মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে অজিত পওয়ার। সঙ্গে এনসিপি নেতা ছগন ভুজবল (ডান দিকে) ও প্রফুল্ল পটেল (বাঁ দিকে)। সোমবার মুম্বইয়ে। পিটিআই।
গত কাল রাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ১৭ এবং ১৮ তারিখ পটনা-পরবর্তী বিরোধী বৈঠকটি হবে বেঙ্গালুরুতে। আজ রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ছায়া পড়তে চলেছে। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরু বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে, বিজেপির এই বিরোধী ভাঙানোর আগ্রাসী কৌশলকে প্রতিহত করার সূত্র খোঁজা। সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী মনে করেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে যদি বিরোধীরা ভাল ফল করে, তা হলে বিজেপি আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে তারা আরও সরকার ভাঙার জন্য ঝাঁপাবে। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং কর্নাটকেও বিধায়কদের ‘কিনে নিয়ে’ সরকার ফেলে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা।
মহারাষ্ট্রের ঘটনার পর যে বিরোধী অনেক দলই আতঙ্কিত, তা আজ স্পষ্ট। জেডিএস নেতা তথা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী আজ বলেছেন, ‘‘আমি তো ভয় পাচ্ছি, এই ভেবে যে কর্নাটকে কে অজিত পওয়ার হিসাবে উঠেন আসেন!’’ একই ভাবে বিহারেও ‘অপারেশন লোটাস’ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে নীতীশ কুমারের সরকার। বিশেষ করে যখন সিবিআই আজই জমির বিনিময়ে চাকরি কেলেঙ্কারি মামলায় আরজেডি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করেছে। তাতে নাম রয়েছে লালু প্রসাদ, রাবড়ি দেবীরও।
প্রকাশ্যে অবশ্য কংগ্রেস এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মহারাষ্ট্রের ঘটনা তাদের বিজেপি-বিরোধী লড়াইকে আরও শক্তিশালী করবে। নতুন করে উজ্জীবিত করবে। আজ সকালে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল টুইট করে জানান, ‘‘পটনায় বিপুল ভাবে সফল হওয়া বৈঠকের পর আমরা বেঙ্গালুরুতে ১৭ এবং ১৮ তারিখ আমাদের পরবর্তী বৈঠকটি রাখছি। ফ্যাসিবাদী এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিকে হারানোর জন্য এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা দৃঢ়সংকল্প।” এর ঠিক কয়েক মিনিট পরেই তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন টুইট করে বৈঠকের তারিখ জানিয়ে বলেন, ‘‘সবাই মিলে এক। একের জন্য সবাই।’’ এর কিছুক্ষণ পর কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের টুইট, ‘‘গত কাল যখন বিজেপির ওয়াশিং মেশিন মুম্বইয়ে আইস ডিটারজেন্ট (ইনকাম ট্যাক্স, সিবিআই, ইডি) ফের কাজ শুরু করে, তখন বিরোধী ঐক্যের শোকগাথা লেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সব লেখকরা হতাশ হবেন। পটনার পর ১৭ এবং ১৮ তারিখ বেঙ্গালুরুতে বিরোধী দলগুলির বৈঠক হচ্ছে। মুম্বইয়ের ঘটনা বিরোধীদের প্রতিজ্ঞাকে আরও উজ্জীবিত করেছে।”
প্রসঙ্গত এর আগেই এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার নিজের মতো করে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ১৩ এবং ১৪ তারিখ বেঙ্গালুরুতে বিরোধী বৈঠকের কথা। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, দিন স্থির করার আলোচনা যখন চলছে, তখন কাউকে না জানিয়ে তিনি একতরফা ভাবে এই ঘোষণা করেছেন। প্রসঙ্গত ১৩ তারিখ মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছে ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান ৩। স্বাভাবিক ভাবেই ওই দিন সমস্ত সংবাদমাধ্যমের মুখ যাতে সে দিকে ঘোরানো থাকে, তা নিশ্চিত করবে মোদী সরকার, এমনটাই মনে করছে অন্য বিরোধী দলগুলি। ফলে তাদের যুক্তি, ওই দিন বিরোধী বৈঠক রাখা অনর্থক।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রথমে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্থির হয়েছিল, মোদীর ওবিসি-রাজনীতির মোকাবিলা করতে জাতিগণনার দাবি কী ভাবে তোলা যায়, তার কৌশল স্থির করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বেঙ্গালুরু বৈঠকে। পাশাপাশি বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহারের বিষয়েও আলোচনার কথা স্থির হয়েছিল। কিন্তু আসন্ন বৈঠকে বিষয়গুলি টেবিলে থাকলেও সামনে চলে আসবে বিজেপির দল ভাঙানোর বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে রুখে দাঁড়ানো। আজ তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে ১৭ এবং ১৮— দুদিন ধরেই চলবে আলোচনা। ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় দলনেতারা বেঙ্গালুরু পৌঁছে ঘরোয়া ভাবে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরের দিন হবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
এই বৈঠকে যে বিআরএস থাকবে না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছেলেন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। তাঁর বক্তব্য, সামনেই বিধানসভার ভোটে তাঁর দল কংগ্রেসের সঙ্গে লড়ছে। ফলে এখন কংগ্রেসের সঙ্গে এক টেবিলে বসা সম্ভব নয়। অন্য দিকে রাহুল গান্ধীও রবিবার তেলঙ্গনায় গিয়ে কেসিআর-এর বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়ে এসেছেন। তবে এতদসত্ত্বেও বিআরএস যে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যেই রয়েছে, সে কথা কেসিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তৃণমূলকে। আজ এসপি নেতা অখিলেশ যাদবও গিয়ে দেখা করেছেন কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে। বৈঠকের পর তিনি জানিয়েছেন, ‘‘বিজেপি-বিরোধী সমস্ত দল একসঙ্গেই রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy