বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
শরদ পওয়ারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মনোমালিন্য’ শুরু গত বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠক থেকেই। তৃণমূলেরও এখন দাবি, অদূর ভবিষ্যতে আর বিরোধীদের একজোট করতে প্রধান উদ্যোগী নেতা হিসেবে দেখা যাবে না পওয়ারকে। বরং সেই সমন্বয়ের দৌত্যে নীতীশ কুমারের উদ্যোগে বেশি স্বচ্ছন্দ মমতা ও তাঁর দল।
কর্নাটকে ভোটপর্ব মিটলেই জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত তৎপরতা শুরু হবে। এরই মধ্যে ঘরোয়া ভাবে বিভিন্ন বিজেপিবিরোধী দল (যারা কর্নাটক ভোটে ব্যস্ত নয়) নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ জানিয়েছেন, শীঘ্রই পটনায় বৈঠক আয়োজিত হবে। তৃণমূল শিবিরের দাবি, নীতীশের এই উদ্যোগের পিছনে সক্রিয় সমর্থন রয়েছে তৃণমূলনেত্রী মমতার। কারণ, তিনি এবং তাঁর দল নীতীশের উদ্যোগে বিরোধীদের এককাট্টা করার প্রশ্নে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন কারণেই বিরোধী রাজনীতিতে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের গুরুত্ব ক্রমশ কমছে।
বিরোধী দলগুলি যখন এ ভাবে লোকসভা ভোট মাথায় রেখে জোটের সলতে পাকানোয় ব্যস্ত, তখনই এক সাক্ষাৎকারে ওই জোটের প্রসঙ্গ কার্যত উড়িয়ে দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নীতীশ কুমারের কত জন প্রার্থী গুজরাতে লড়বেন? মমতাজির দলের কত জন উত্তরপ্রদেশে লড়বেন? অখিলেশ যাদবের এসপি-র কোন নেতাই বা পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়াচ্ছেন? সবাইকে একসঙ্গে আনার অর্থ কী? এরা তো প্রত্যেকেই নিজ-নিজ রাজ্যে আমাদের সঙ্গে লড়ছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু নিজের রাজ্যেই জমি হারাচ্ছেন। অখিলেশের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈঠকের অর্থই হয় না। কারণ, কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে।”
শাহের মতে, প্রত্যেক আসনে একটিই দল সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে, এই তত্ত্বই আদতে দাঁড়াচ্ছে না। উত্তরপ্রদেশে বিএসপি আলাদা লড়বে, ওড়িশায় বিজেডি। একই ভাবে সিপিএম কখনও তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়বে না। কেরলেও ইউডিএফ এবং এলডিএফ হাত ধরবে না পরস্পরের।
তবে কোন দল কোন রাজ্যে প্রার্থী দেবে বা সমঝোতা করবে, কথাবার্তা সেই পর্যায়ে পৌঁছনোর আগে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় এবং বিজেপি বিরোধিতার হাওয়া একত্রে তৈরির উপরেই জোর দিচ্ছে বিরোধী দলগুলি। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, আপাতত সেই সমন্বয়কারী হিসেবে তৃণমূলের নীতীশকে পছন্দের একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, পটনায় বিরোধীদের বৈঠক হলে, একটি স্পষ্ট বার্তা যায়। সেটি হল, জোটের লক্ষ্যে বৈঠক হচ্ছে একটি আঞ্চলিক ভূখন্ডে (পূর্বাঞ্চলে), দিল্লিতে নয়। অর্থাৎ, সনিয়া-রাহুলের গড়ে নয়। দ্বিতীয়ত, নীতীশের নেতা হিসেবে জাতীয় স্তরে যতই পরিচিতি থাকুক, ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি মমতার প্রতিযোগী নন। মমতা লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের ৪২টিতে একাই লড়বেন। নীতীশের টিকি বাঁধা আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে। একক ভাবে নীতীশের থেকে আসন বেশি পাওয়ার সম্ভবনা শুধু মমতার নয়, অখিলেশের এসপি বা স্ট্যালিনের ডিএমকে-রও।
বিরোধী রাজনীতিতে সলতে পাকানোর আরও এক নেতা পওয়ারের সঙ্গে মমতার মনোমালিন্য শুরু গত বছর রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী জোটের প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠক থেকে। মমতাকে কথা দিয়েও শেষ মুহূর্তে নিজেকে লড়াই থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন পওয়ার। তৃণমূলের মুখ পুড়েছিল। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, পওয়ারের এনসিপি সভাপতি পদ ছাড়া নিয়ে এখন যে জলঘোলা চলছে, মহারাষ্ট্রে তাতে মরাঠা স্ট্রং ম্যানের নিজের দলেই দর কিছুটা পড়ল। সূত্রের খবর, বিরোধীরা যখন একযোগে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের পরে গৌতম আদানি ও সেই সূত্রে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করছেন, তখন আদানির সঙ্গে মুম্বইয়ে বৈঠক করেছেন পওয়ার। বিজেপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন আদানি সম্পর্কে। এই সব ঘটনাক্রমের পরে জাতীয় রাজনীতিতে পওয়ারের গ্রহণযোগ্যতা আর আগের মতো নেই বলেই অভিমত তৃণমূল নেতৃত্বের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy