প্রতীকী ছবি।
এক সপ্তাহ আগেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চে আওয়াজ তুলেছিলেন, ধর্ম যাই হোক, সব ভারতীয়ের ডিএনএ এক। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা গণপ্রহারে বিশ্বাসী তারা হিন্দুত্ববাদী নয়।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই কথা বলে মুসলিম সম্প্রদায়কে একটি বার্তা দিতে চাইলেন সঙ্ঘপ্রধান এ কথা ঠিকই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলে কোনও মুসলিমকে মন্ত্রী করার কথা ভাবল না বিজেপি সরকার। সংখ্যালঘু-নীতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে যে ভাবে এগোতে চাইছে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার, তার একটি নির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক সূত্র। সেই কৌশলে মুসলিম মন্ত্রীর যেমন কোনও জায়গা নেই, তেমনই উগ্র মুসলিম বিরোধিতা না-করার বিষয়টিও রয়েছে। আর সে কারণেই ভাগবতের ওই নরম বার্তা।
বাংলার ভোটের পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটদানের প্রবণতা দেখে একটি নতুন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। আরএসএস-এরও উদ্বেগ ওই একই কারণে। সেটি হল, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গ ত্যাগ করে দলে দলে মুসলিমরা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, এমনটা যদি উত্তরপ্রদেশেও হয়? অর্থাৎ সেখানকার চর্তুমুখী লড়াইয়ে রাজ্যের ১৯ শতাংশ মুসলিম ভোট ভাগ না-হয়ে, বিজেপিকে হারানোর জন্য কোনও একটিমাত্র বিরোধী দলের (যেমন এসপি) ঝুলিতে জমা হয়? যার বিজেপিকে হারানোর সম্ভাবনা, শুধুমাত্র তারই হাত শক্ত করার প্রবণতা ইদানিং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিষয়টি যোগী আদিত্যনাথের কাছে উদ্বেগের।
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে উত্তরপ্রদেশে মুসলিম মন্ত্রী রাখাটা কি বুদ্ধিমানের কাজ হত না? বিজেপি সূত্রের মতে, সংখ্যালঘু মন্ত্রী করা হলেই যে বিজেপির দিকে মুসলিম ভোটের ঢল নামবে বিষয়টি এমন নয়। মুসলিম ভোট নিজেদের বাক্সে প্রত্যাশাও করেন-না বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু এই ভোট যাতে ভাগ হয়ে যায়, সেটাই বিভিন্ন রাজ্যে দলের কৌশল। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মন যদি অধিক বিপন্ন এবং ক্রুদ্ধ হয়ে থাকে, তা হলে তাদের কৌশলগত ভোটদানের (বিজেপিকে হারাতে এককাট্টা হয়ে কোনও একটি বিরোধী দলকে ভোট দেওয়া)
প্রবণতা বাড়বে।
উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন কারণে যোগী সরকারের উপর এমনিতেই ক্ষোভ রয়েছে। তাই মুসলিম সম্প্রদায়কে কিছুটা নরমে গরমে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, পাশাপাশি মুসলিম ভোট ভাগ করতে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-র মতো নেতাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি।
তবে মুসলিম মন্ত্রী না-করলেও উত্তরপ্রদেশের নতুন মন্ত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জাতের ভারসাম্য রাখা হয়েছে। তফসিলি, ওবিসি-র পাশাপাশি রাখা হয়েছে একমাত্র উচ্চবর্ণের মন্ত্রী হিসাবে অজয় মিশ্রকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপির তফসিলি মোর্চার অধ্যক্ষ তথা মোহনলালগঞ্জের সাংসদ কৌশল কিশোরকে মন্ত্রী করা হয়েছে, যিনি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার প্রশ্নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিলেন যোগী সরকারের বিরুদ্ধে। এই পদক্ষেপের পরে আলোচনা চলছে, আদিত্যনাথকেও কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুটা চাপে রাখতে চাইছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy