মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার দুপুরে ফোন করে দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন, বাইরে ধর্না যা হচ্ছে হোক, সেই সঙ্গে সংসদে কথা বলতে না-দেওয়ার প্রতিবাদে অধিবেশন কক্ষের মধ্যেই শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছু করা হোক। তাঁরই পরিকল্পনা ছিল, মুখে কালো কাপড় বেঁধে কক্ষে যাবেন তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদেরা। সেই কৌশল অনুযায়ী আজ সকালে কালো কাপড় মুখে বেঁধে ওয়েলে নামেন তৃণমূলের সংসদীয় নেতারাও। সেই সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধেও স্লোগানও দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদেরা।
লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা সকালেই বৈঠক করে কৌশল স্থির করি। সেই অনুযায়ী পৌনে এগারোটার মধ্যে ঢুকে দুই কক্ষের প্রথম সারিতে আসন নেওয়া হয়। আমি নিজে কখনও ওয়েলে নামি না। আজ প্রায় দশ বছর পর ওয়েলে নেমে দলের প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিয়েছি।”
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, আদানি-কাণ্ড নিয়ে যখন সমস্ত বিরোধী দল একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে, তখন তৃণমূল তাতে যোগ না দেওয়ায় ভুল বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে। কংগ্রেসও বিষয়টি নিয়ে ‘মোদী-দিদি’ প্রচারকেই ধারাবাহিক ভাবে হাতিয়ার করছে। ফলে দলের বিরোধী ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার প্রশ্নে অধিবেশন কক্ষের ভিতরে সরব হওয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন তৃণমূল নেত্রী। পাশাপাশি বিজেপি-বিরোধিতায় তারা যে পিছিয়ে নেই, তাও উচ্চগ্রামে প্রচার জরুরি বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।
রাজ্যসভায় আদানি কাণ্ডের তদন্ত দাবি করার পাশাপাশি আজ সাংবাদিক বৈঠক করে এ প্রসঙ্গে সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলকে। রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং লোকসভার বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় আজ যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন। ডেরেকের আহ্বান, “আমি সমস্ত সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলিকে আহ্বান জানাচ্ছি, তাঁরা এই বিষয়ে একজোট হন। আদানি গোষ্ঠী এলআইসি এবং এসবিআইয়ে সাধারণ মানুষের টাকা লুঠ করছে কি না, সমস্ত অ-বিজেপি রাজ্য তার তদন্ত করুক। পঞ্জাব, বিহার, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, কেরল, বাংলায় এটা করা সম্ভব।” তাঁর প্রশ্ন, “সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ লুঠ করেছে আদানি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি বা সিবিআই তদন্ত করছে না কেন?” সৌগতের বক্তব্য, “গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫৮৯২ কোটি টাকা। আদানি সাড়ে তিন দিনে এই টাকা কামান। কেন্দ্র আদানির বিরুদ্ধে যথেষ্ট পদক্ষেপ করছে না।”
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরে তাজপুরের বন্দর প্রকল্পে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগ করার কথা। তাজপুরে রাজ্য আদানিদের হাতে ইচ্ছাপত্র দিয়েছে, এখন সমীক্ষার কাজ চলছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশের সম্প্রসারণের প্রকল্পেও তারা যুক্ত। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আজ খোঁচা মেরে বলেছেন, “তৃণমূল নেত্রী আদানির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক স্পষ্ট করুন। রাজ্যে আদানি কী বিনিয়োগ করতে চলেছে তা জানান। এই বিতর্কের পর তা প্রকাশ্যে আনুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘দল আর সরকার আলাদা। দল তদন্তের দাবি করছে। সরকার কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’’ তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, তৃণমূলের তরফে দল এবং সরকারের মধ্যে এই সীমারেখা টানার চেষ্টা অর্থহীন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলেরই সরকার চলছে, কোনও জোট সরকার নয়। দলের নেত্রী এবং সরকারের প্রধান একই ব্যক্তি।
‘শাসক দল আমাদের বলতে দিচ্ছে না’— এটাই ছিল এ দিন দুই কক্ষে তৃণমূলের মূল স্লোগান। ডেরেকের বক্তব্য, “শাসক দল সংসদকে একটি গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন কূপে পরিণত করছে। এত দিন প্রধানমন্ত্রী সংসদে প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। চার বছর হয়ে গেল কোনও ডেপুটি স্পিকার নেই। মানুষের সঙ্গে সংম্পৃক্ত বিষয় তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। স্থায়ী কমিটিতে না পাঠিয়ে তাড়াহুড়ো করে বিল পাশ করা হচ্ছে। আর এখন শাসক দল খোলাখুলি অধিবেশন ভণ্ডুলও করছে।” তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য আহ্বায়ক সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, “আমরা আজ ওয়েল থেকে চেয়ারম্যানকে বলেছি, তিনি-ই তো গতকাল শাসক দলকে সতর্ক করেছিলেন অধিবেশন ভণ্ডুল না করার জন্য। কিন্তু তাদের কোনও সদস্যই তাঁর কথা শোনেননি। আমাদের কি বলতেই দেওয়া হবে না?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy