Advertisement
E-Paper

Pak-Taliban: পাশে আইএসআই, দিল্লির চিন্তা বাড়িয়ে আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে পাক-তালিবান

ইসলামাবাদ তালিবানের সঙ্গে কী চুক্তি করবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তারা অতি সক্রিয়।

ফাইল চিত্র

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫৭
Share
Save

আফগানিস্তানে তখ্‌তের দখল নিয়েছে তালিবান। রাস্তা-ঘাট, বাজার-দোকান থেকে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ— এখন সর্বত্র বন্দুক হাতে সামনে তারা। কিন্তু পিছন থেকে অনেকাংশেই কলকাঠি নাড়ছে পাকিস্তান। এই দ্রুত পট পরিবর্তনের পরে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় এক ঝটকায় অনেকখানি শক্তিশালী হয়ে গেল ইসলামাবাদের হাত। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, পাক সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সরাসরি মদতপ্রাপ্ত পাক-তালিবান গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ পোক্ত হয়ে উঠবে আফগানিস্তানে।

ইসলামাবাদের এই সম্ভাব্য বাড়বাড়ন্তে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন দিল্লি। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে এই সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আফগান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, সেখানে আটকে থাকা ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনাই অগ্রাধিকার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল প্রমুখ। বৈঠকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রুদ্রেন্দ্র টন্ডন। তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের মুখে যাঁকে সদ্য দেশে ফিরিয়ে এনেছে বিদেশ মন্ত্রক।

এ দিন আমেরিকার বিদেশ সচিবের সঙ্গে কাবুলের পতন নিয়ে ফোনেও কথা বলেছেন জয়শঙ্কর। আফগান মুলুকে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা কৌশল তৈরি নিয়ে সক্রিয়তা চরমে। সূত্রের বক্তব্য, তালিবানদের অস্ত্রঝঙ্কারের পিছনে যে প্রধান ইন্ধন, সেই ইসলামাবাদের গুরুত্ব বৃদ্ধিই প্রধান উদ্বেগ নয়াদিল্লির।

কোন ছবি উঠে আসছে নিরাপত্তা বিষয়ক কর্তা ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কথাবার্তায়?

তাঁরা মনে করছেন, তালিবান নেতৃত্ব যে কাঠামোতেই আফগানিস্তানে সরকার গড়ুক বা দেশের নাম বদলে দিক, পাকিস্তানের উপরে তাদের নির্ভরতা অদূর ভবিষ্যতে বাড়বেই। আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার জন্য ইসলামাবাদকে কাজে লাগানো ইতিমধ্যে শুরুও করে দিয়েছে তারা। বাণিজ্য (বিশেষত জরুরি পণ্য আমদানি), পণ্য চলাচল সমেত বিভিন্ন কাজে উন্মুক্ত পাক সীমান্ত ও ওই প্রতিবেশী দেশের বন্দর শহরগুলি তাদের কাছে অত্যন্ত জরুরি। তালিবান জানে, তারা ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক শক্তি প্রয়োগে। তারা কূটনীতিতে অচ্ছুত। তাই তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রতি পদে দরকার হবে পাকিস্তানের মতো একটি দেশকে। ভৌগলিক অবস্থানের প্রশ্নে যার গুরুত্ব আফগানিস্তানের কাছে সব থেকে বেশি। যারা বন্ধুভাবাপন্ন অথচ যেখানে এখনও ভোটে জিতে আসা সরকার রয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা চিনের সঙ্গে যে দেশের সম্পর্ক মধুর।

অন্য দিকে, ইসলামাবাদ তালিবানের সঙ্গে কী চুক্তি করবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিতে তারা অতি সক্রিয়। এর নিদর্শন ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, এরই মধ্যে আফগানিস্তানের ‘শৃঙ্খলমুক্তির’ তত্ত্ব সামনে এনে তালিবান কর্তৃত্বকে দ্রুত রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। কারণ তাতে তাদের বহুমুখী লাভ। প্রথমত, আফগানিস্তানে প্রবল নৈরাজ্যের মধ্যে পাক-তালিবান গোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে পোক্ত করা যাবে। নিজেদের ঘরোয়া সন্ত্রাস দমনে (ফাটা এলাকা) যা কার্যকরী। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের উপরে সন্ত্রাসের চাপ বাড়ানোর কাজও অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।

চিন ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে তালিবানের কাছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, চিন-তালিবান সেতুবন্ধনের কাজটি করছে পাকিস্তান। এর পরে নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও তালিবান সহযোগিতা দাবি করবে ধরে নিয়ে রাশিয়াও ওই যুদ্ধবাজদের সঙ্গে কাজ করতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপূঞ্জের নিরাপত্তা পরিষেদর পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (পি-৫) মধ্যে দুই দেশ (চিন ও রাশিয়া) ইতিমধ্যেই পাকিস্তানকে মাঝে রেখে তালিবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা ভারতের।

রাষ্ট্রপূঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে চলতি মাসে ভারতই সভাপতিত্ব করছে। গতকাল রাতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত ভাবে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছেন ভারতের প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্তি। কিন্তু ভারত জানে যে, পি-৫ গোষ্ঠীর দু’টি দেশ যদি তালিবানের পাশে দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসা সময়ের অপেক্ষা। সেই সূত্রে পাকিস্তানের হাত আরও শক্ত হওয়াও তা-ই।

সূত্রের খবর, আজ মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, পাকিস্তান তালিবান-তাস খেলে নিজেদের দর কষাকষির জায়গা ভূ-কূটনীতিতে অনেকটাই বাড়িয়ে নেবে। তার মোকাবিলায় ভারত কী ভাবে এগোবে, সেই কৌশল তৈরিই এখন সাউথ ব্লকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করার পরে যে আফগান-প্রশ্নে ফের পাকিস্তানের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারছে না ভারত। আফগানিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের যে গভীর জাল ছড়ানো রয়েছে, তা ‘কেনার’ চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন। তারা ঘরোয়া রাজনৈতিক কারণে এখন অন্তত এটুকু নিশ্চিত করতে চাইবে যে, তালিবানি সন্ত্রাসের ঢেউ যেন কোনও ভাবে আমেরিকার বুকে আছড়ে না পড়ে। আর এই আশ্বাসের বিনিময়ে চড়া দাম নেবে ইসলামাবাদ। এটি অবশ্য তারা আমেরিকার কাছ থেকে ধারাবাহিক ভাবে নিয়ে এসেছে গত দেড় দশক। তা সে ইসলামাবাদের উপর থেকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ওঠানোই হোক বা এফএটিএফের নজরদারি থেকে মুক্তি।

আফগানিস্তানের দূতদের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তান বরাবরই ভারতকে দূরে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছে। এ বার মঞ্চে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে চিনও। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আর দেরি না করে মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী সমমনস্ক রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে জোট তৈরির চেষ্টা অবিলম্বে শুরু করে দেওয়া উচিত দিল্লির।

ISI Pakistan taliban Afghanistan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।