Advertisement
০১ অক্টোবর ২০২৪
Jammu and Kashmir Assembly Election 2024

বেচতে হয় জমি, আজ ভোট ‘বিনা পয়সার সিপাহি’দের

সীমান্তের অস্থির পরিস্থিতির জন্য এখানকার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর ধারাবাহিকতা এবং সংস্কৃতি– দুটোরই অভাব। এক পরিবারের কিছু সন্তান চাষবাস বেছে নিলে বাকিরা ঐতিহ্যগত ভাবেই যোগ দিয়েছেন সামরিক বাহিনীতে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অগ্নি রায়
আরএস পুরা (জম্মু) শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share: Save:

চন্দ্রভাগা নদীর জল এবং আর এস পুরার মাটি। স্থানীয় কিংবদন্তি, এই দুইয়ের মিশেলে তৈরি হওয়া ‘খুশবুওয়ালা’ চাল সেদ্ধ হওয়ার সময়ে নাকি ম ম করে এখানকার বাতাস। আবার সেই বাতাসে হামেশা বারুদেরও ঘ্রাণ।

দাঁড়িয়ে, ভারত পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে দু’কিলোমিটার দূরে। আশ্বিনের বাতাসে দিগন্ত পর্যন্ত ঢেউ খেলছে অবিশ্বাস্য ঘন সবুজ। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘ভাতের ভান্ডার’ হিসেবে পরিচিতি দক্ষিণ জম্মুর এই আর এস পুরা, সুচেতগড় এলাকা। “গুলি-গোলা বর্ষণের মধ্যেই এখানে চলে কৃষিকাজ। খুব বেশি গোলাবর্ষণ হলে থেমে থাকেন চাষিরা। আবার সব শান্ত হলে ক্ষেতে নামেন। এতটাই গা সওয়া,” বলছেন সরপঞ্চ যুগল কিশোর শর্মা। রাত পোহালে ভোট দিতে যাওয়ার আগে বলছেন, “এই গ্রামগুলিতে যাঁরা আছেন, তাঁরা সব বিনা পয়সার সিপাহি! সীমান্তের ও পার থেকে আসা আক্রমণের মুখে এঁরাই প্রথম পড়েন।”

সীমান্তের অস্থির পরিস্থিতির জন্য এখানকার ছেলেমেয়েদের পড়াশুনোর ধারাবাহিকতা এবং সংস্কৃতি– দুটোরই অভাব। এক পরিবারের কিছু সন্তান চাষবাস বেছে নিলে বাকিরা ঐতিহ্যগত ভাবেই যোগ দিয়েছেন সামরিক বাহিনীতে। কিন্তু অগ্নিবীর যোজনার পর সেনাবাহিনীকে পাকাপাকিভাবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ যথেষ্ট। তবু সেই ক্ষোভের ফায়দা কতটা ওঠাতে পারবে কংগ্রেস এবং এনসি প্রার্থীরা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিক্ষোভের জেরে (বিশেষ করে কংগ্রেসে) নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন অনেক বিজেপি-বিরোধী কংগ্রেস ঘেঁষা মুখ। যাঁদের স্থানীয় মানুষের মধ্যে প্রভাব রয়েছে। বিজেপি এই বিরোধী ভোটব্যাঙ্ক ভাগ হয়ে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এটাই বোঝা গেল, ‘হীরক রাজার দেশে’র সেই গান দক্ষিণ জম্মুর এই ভাতের ভান্ডারের ‘রিং টোন’ হতে পারে স্বচ্ছন্দে— ‘সোনার ফসল ফলায় যে তার দুই বেলা জোটে না আহার।’ হরিয়ানা, পঞ্জাব, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের থেকে পৃথক নয় জম্মুর এই ধনধান্য পুষ্পে ভরা সুচেতগঢের কৃষক-ঠকানো নীতি। ছোট চাষিদের আধুনিক গুদামের সুযোগ নেই। তারা বড় ব্যবসায়ীদের কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই ফসল চেপে রেখে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা বাড়িয়ে বেশি দামে মুনাফা করছেন বড় ব্যবসায়ীরা। মাঝে ফড়ে এবং দালালতন্ত্র ‘পুলাও’ খাচ্ছে। দেশে এবং ভারতের বাইরেও রফতানি হচ্ছে বাসমতী। সাতারা গ্রামের কৃষক লাভা রামজির কথায়, ‘‘ছোট চাষিরা জমি বেচে দিচ্ছেন নামমাত্র দামে, অভাবের তাড়নায়। অপেক্ষাকৃত বড় চাষিদের ঘরে বস্তা বস্তা ধান পড়ে থাকছে। আর ধনী ব্যবসায়ীদের সম্পত্তি বাড়ছে।”

দু’দিকে ঠাসা সবুজের মাঝ বরাবর এসে থামলাম চকরোই গ্রামে সম্পন্ন চৌধরি পরিবারের প্রাঙ্গণে। বিভিন্ন আনাজের পকৌড়া আর লবঙ্গ দেওয়া চা এল। হিন্দু অধ্যুষিত এই সব গ্রামে স্থানীয় ক্ষোভ সত্ত্বেও বিজেপি-র জেতার সম্ভাবনাই বেশি, এখানকার উঠোনের ভিড় তেমনই জানাল। বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন বিধায়ক জগৎরাম ভগৎ এবং তার বাহিনী গত দু’মাস ধরে মাঠে দাঁড়িয়ে প্রচারের কাজ করছেন। তুলনায় কংগ্রেস প্রার্থীই বেছেছে একেবারে শেষ মুহূর্তে। আর যাঁকে বাছা হয়েছে, সেই ভূষণ ডোগরা বহিরাগত। উঠোনের জমায়েত বলছে, কিষান এবং জওয়ান খতম হয়েছে গত দশ বছরে বিজেপি-র জমানায়। এখানে কংগ্রেস ভাল প্রার্থী দিলে তাদের জয় নিশ্চিত ছিল।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার ফলে নানা ভাবে লোকসান দেখছে জম্মু সীমান্ত। স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানের দিক থেকে পুঞ্চি সম্প্রদায়ের বহু হিন্দু ধারাবাহিক ভাবে এ পারে এসেছেন, সরকার তাদের জমি-জায়গা দিয়েছে। সীমান্তের লাগোয়া হলে পরিবার পিছু বেশি জমি, একটু দূরে হলে তুলনামূলকভাবে কম। পরবর্তীকালে আরও মানুষ আসেন, তাঁদের এককালীন টাকাও দেওয়া হয়।

এ বার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা বিরাট সংখ্যক এই সম্প্রদায় সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ভর্তির ক্ষেত্রে সুবিধা চাইছেন তাঁরা। সামাজিক সংঘাত শুরু হয়েছে এই নিয়ে স্থানীয় স্তরে। জানা গেল, ৩৭০ তুলে দেওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু হিন্দু জনতার ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছে। জমির অধিকার তো দেওয়া হয়েছিল আগেই। কিন্তু স্থানীয় তফসিলি জাতি ও জনজাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে চাষের জমির অধিকার এখনও দেওয়া হয়নি। জমির মালিকানা সরকারেরই, আর সেখানে চাষ করে ফসল তুলে বিক্রির অধিকার স্থানীয় কৃষকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Assembly Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE