প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভার ভোট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর এই নির্বাচনে ফিরে পাচ্ছে না রাজ্যের মর্যাদা। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত দল বা জোটের নেতা মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁর মাথার উপর ছড়ি ঘোরাবেন সেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরই।
বিষয়টিকে গোড়া থেকেই তাঁদের প্রচারে এনেছেন এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীরা। রাহুলের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, জিতে এলে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে জম্মু ও কাশ্মীরকে। শুধু কংগ্রেস, এনসি বা পিডিপি-র প্রচারে নয়, এই ক্ষোভ জম্মু ও কাশ্মীরের আমজনতারও। এই নিয়ে সংশয় এবং ক্ষোভ যাতে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ককে ধাক্কা না দেয়, তাই আজ এখানকার তৃতীয় এবং শেষ দফার ভোটের আগে তাঁর শেষ প্রচারে বিষয়টি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জম্মুতে নির্বাচনী সভায় বলেছেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা এক সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। খুব শীঘ্রই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি এনসি, পিডিপি এবং কংগ্রেসকে ‘পরিবারবাদী দল’ হিসsবে চিহ্নিত করে জানিয়েছেন, উপত্যকাবাসীর কাছ থেকে উন্নয়ন এবং অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে এরা তাঁদের দুর্দশা বাড়িয়েছে মাত্র।
অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘ঈশ্বরজীবী প্রধানমন্ত্রী আজ জম্মুতে। তাঁকে চারটি প্রশ্ন করতে চাই।’’ বিশদে যে চারটি প্রসঙ্গ তিনি তুলেছেন, সেগুলি এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি, ‘দরবার মুভ’ বন্ধ করে জম্মুকে আর্থিক ভাবে চাপে ফেলা, কেন্দ্রের প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক চোরাচালান বৃদ্ধি এবং সার্বিক প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে। জয়রামের কথায়, ‘‘বিজেপি দাবি করে, তারা জাতীয়তাবাদের একমাত্র ধারক ও বাহক। কিন্তু তাদের রাজত্বে জম্মুর নিরাপত্তা পরিস্থিতির অভূতপূর্ব অবনতি ঘটেছে। প্রায় পনেরো বছর পরে সন্ত্রাসবাদ ফিরেছে জম্মুতে।’’ জয়রামের বক্তব্য, রাজ্যের মর্যাদা ছাড়া, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়েছে। পুলিশি ব্যবস্থা ডকে উঠেছে। বেড়েছে অপরাধের ঘটনা ও দুর্নীতি। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস-পন্থীরা সব সরকারি বরাত পাচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। উন্নয়নের দিকে প্রশাসনের নজর নেই। উচ্চাকাঙ্খী যুবারা কাজের সন্ধানে জম্মু ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।’’
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য জনসভায় দাবি করেছেন, ‘‘জম্মু কি ইয়েহি পুকার/ আ রাহি হ্যায় বিজেপি সরকার!’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপিই এক মাত্র দল, যারা এই এলাকাকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। এনসি, কংগ্রেসের মতো দল জম্মু ও কাশ্মীরের পরিবর্তনগুলিতে ক্ষুব্ধ। কারণ তারা আপনাদের উন্নয়ন চায় না। তারা বলছে সরকার গঠন করে ফের পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে। অর্থাৎ সেই বৈষম্যমূলক আচরণ, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জম্মু।’’
বিরোধী শিবিরের মতে, যে হেতু জম্মুতে বিজেপির ভিত শক্ত, তারা গোড়া থেকেই জম্মু বনাম কাশ্মীরের একটি লড়াই তৈরি করতে চেয়েছে। তাতে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুর সঙ্গে উপত্যকার মুসলমানদের ধর্মীয় বিভাজন করা সম্ভব। পাশাপাশি জম্মুর কিছু পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়কে তফসিলি জনজাতির তালিকায় এনে তুষ্টিকরণের রাজনীতিও করছে বিজেপি। যে সম্প্রদায়ের একাংশ মুসলমানও বটে। ফলে মুসলমান ভোটেও কিঞ্চিৎ ভাঙন ধরিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র প্রার্থীকে হারাতেই এই কৌশল। মোদীর কথায়, ‘‘ওই তিনটি দল (এনসি, পিডিপি, কংগ্রেস) শুধু যে স্থানীয় ডোগরা সম্প্রদায়কে হীনবল করেছে, তা নয়, তাদের শাসকদেরও অপমান করেছে। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার কংগ্রেস আর তারাই কি না ডোগরাদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে! গত দশ বছরে এখানে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে অসাম্যকে দূর করেছে বিজেপি।’’ পাশাপাশি জম্মুতে আরও বিনিয়োগ আরও বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থানের স্বপ্ন তাঁর বক্তৃতায় বুনেছেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy