Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: দিদির ‘কীর্তি’! দিল্লিতে তিন যোগদানের চমক, এ বার উত্তর ভারতেও পা রাখল তৃণমূল

শুধু উত্তর ভারত নয়, হরিয়ানার নেতা অশোককে ভবিষ্যতে ত্রিপুরার রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১ ২০:০১
Share: Save:

ত্রিপুরার পুরভোট থেকে গোয়ায় দলবদল। জাতীয় রাজনীতিতে ধারাবাহিক ভাবে খবরের শিরোনামে উঠে আসছে তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রমশই নিজেকে মোদী-বিরোধী শিবিরের ‘মুখ’ করে তুলছেন। রাজ্যে রাজ্যে সক্রিয়তা বাড়াচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই পরিস্থিতিতে মমতার দিল্লি সফরের সময় মঙ্গলবার জোড়াফুল শিবিরে যোগ দিলেন হিন্দি বলয়ের তিন প্রাক্তন সাংসদ— কীর্তি আজাদ, অশোক তনওয়ার এবং পবন বর্মা।

এই তিন নেতার তৃণমূলে যোগাদানের ফলে হিন্দি বলয়ের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। শুধু উত্তর ভারত নয়, হরিয়ানার নেতা অশোককে ভবিষ্যতে ত্রিপুরাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী অতীতে রাহুল গাঁধীর টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই এবং যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন হরিয়ানা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিও।

২০০৯ সালে হরিয়ানার সিরসা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন অশোক। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে হেরে যান। এর কিছু দিন পরেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার সঙ্গে মতবিরোধের জেরে দল ছাড়েন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে নতুন দল ‘আপনা ভারত মোর্চা’ গড়ার কথা ঘোষণা করেন অশোক। সেই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির ছিলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু, ত্রিপুরার ‘মহারাজা’ তথা ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যোৎ দেব বর্মন। বছর দুয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে নয়া রাজনৈতিক মঞ্চ ‘তিপ্রা মথা’ গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ।

গত এপ্রিলে সে রাজ্যের স্বশাসিত উপজাতি পরিষদের নির্বাচনে বিজেপি-আইপিএফটি জোটকে পর্যুদস্ত করে ক্ষমতা দখল করেছে ‘তিপ্রা মথা’। ত্রিপুরায় ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ উপজাতি পরিষদের এলাকায়। সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে প্রদ্যোৎ হাত মেলালে নিশ্চিত ভাবেই বিপাকে পড়বে বিজেপি।

বিহারের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগবৎ ঝা আজাদের ছেলে কীর্তি প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার। দু’দফায় দ্বরভঙ্গা থেকে বিজেপি-র সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসে যোগ দেন। ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ লোকসভা কেন্দ্র কংগ্রেস প্রার্থী করলেও কীর্তি জিততে পারেননি। ২০২০ সালের দিল্লির বিধানসভা ভোটে সঙ্গম বিহার আসনে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে যান তাঁর স্ত্রীও।

তৃণমূলের যোগদানকারী বিহারের আর এক নেতা পবন বর্মা রাজ্যসভার প্রাক্তন জেডি(ইউ) সাংসদ। প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) ঘনিষ্ঠ ওই নেতা এক সময় নীতীশ কুমারের পরামর্শদাতা দলেরও সদস্য ছিলেন। নীতীশের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং নাগরিকত্ব সং‌শোধনী আইন (সিএএ) বিরোধিতা করে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি জেডি(ইউ) থেকে বহিষ্কৃত হন। ঘটনাচক্রে, সেই দিনেই নীতীশ বহিষ্কার করেছিলেন পিকে-কে।

অতীতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের নেতা শ্যামসুন্দর শর্মা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জোড়াফুলের প্রতীকে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে লড়ে জিতেওছেন। কিন্তু কীর্তি বা অশোকের মতো হিন্দি বলয়ের পরিচিত মুখদের তৃণমূলে যোগদান এই প্রথম।

ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দি বলয় বরাবরই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সেই অঞ্চলের তিন নেতার তৃণমূলে যোগ দেওয়া তাই আগামী দিনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নজির হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে অশোক টুইটারে সেই বার্তাই দিয়েছেন— ‘ভারতীয় রাজনীতি আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়াল। এক দিকে আমরা বিজয়ের উল্লাস শুনছি। আর তার তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে প্রান্তিক মানুষের দুর্দশা এবং আর্তনাদ। স্রোতের মোড় ঘোরাতে এ বার আমাদের দরকার নতুন রাজনীতি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE