গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হলে বেতন ও পেনশন খাতে খরচ বাড়বে আনুমানিক প্রায় ৩০-৩২ হাজার কোটি টাকা। সেই বাড়তি অর্থের কিছু অংশ যাত্রিভাড়া বৃদ্ধি করে জোগাড়ের পরিকল্পনা করেছিল রেল মন্ত্রক। কিন্তু দিল্লি নির্বাচন ও শরিকি চাপের কথা মাথায় রেখে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র। যার অর্থ, আসন্ন বাজেটে রেলের ভাড়া বাড়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরে ১৮ হাজার কোটি ও সপ্তমের পরে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বোঝা চেপেছিল রেলের ঘাড়ে। আগামী বছর অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হলে, রেলের কর্তাদের ধারণা, বেতন ও পেনশন খাতে অতিরিক্ত খরচ প্রায় ৩০-৩২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। এমনিতেই রেলের কোষাগারের নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। রেলের একটি সূত্রের দাবি, বর্তমানে রেলের অপারেটিং রেশিয়ো ৯৮.৬৫%-এর কাছাকাছি। অর্থাৎ এখন রেলের একশো টাকা আয় করতে গেলে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯৯ টাকা। হাতে পড়ে থাকছে খুব সামান্য অর্থ। যা দিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করে থাকে রেল।
এই আবহে অষ্টম বেতন কমিশনের ধাক্কা সামলাতে যাত্রিভাড়া খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা ভেবেছিল রেল। গত ডিসেম্বরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংসদে জানান, বর্তমানে রেল যাত্রিভাড়ায় ৫৬,৯৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। গড়ে প্রতিটি টিকিটে প্রায় ৪৬ শতাংশ ভরতে হয়ে রেলকে। তাই অষ্টম বেতন কমিশনের চাপ কমাতে যাত্রিভাড়া বাড়িয়ে ওই খাতে ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল রেল মন্ত্রক। যদিও তা খারিজ করে দিয়েছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। যুক্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সময় ভাড়া বাড়ানোর জন্য আদর্শ নয়। বাজেটের তিন দিনের মাথায় দিল্লিতে ভোট। এই ভোটারদের বড় অংশ হলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। বাজেটে ভাড়া বাড়লে পরিযায়ী ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া, তৃতীয় মোদী সরকার শরিক নির্ভর। বিহারের একাধিক দল এখন সরকারের শরিক। এ বছরেই বিহারে নির্বাচন রয়েছে। সেই নির্বাচনের আগে ট্রেনের টিকিটের ভাড়া বাড়লে শরিকেরা যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা বিলক্ষণ জানেন নরেন্দ্র মোদীরা। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদের পাশাপাশি শরিক দলের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বিজেপিকে। তাই শরিকি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি মাথায় রেখেই যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির মতো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন মোদী-শাহেরা।
তা ছাড়া, বর্তমানে টিকিটের দাম ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ পদ্ধতিতে বৃদ্ধি হয়। অর্থাৎ একই দূরত্বের ক্ষেত্রে দেরি করে টিকিট কাটলে বেশি দামে টিকিট কাটতে হচ্ছে যাত্রীকে। এ ছাড়া, তৎকাল প্রিমিয়াম টিকিটের ক্ষেত্রেও যাত্রীকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রবীণ ব্যক্তির টিকিটে ছাড় দেওয়ার সুবিধা। ফলে সব মিলিয়ে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে ট্রেনের বাতানুকূল (এসি) শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে বিমানের কাছে যাত্রী হারাতে হবে রেলকে। যাত্রিভাড়া বাড়ানোর আদর্শ পরিস্থিতি রয়েছে দূরপাল্লার সংরক্ষিত স্লিপার শ্রেণিতে। কিন্তু দেশের আমজনতা ওই শ্রেণিতে ভ্রমণ করে। ওই শ্রেণির ভাড়া বাড়লে আমজনতার ক্ষোভ ভোটের বাক্সে ফের বিজেপির বিপরীতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জনসমর্থনের কথা মাথায় রেখে ভাড়া বাড়ানোর মতো সাহসী ও সংস্কারমুখী পদক্ষেপের পরিবর্তে, ভর্তুকির নীতিতেই রেল যেমন চলছে ঠিক তেমনই চলুক, চাইছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy