ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে কলকাতায় বামেদের মিছিল।
ছবির পর্দায় ‘এমএলএ ফাটাকেষ্ট’কে দেখেছেন বাংলার দর্শকেরা। ত্রিপুরায় এখন প্রায় একই ভূমিকায় দেখা মিলছে বিধায়ক রঞ্জিৎ দেববর্মার। তবে রুপোলি পর্দায় নয়। সন্ত্রাস-কবলিত এলাকায় কঠোর বাস্তবের জমিতে!
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে ত্রিপুরা জুড়ে নানা এলাকা থেকেই প্রতিহিংসা নিতে বাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানো, জরিমানার অভিযোগ আসছে। বাজার বন্ধ করে দেওয়া, দোকান খুলতে না দেওয়ার অভিযোগও ভূরি ভূরি। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র রামচন্দ্রঘাটে এমন ঘটনা ঘটলেই দ্রুত হাজির হচ্ছেন বিধায়ক রঞ্জিৎ। আক্রান্তদের অভয় দিচ্ছেন। কোথাও তালা খুলে দিয়ে দোকান চালাতে বলছেন। কারও জরিমানার টাকা নিজেই মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। আবার কখনও সটান আক্রমণকারীদের ঠিকানায় হাজির হয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, সাত দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা ফেরত বা ভাঙচুর হওয়া গাড়ি মেরামত করে দিতে হবে! বিধায়কের আক্ষেপ, মানুষ আক্রান্ত দেখেও পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হচ্ছে না।
অতীতে রামচন্দ্রঘাট থেকেই চার বার বিধায়ক হয়েছিলেন সিপিএমের নেতা এবং ত্রিপুরার প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেববর্মা। সেই আসনে এ বারই প্রথম বিধায়ক হয়েছেন রঞ্জিৎ। তাঁর ডাকসাইটে অতীত আছে, স্বভাব এবং প্রশিক্ষণের জেরে অকুতোভয়। নতুন দল তিপ্রা মথার হয়ে জিতেছেন। কিন্তু এলাকায় আক্রান্ত হলে বাম এবং কংগ্রেস সমর্থক পরিবারের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন তিনি। রঞ্জিতের কথায়, ‘‘ভোটের আগে বামপন্থীরা আমার বিরুদ্ধে বলেছিলেন, কিছু অপপ্রচারও হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফল বেরিয়ে যাওয়ার পরে আমি এলাকার বিধায়ক। সকলকেই আমি বলছি, এখানে থাকতে হবে শান্তিতে। কোন দলকে কে সমর্থন করবেন, তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু হামলা হবে কেন?’’ নিজের দু’টো মোবাইল নম্বর এলাকায় দিয়ে রেখেছেন তিনি। বিপদে পড়লে মানুষ ফোন করছেন, সাড়াও পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বাসিন্দা এক মহিলা যেমন জানাচ্ছেন, রাতে বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি দিয়েছিল শাসক দলের দুষ্কৃতী বাহিনী। খবর দেওয়ার পরে বিধায়ক রঞ্জিৎ তাদের গিয়ে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন। বামপন্থী সমর্থক এক জনের অটো ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের কাছে গিয়ে মথা-র বিধায়ক বলেছেন, একই পাড়ায় থাকেন, আড্ডা দেন আর ভোটের পরে এমন মনোভাব? ওই অটো ৭ দিনের মধ্যে সারিয়ে দিতে হবে।
রঞ্জিৎ বলছেন, ‘‘দলের নাম করতে চাই না। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী আছে, যারা এই কাজগুলো করছে। তাদের সাফ বলেছি, সরকারে এসেছো। কাজ করো। সময় কিন্তু চির দিন সমান যায় না!’’ তাঁর সতীর্থ বিধায়কদের প্রতিও রঞ্জিতের আবেদন, এলাকার মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।
কত দিন চলবে এমন পরিস্থিতি? ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার বক্তব্য, ‘‘ভোট এবং ফল প্রকাশ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। তার পরে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই কাজ করছে, অভিযোগ পাচ্ছি। কিন্তু এ সব অশান্তি, হিংসা চলতে দেওয়া যাবে না। পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের আমরা পরিষ্কার বলেছি, আইন আইনের পথেই চলবে। অভিযুক্ত যে পক্ষেরই হোক।’’ নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মানিক বৃহস্পতিবার ব্যক্তিগত সফরে কলকাতা গিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পানিসাগর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাসকে প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি রীতি মেনে বাকি বিধায়কদের শপথ পাঠ করাবেন।
ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের পরিস্থিতি দেখতে আজ, শুক্রবারই ত্রিপুরায় আসছে বাম ও কংগ্রেসের সংসদীয় প্রতিনিধিদল। বাম সাংসদ পি আর নটরাজন, এলামারম করিম, বিকাশ ভট্টাচার্য, এ এ রহিম, বিনয় বিশ্বমদের পাশাপাশি কংগ্রেসের তরফে সাংসদ গৌরব গগৈ, রঞ্জিতা রঞ্জন এবং আব্দুল খালিকের ওই দলে থাকার কথা। তিনটি দলে ভাগ হয়ে বাম ও কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে হিংসা কবলিত নানা জায়গায় ঘুরবেন তাঁরা। ত্রিপুরায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিনই কলকাতায় ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল হয়েছে বামফ্রন্টের ডাকে। মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy