Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

অর্থনীতিতে প্রশ্ন অনেক, জবাব নেই মোদীর

দেশের বাজারে বিক্রিবাটা যখন কমতির দিকে, তখন শিল্পপতিরা নতুন লগ্নি করবেন কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দেননি।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র। পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র। পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

বাজারে বিক্রিবাটা নেই। গাড়ি-স্কুটার হোক বা সংসারের জিনিসপত্র, কারখানায় যা তৈরি হচ্ছে, তা-ই বিকোচ্ছে না। তাই নতুন লগ্নিও আসছে না। চড়া হারে কর দিতে নারাজ শিল্পপতিরা এ দেশের বদলে বিদেশে কারখানা খুলতে বেশি আগ্রহী। ঝিমিয়ে পড়া এই অর্থনীতি নিয়ে প্রথম মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করলেন, আগামী পাঁচ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির লক্ষ্য স্থির করছে তাঁর সরকার।

দেশের বাজারে বিক্রিবাটা যখন কমতির দিকে, তখন শিল্পপতিরা নতুন লগ্নি করবেন কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দেননি। তবে একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ভারতে আস্থা রাখুন। দেশের বাজারের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনায় ভরসা রাখুন।’’ গাড়ি শিল্পের ঝিমিয়ে পড়াকেও ‘সাময়িক’ বলে দাবি করেছেন মোদী।

প্রধানমন্ত্রী যা-ই বলুন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেক দেবরায়ের দাবি, চলতি অর্থ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশই থাকবে, ৭ শতাংশ নয়। যদিও মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি মতো ৫ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতিতে পৌঁছতে হলে ৮ শতাংশ বৃদ্ধির দরকার বলে বিবেকের হিসেব। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জিএসটি-র করের হার ও আয়কর, কর্পোরেট কর কমানোর শর্ত রেখেছেন তিনি।

বাজেটের আগে শিল্পমহলও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে একই রকম দাওয়াইয়ের দাবি তুলেছিলেন। তেমন কিছু মেলেনি। গত সপ্তাহে ফের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিল্পমহল দাবি তুলেছে, এক লক্ষ কোটি টাকার ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য, শিল্পমহলের ‘অ্যানিম্যাল স্পিরিট’ জাগিয়ে তুলতে তিনি যত দূর সম্ভব যাবেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘বাজেট শুরুও নয়, শেষও নয়। আমরা রোজ সমস্যা বুঝছি। সমাধানের চেষ্টা করছি।’’

কিন্তু ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ’-এর টাকা আসবে কোথা থেকে? বৃদ্ধির হার পড়তির দিকে। ফলে রাজস্ব আয়ও কমবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ, সরকারি সংস্থার সম্পদ বেচে ৩ লক্ষ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আজ বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু বাজারে যখন চাহিদা পড়তির দিকে, শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, তখন বিলগ্নিকরণ বা সরকারি সংস্থার সম্পদ বেচেও এত টাকা ঘরে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বাজেটের পর থেকেই শেয়ার বাজারে ধস নামার প্রধান কারণ ছিল, অতি-ধনীদের উপরে বসানো বাড়তি কর বিদেশি লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের উপরেও চেপেছে। কাফে কফি ডে-র কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে শিল্পমহল আয়কর-সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, সৎ, আইন মেনে চলা ব্যবসায় সব রকম সাহায্য করা হবে। কিন্তু শিল্পমহলের অভিযোগ, সরকার অস্বাভাবিক কর আদায়ের লক্ষ্য রেখেছে বলেই কর দফতরের কর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।

প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলিকেও সুদের হার কমাতে হবে। হাতে থাকা নগদ ধার দিতে হবে। নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীর ব্যাঙ্ক প্রতারণার পরে সিবিআই ধরপাকড় শুরু করায় ব্যাঙ্ক-কর্তারা সিদ্ধান্ত নেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মোদীর বক্তব্য, ‘‘ব্যাঙ্কাররা প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বন্ধ করে দিলে বৃদ্ধি সম্ভব নয়। আশ্বাস দিচ্ছি, ব্যবসায়িক যুক্তিতে নিষ্ঠার সঙ্গে নেওয়া সিদ্ধান্তে সমস্যা হবে না।’’ অর্থনীতিবিদদের পাল্টা প্রশ্ন, কেউ লগ্নি করছেন না। তাই ঋণ চাইতেও যাচ্ছেন না। ব্যাঙ্কগুলো কী করবে? কাকে ঋণ বিলি করবে? সুদ কমিয়েই বা কী লাভ হবে?

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy