নীরব তৃণমূল কংগ্রেস। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খয়রাতি নিয়ে সরব হওয়ার পরেই নির্বাচন কমিশন একই সুরে প্রস্তাব দিয়েছিল, ভোটের আগে কোনও রাজনৈতিক দল খয়রাতির প্রতিশ্রুতি দিলে, তাতে কত খরচ হবে সেটাও জানাতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সব দলের মতামত চায় কমিশন। কংগ্রেস, বাম-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলই নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব চিঠি লিখে খারিজ করে দিলেও এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নীরব তৃণমূল কংগ্রেস। তারা এই নিয়ে এখনও কোনও অবস্থান নেয়নি অথবা কোনও চিঠি কমিশনকে পাঠায়নি। দলীয় সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।
শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রসঙ্গটি কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, “দেশে যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে ভাল করে কাজ করুক নির্বাচন কমিশন, আমরা সেটাই চাই।” তবে খয়রাতি নিয়ে এখনও কোনও অবস্থান না-নিলেও আজ পরোক্ষে কমিশনের তীব্র সমালোচনা করতেই দেখা গিয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে।
আজ গুজরাত নির্বাচনের (১ এবং ৫ ডিসেম্বর) মধ্যেই (৪ ডিসেম্বর) দিল্লির পুর নিগমের ভোট ঘোষণাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে বর্ণনা করেছেন ডেরেক। তাঁর কথায়, “বিষয়টি নিছক কাকতালীয় নয়। গুজরাতের ভোটের সময়ে দিল্লিতেও ভোট রাখলে বিরোধী দলকে দু’জায়গায় ভাগ করে দেওয়া সম্ভব হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “এক জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গেই জানাচ্ছি, কমিশন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন যাতে হয় সে দিকে নজর দিক। দেখে যেন অন্তত মনে হয় যে তারা নিরপেক্ষ ভাবে নির্বাচন করাচ্ছে।”
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার দিকে তৃণমূল নেতৃত্ব দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, প্রশ্ন উঠছে খয়রাতির প্রশ্নে তাদের নীরবতা নিয়ে। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে রাশ টানাটা নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারের বাইরের বিষয়। সিপিএম, ডিএমকে, আম আদমি পার্টিও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। অধিকাংশ বিরোধীদেরই তাই মত। বিজেপি ও শিরোমণি অকালি দল অবশ্য এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে।
কিন্তু তৃণমূল এক দিকে বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত রাস্তায় হেঁটে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে না। অন্য দিকে ‘মৌনতা সম্মতির লক্ষণ’ তত্ত্বে তারা বিজেপির প্রস্তাবকেই সমর্থন করছেন কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী ভোটের আগে খয়রাতি বিলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা আঞ্চলিক দলগুলিকে নিশানা করছেন। পাশাপাশি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তার রিপোর্টে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক রাজ্যে খয়রাতি করতে গিয়ে রাজকোষের হাঁড়ির হাল হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, রূপশ্রী, কৃষকবন্ধু থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানায় বিভিন্ন অর্থ সাহায্য প্রকল্পগুলিকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চিহ্নিত করে। জুন মাসে ধর্মশালায় রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সম্মেলনেও শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া পরিস্থিতির উদাহরণ তুলে ধরে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। পরে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে খয়রাতি, যথেচ্ছ ঋণ ও আয় অনুযায়ী খরচ নিয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্ক হতে বলেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তাই সব মিলিয়ে খয়রাতির প্রশ্নে যখন অন্য কিছু রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও কেন্দ্রের নিশানায় রয়েছে, তখন সে রাজ্যের শাসক দলের এই নিয়ে অবস্থানহীনতা প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক শিবিরে। বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূল যে হেতু দুর্নীতির প্রশ্নে কোণঠাসা হয়ে রয়েছে, তারা মোদীর খয়রাতি-নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে চাইছে না।
তৃণমূল শিবির যদিয়ো ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা আক্রমণে এসেছে কমিশনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। হিমাচল প্রদেশের ভোট ঘোষণার দিনই গুজরাতের ভোট ঘোষণা না-করার কারণ হিসাবে কমিশন যুক্তি দেখিয়েছিল, যে গুজরাতের নতুন সরকার গড়ার শেষ দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেখানে হিমাচলে সেই তারিখ ৮ জানুয়ারি। মাঝে ৪০ দিনের ব্যবধান রয়েছে। সেই ব্যবধানকেই কমিশন কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কারণ হিমাচলে শীত পড়তেই বরফ পড়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়।
এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের বক্তব্য, এই বছরের মাঝামাঝি যখন ৫ রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়, তখন উত্তরপ্রদেশ এবং গোয়ায় ভোটের ফল ঘোষণা এবং বিধানসভা গড়ার মধ্যে ব্যবধান ছিল ৬০ দিন। কিন্তু তখন কেন একই সঙ্গে কমিশন দুই ভোটের দিন ফেলে? বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই দাবি করছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy