Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CPM

ইয়েচুরির পথেই এগোবে দল, বুঝিয়ে গেলেন কারাট

বন্ধু ইয়েচুরির আকস্মিক মৃত্যুতে পলিটব্যুরোর তরফে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হয়েছে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাটকে। তার পরে এই প্রথম তাঁর বঙ্গ সফর।

সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় (সামনের সারিতে বাঁ দিক থেকে) সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, প্রকাশ কারাট-সহ বাম নেতৃত্ব।

সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভায় (সামনের সারিতে বাঁ দিক থেকে) সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, প্রকাশ কারাট-সহ বাম নেতৃত্ব। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৪০
Share: Save:

হাসপাতালে যাওয়ার আগে শেষ পলিটব্যুরোর বৈঠকে তিনি তৈরি করে ফেলেছিলেন আগামী পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে দলের প্রস্তুতি-পর্বের সময়সূচি। হাসপাতালে বসেও তাঁর নজরে ছিল পার্টি কংগ্রেসের জন্য দলিল তৈরি এবং রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনকে আরও কার্যকরী করার দিকে। প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির তৈরি করে যাওয়া সেই সময়সূচি, সেই পথ ধরেই এগোবে সিপিএম। দীর্ঘ ৫০ বছরের সতীর্থের স্মৃতিচারণ করতে কলকাতায় এসে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট।

বন্ধু ইয়েচুরির আকস্মিক মৃত্যুতে পলিটব্যুরোর তরফে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হয়েছে সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাটকে। তার পরে এই প্রথম তাঁর বঙ্গ সফর। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে রাজ্য সিপিএমের আয়োজিত ইয়েচুরির স্মরণ-সভায় বৃহস্পতিবার কারাট বলেছেন, ‘‘সীতারাম যখন সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন, তখন দেশে বিজেপি ক্ষমতায় এসে গিয়েছে। বিজেপি-আরএসএস’কে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যেই আমৃত্যু সীতারাম কাজ করেছেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁর নেতৃত্বে দলের পার্টি কংগ্রেসে কৌশলগত লাইন গৃহীত হয়েছে এবং সীতারাম নিজে সেই লাইন বাস্তবায়িত করেত ভূমিকা নিয়েছেন। এ বারের লোকসভা ভোটে বিজেপি যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেটা এই কৌশলগত লাইনের সাফল্যই ধরতে হবে। দিল্লিতে তাঁর স্মরণ-সভায় এসে অন্তত ১২টি দলের নেতারা বিরোধী ঐক্যে সীতারামের ভূমিকার কথা বলে গিয়েছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাম ও গণতান্ত্রিক ঐক্যকে শক্তিশালী করে সঙ্ঘ-বিজেপিকে কী ভাবে আরও কোণঠাসা করা যায়, আগামী পার্টি কংগ্রেসের জন্য সেটাই ছিল সীতারামের লক্ষ্য। যৌথ ভাবে এখন আমাদের সেই কাজ করতে হবে, সেটাই হবে প্রিয় সীতারামের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা।’’

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ( জেএনইউ) প্রাঙ্গণে ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে ইয়েচুরির সঙ্গে কারাটের একত্রে পথ চলা শুরু। পুরনো স্মৃতির টুকরো তুলে এনে কারাটের মন্তব্য, ‘‘উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেধাবী ছাত্র ছিলেন সীতারাম। এত ঝকঝকে শিক্ষাগত কেরিয়ার, সীতরাম আইএএস, অর্থনীতিবিদ, কর্পোরটের কর্তা বা ব্যাঙ্কের চাকরি— যে কোনও কিছুই হতে পারতেন। কিন্তু হয়েছিলেন বিপ্লবী! কারণ, গোড়া থেকেই উনি মার্ক্সবাদ আত্মস্থ করেছিলেন।’’ সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা স্মরণ করছেন, গত ৬ অগস্ট পলিটব্যুরোর বৈঠকে ইয়েচুরি পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতির জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি-সহ নানা আলোচনার সময়সূচি পেশ করেছিলেন। হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি হতে হয়েছিল ১৯ অগস্ট। সেখানেও কারাটেরা দেখা করতে গেলে আগামী পার্টি কংগ্রেস নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। তাঁর পরিকল্পিত কাজ যে অসস্পূর্ণ থেকে গেল, তাকেই এখন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন কারাট।

ইয়েচুরির কথা উদ্ধৃত করেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বাংলায় বামপন্থার পুনর্জাগরণ ছাড়া দেশে বামপন্থীদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। এটা সীতারাম বিশ্বাস করতেন। সেই কাজ করেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে।’’ বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিমেরু ভাষ্য ভাঙার প্রসঙ্গে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘ঘরছাড়া দলীয় সমর্থক বা সন্ত্রাসে আক্রান্তদের নিয়ে আমরা যখন লাল পতাকা নিয়ে কর্মসূচি করেছি, তখন বলা হয়েছিল দূরবীনেও দেখা যাচ্ছে না! যাঁরা তখন দূরবীনে দেখতে পাননি, তাঁরাই এখন আর জি কর-কাণ্ডে নাগরিক প্রতিবাদ এবং সব কিছুর পিছনে সিপিএমকে দেখতে পাচ্ছেন, পতাকা না-থাকলেও! কারণ, ওই দ্বিমেরু ভাষ্য ভাঙছে।’’ গণতান্ত্রিক শক্তি ও মানুষের ব্যাপকতর ঐক্যের কথা বলেছেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, কর্মীদের আরও পরিশ্রমের পরামর্শ দিয়েছেন বিমান বসু।

স্মরণ-সভায় এ দিনের ভিড় প্রেক্ষাগৃহ উপচে গিয়ে পড়েছিল বারান্দায়। সেখানে ছিল জায়ান্ট স্ক্রিন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy