনও অনেক দরকষাকষির সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বিনিময়ে কী দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।

গত কয়েক মাস ধরেই জাতীয় বিরোধী রাজনীতির মঞ্চে তৃণমূল পুরনো ‘অ্যালার্জি’ ভুলে কংগ্রেসের প্রতি সখ্যের বার্তা দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা কংগ্রেসের কাছ থেকে ঔদার্য প্রত্যাশা করে। গত পটনা বৈঠকে সেই ঔদার্যের কোনও খামতি রাখেননি কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের ঘটনাকে ঘিরে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল, তা রাজ্যস্তরে বেড়ে গেলেও কেন্দ্রীয় স্তরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আপাতত তিক্ত নয়। পঞ্চায়েত ভোটে যথেষ্ট হিংসা হলেও মমতার প্রতি দিল্লি থেকে কংগ্রেসের বার্তাও নেতিবাচক নয়।

ঠিক দু’বছর পরে বেঙ্গালুরুর বৈঠকে মুখোমুখি হবেন সনিয়া গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আসন সমঝোতার প্রসঙ্গ উঠবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে মমতা তাঁর দেওয়া সূত্র হিসেবে বলতে পারেন, যে যে-রাজ্যে শক্তিশালী, সেখানে তাকে বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়ে বাকিরা সমর্থন করুক।

সেই হিসাবে মেঘালয়ে সামান্য হলেও কংগ্রেসের প্রাপ্ত শতকরা ভোট তৃণমূলের থেকে কম। দুই দলেরই বিধায়কের সংখ্যা পাঁচ। সে রাজ্যে তৃণমূলের ১৪ শতাংশের মতো ভোট রয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যদি কংগ্রেসকে আসন পেতে হয় (যেখানে তাদের বিধায়কের সংখ্যা শূন্য), তা হলে মেঘালয়ে লোকসভার দু’টি আসন তৃণমূলকে ছাড়তে হবে। কিন্তু মেঘালয়ে লোকসভার আসন সংখ্যাই দুই। ফলে সে রাজ্যের দু’টি আসনই তৃণমূলের হাতে ছেড়ে দেবে কংগ্রেস, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে দরকষাকষির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

জাতীয় দলের তকমা হারানোর পরে, মেঘালয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জমি বাড়াতে আগ্রহী তৃণমূল। ২০২১ সালে বিপুল আসন নিয়ে তৃণমূল তৃতীয় বারের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় আসে। ওই বছরেরই অক্টোবরে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে মেঘালয়ের দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। মেঘালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছিল তৃণমূল। পেয়েছিল প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও। চলতি বছরের বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় কোনও প্রভাব না ফেলতে পারলেও মেঘালয়ে সাফল্য পায় ঘাসফুল শিবির।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy