সেনার উদ্যোগে শ্রীপল্লির স্মৃতিসৌধ ঘিরে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
বিজয় দিবসে আগরতলায় ডুকলির শ্রীপল্লি এলাকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মৃতিসৌধে এ বারও কোনও অনুষ্ঠান হবে না। একাত্তরের যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা-সহ ১২ জনের স্মরণে শ্রীপল্লি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সরকারের দেওয়া জমিতে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছিল। আগে এই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা ভুবন দাসের উদ্যোগে এখানে ছোট অনুষ্ঠান হত। সেখানে অ্যালবার্ট ও অন্য সেনাদের গল্প সবাইকে বলতেন ভুবনবাবু। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই কাহিনি শোনানোর আর কেউ নেই। স্থানীয়দের দাবি, সরকারও যথেষ্ট উদ্যোগী নয়। অ্যালবার্টদের গল্প নতুন প্রজন্মকে বলা জরুরি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে শ্রীপল্লিতে ১৪ গার্ড রেজিমেন্টের ক্যাম্প ছিল। নিজের জমির একটি অংশ সেনাদের ক্যাম্প করার জন্য দিয়েছিলেন ভুবন। বাংলাদেশের আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর এলাকায় পাকিস্তানের বাঙ্কারে আঘাত হানার সময়ে ওই রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট-সহ ১২ জন সেনা মারা যান। তাঁদের মৃতদেহ শ্রীপল্লিতে ফেরার পরে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছিলেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ওই দিন গাড়ি থেকে সেনাদের দেহগুলি ভুবন দাসই নামিয়ে এনেছিলেন। অ্যালবার্ট মরণোত্তর পরমবীর চক্র পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের স্মৃতিতে গড়া সৌধটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি উদ্যোগ কার্যত দেখা যায়নি। ভুবনই যুদ্ধের পর থেকে সৌধটিকে আগলে রেখেছিলেন। প্রত্যেক বছরের ১৬ ডিসেম্বর তিনি নিজেই সৌধটিকে ধুয়েমুছে ফুল দিয়ে, ধূপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতেন।
কোভিড-কালে প্রয়াত হয়েছেন ভুবন। তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী রুমা দাস জানালেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরের কাছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছেন তিনি। প্রত্যেক বছরের ১৬ ডিসেম্বর ওই সৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করাটা প্রায় ভুবনের কর্তব্য হয়ে উঠেছিল। ছোট্ট অনুষ্ঠানে সেনাদের গল্প শোনাতেন তিনি। কিন্তু তাঁর অবর্তমানে এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে অ্যালবার্টদের আত্মত্যাগের গল্প বলার কেউ নেই।
মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশতাব্দী পরে সেনাবাহিনী এই স্মৃতিসৌধটির চারপাশে সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছে। কিন্তু সেনা জানিয়েছে, বিজয় দিবসে তারা এই সৌধে এসে আলাদা কোনও অনুষ্ঠান করবে না। কারণ আগরতলা শহরের অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে মূল অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে। রুমা-সহ এলাকাবাসীর আর্জি, নিহত ওই সেনাদের স্মৃতিতে তৈরি প্রথম সৌধ এটিই। তাই রাজ্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ করে এর ইতিহাস
সংরক্ষণ করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy