Advertisement
০২ জুলাই ২০২৪
New Criminal Laws

‘নির্মম ও অসাংবিধানিক’! সোমে কার্যকর হতে চলা নতুন তিন আইন নিয়ে ফের সরব হল তৃণমূল

মোদী সরকারের এই তিন আইন নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সংসদে এই বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিরোধিতা। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশও নেয়নি বিরোধী দলগুলি।

—প্রতীকী ছবি

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ২০:১২
Share: Save:

ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-সহ নতুন তিন অপরাধমূলক আইন সোমবার থেকেই গোটা দেশে চালু হচ্ছে। তার আগের দিন ফের নতুন এই তিন আইনের বিরোধিতায় সরব হল তৃণমূল। রবিবার রাজ্যের শাসকদলের তরফে আইনগুলিকে ‘নির্মম এবং অসাংবিধানিক’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

মোদী সরকারের এই তিন আইন নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সংসদে এই বিল পেশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিরোধিতা। লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল নিয়ে আলোচনায় অংশও নেয়নি বিরোধী দলগুলি। শুধু সংসদের ভিতরে নয়, বাইরেও তা নিয়ে সমান প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। রবিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, এর আগে প্রস্তাবিত তিন আইনের বিভিন্ন অংশে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি এবং দলের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। কংগ্রেসের তরফে আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। আর এক বিরোধী দল ডিএমকে-র তরফে আপত্তি জানিয়েছিলেন এনআর এলানগো এবং দয়ানিধি মারান। বিরোধীদের তরফে সংসদীয় কমিটিতেও যে এই তিন আইনের বিরোধিতা করা হয়েছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন ডেরেক।

১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)-র পরিবর্তে হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি)-র নতুন রূপ ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে কার্যকর হচ্ছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’। নতুন আইনে কী কী অপরাধ এবং তার শাস্তি হিসাবে কী বলা হয়েছে তা নিয়ে ধন্দে আছেন অনেকেই। জানা গিয়েছে, ন্যায় সংহিতায় নতুন ২০টি অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ভারতীয় দণ্ডবিধিতে থাকা ১৯টি বিধান বাদ পড়েছে ন্যায় সংহিতায়। একই সঙ্গে ৩৩টি অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৮৩টি অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২৩টি এমন অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে একটি বাধ্যতামূলক সর্বনিম্ন শাস্তির কথা বলা রয়েছে ন্যায় সংহিতায়।

গত ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই এগুলির বিরোধিতায় সরব হয় বিরোধীরা। তিন আইন এখনই তড়িঘড়ি বলবৎ না করে পুনর্বিবেচনা করার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিরোধীদের আপত্তি মূলত দেশদ্রোহিতা সংক্রান্ত বিধি নিয়ে। প্রসঙ্গত, আইপিসি-র ১২৪(ক) ধারাটিতে ‘দেশদ্রোহিতা’ নামক অপরাধটি এ বারের ন্যায় সংহিতায় ১৫২ ধারাতে রয়েছে। তবে ওই শব্দটি বাদ দিয়ে প্রায় একই ভাষায় দেশের ‘সার্বভৌমত্ব ও ঐক্য’র যে কোনও ধরনের বিরোধিতার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিদানের কথা রয়েছে। বিরোধীরা মনে করছে, দেশের নাগরিক এত গভীরে বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। সেই আবহে গত দশ বছরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই মতোই সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা করলে নাগরিকের বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ করা হতে পারে। অপরাধ এবং সন্ত্রাস দমনে যে নতুন ধারাগুলি যুক্ত হয়েছে, সেগুলিতেও সরাসরি নাগরিকের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC IPC Bill 2023 Law and Order
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE