সংসদ ভবন। — ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন ফাঁস কাণ্ডে আলোচনা চেয়ে আজ দফায় দফায় উত্তাল হল সংসদের উভয় কক্ষ। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর মাইক্রোফোন বন্ধ করার অভিযোগও উঠল। শেষে আজ দিনের জন্য বাতিল করতে হয় লোকসভার অধিবেশন। যার ফলে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কই শুরু করা যায়নি। যা সংসদীয় ইতিহাসে কার্যত নজিরবিহীন। শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের অবশ্য দাবি, প্রশ্ন ফাঁস-সহ সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত সরকার।
আজ থেকে সংসদের উভয় কক্ষে রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের উপর ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা ছিল। যদিও গত কালই রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী দলের নেতারা ওই বিতর্কের আগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আলোচনার দাবি জানান। সেই মতো আজ রাহুল, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিরোধী দলের লোকসভার নেতারা মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন। রাজ্যসভায় ২২ দলের নেতারা মুলতুবি প্রস্তাব জমা দিলেও তা খারিজ করেন রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়।
কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ জয়রাম রমেশের দাবি, ‘‘২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যসভায় কোনও মুলতুবি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। আজ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গকে বিষয়টি তুলতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’’ রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্রিয় ছাত্ররা, আজ রাজ্যসভায় একশোরও বেশি সাংসদ এবং লোকসভায় আড়াইশো সাংসদ চেষ্টা করেছিলেন সংসদে আপনাদের মনোভাবকে তুলে ধরার। কিন্তু সরকার আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি। তারা নিজেদের দেবতাকে বন্দনা করতেই ব্যস্ত!’’ বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে আজ রাজ্যসভা দফায় দফায় বন্ধ হলেও, দুপুরের পর থেকে উচ্চ কক্ষে ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্ক শুরু হয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত দশ বছর বিভিন্ন বিষয়ে বিজেডি সাংসদেরা সরকারের পাশে থাকলেও, আজ রাজ্যসভায় তাঁদের সরকার-বিরোধিতায় সরব হতে দেখা যায়।
লোকসভায় স্পিকার ওম বিড়লা মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে বলেন, ‘‘ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্ক থামিয়ে অন্য বিষয়ে আলোচনা যে হওয়া সম্ভব নয় তা আগেই বলেছি। আপনারা বিতর্কে সব বিষয়ে আলোচনা করুন। আমি আশা করব, সরকারও আপনাদের তোলা বিষয়গুলির জবাব দেবে।’’ পাল্টা যুক্তিতে রাহুল বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, বিরোধী ও শাসক দল মিলে দেশের পড়ুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হোক। বোঝানো হোক যে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাকে আমরা সকলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করছি। সেই কারণেই নিট কাণ্ড নিয়ে আলোচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’’ স্পিকার দাবি খারিজ করলে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলের সাংসদেরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। প্রথম দফায় বেলা বারোটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। প্রশ্ন ‘ফাঁস’ হওয়া রুখতে হাতে ‘এম-সিল’ নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেন পঞ্জাবের আম আদমি দলের সাংসদ রাজকুমার ছাব্বেওয়াল। আজ রাহুল বক্তব্য শুরু করার আগে তাঁর মাইক চালু করার জন্য অনুরোধ করেন স্পিকারের কাছে। যা নিয়ে বিতর্ক হয়। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাহুলের মাইক্রোফোন বন্ধ করে যুব সমাজের কণ্ঠস্বরকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে লোকসভায়। যদিও তা বন্ধ রাখার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক পক্ষ। স্পিকারের দাবি, ‘‘আগেও বলেছি, আমার কাছে মাইক্রোফোন চালু-বন্ধের সুইচ থাকে না।’’
বেলা বারোটা নাগাদ লোকসভার অধিবেশন শুরু হলে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আলোচনার দাবিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, হনুমান বেনিওয়াল, গুরজি সিংহ অউঝলার মতো বিরোধী সাংসদেরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কেন্দ্রীয় সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু আশ্বাস দেন, ‘‘সরকার বিতর্কে সব ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।’’ যদিও বিরোধী সাংসদেরা নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তা দেখে লোকসভার অধিবেশন দিনের মতো বাতিল করে দেন স্পিকার। সূত্রের মতে, আজ ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্ক হতে না দিয়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ঘিরে বিতর্কের প্রথম দিন বিরোধীরা ভেস্তে দিয়েছেন এমন ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। ফলে রাজনীতির অনেকের মতে, আগামী সোমবার থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম হবে সংসদে। পরে সংসদের বাইরে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আলোচনা না করতে দেওয়ার মনোভাবকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন রাহুল। সমাজমাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, ‘‘নিট-এ কারচুপি ও প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সংসদে গঠনমূলক আলোচনা চেয়েছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের যে আমাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। ...আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে আলোচনার দাবি জানাচ্ছি এবং পড়ুয়াদের যোগ্য সম্মান দেওয়ার অনুরোধ করছি।’’
সরকারের পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস দুর্নীতিকে চাপা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বুঝেই এ নিয়ে আলোচনায় সম্মতির বার্তা ফের দিয়েছেন ধর্মেন্দ্র। আজ সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘গত কাল রাষ্ট্রপতি যখন নিজেই সমস্যাটির উল্লেখ করেছিলেন, তখনই বোঝা যায় সরকার আলোচনায় প্রস্তুত। তা হলে এত বিভ্রান্তির কী আছে! আমি পড়ুয়া ও তাঁদের বাবা-মায়েদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যে সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলির প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, সেগুলি তৈরির দায়িত্বে ছিল ‘ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি’ (এনটিএ)। যার খোলনলচে বদলে ফেলতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে সরকার। কোন পন্থায় ওই সংস্থাকে আরও উন্নত করা যায়, তা জানতে চেয়ে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাছে পরামর্শ চেয়েছে ওই কমিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy